সন্ত্রাসের সিঁদুরে মেঘ
৫ এপ্রিল ২০১৮মন্তব্যটা নিয়ে এখন লোকে হাসাহাসিই করছে, কিন্তু বিষয়টা আদৌ হেসে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়৷ বীরভূমের বিতর্কিত তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রত মন্ডল পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীদের উদ্দেশে রসিকতার ছলে হুমকি দিয়েছেন — আপনারা মনোনয়ন জমা দিয়ে বাইরে এলেই দেখবেন রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে আছে!
অনুব্রত-কথিত এই উন্নয়ন আদৌ নিরীহ নয়, বরং রীতিমতো যুদ্ধসাজে৷ তার হাতে লাঠি, তলোয়ার, বোমা, বন্দুক৷ এই উন্নয়নের হাতেই বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীরা বেধড়ক মার খেয়েছে, খাচ্ছে গোটা রাজ্য জুড়ে৷ উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জ, কুচবিহার, মুর্শিদাবাদ থেকে এই রাজনৈতিক সন্ত্রাসের খবর আসছে৷ অনুব্রতর জেলা বীরভূমে এক বিজেপি নেতা ছুরি খেয়েছেন৷ তিনি জেলাশাসকের দপ্তরে দলীয় কর্মীদের নিরাপত্তার অভাব নিয়ে অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন৷ এবং পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থিরা যেহেতু এখন নেহাতই শক্তিহীন এবং জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন, লড়াইটা এখন তৃণমূল আর বিজেপির মধ্যে সরাসরি হচ্ছে৷ অভিযোগ বেশি শাসকদল তৃণমূলেরই দিকে৷ বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভাপতি দিলীপ ঘোষ ডয়চে ভেলেকে জানালেন, পুলিশের সামনেই তাঁদের কর্মীরা তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের হাতে বেধড়ক মার খাচ্ছেন৷ তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল আসলে পঞ্চায়েতকে বিরোধীশূন্য করতে চায়৷ কারণ আর্থিক অনুদান বেশি আসে পঞ্চায়েতেই৷ সেটা যাতে নিজেরা লুটে খেতে পারে, তাই নির্বাচনের আগেই এই সন্ত্রাস৷ যে কারণে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে গিয়ে অভিযোগ জানিয়ে এসেছে বিজেপি এবং দলের প্রার্থীদের নিরাপত্তার দাবিতে এবার তারা সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে৷ সেখানে বিজেপি কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারায় ভোট করার আর্জিও জানাবে৷
যদিও রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার ঘোরতর বিরোধী শুরু থেকেই৷ এ ব্যাপারে রাজ্যের নির্বাচন কমিশন রীতিমত সন্ত্রস্ত, যে রাজ্য পুলিশের ভরসায় থাকলে কিছুতেই শান্তিপূর্ণ ভোট হবে না৷ খোদ রাজ্যপাল এ ব্যাপারে নিজের উদ্বেগের কথা রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে ডেকে জানিয়েছেন৷ কিন্তু সমস্যা হলো, রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সন্ত্রাস, সংঘর্ষের কথা মানতেই চাইছে না৷ বরং এই দাবি সরকার সমর্থন করছে তথ্য দিয়ে৷ বলছে, বিরোধী প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারছে না বলে যে অভিযোগ, তা ভিত্তিহীন৷ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রথম দু'দিনে গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৬১৪টি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা৷ আর বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা পড়েছে ১৬৯২টি৷ রাজ্য সচিবালয়ে বুধবার এই হিসেব দিয়ে রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা জানিয়েছেন, বিরোধী প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলায় জেলায় বাড়তি পুলিশ পাঠানো হয়েছে৷ গত চারদিনে হাঙ্গামায় জড়িত ১০৪১ জনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, মামলা হয়েছে ৮১৪ জনের বিরুদ্ধে৷ লাগোয়া বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে দুষ্কৃতিরা যাতে রাজ্যে ঢুকতে না পারে, তার জন্যও ব্যাপক তল্লাসি চলছে৷ কাজেই রাজ্য পুলিশই পশ্চিমবঙ্গে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে৷
সমস্যা হলো, বিরোধীরা তো বটেই, নির্বাচন কমিশনও অতটা ভরসা রাখতে পারছে না৷