1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পহেলা বৈশাখে মোটর বাইকে শুধুই স্বামী-স্ত্রী?

১৩ এপ্রিল ২০১৯

পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ঐতিহ্যবাহী আয়োজন নিয়ে উগ্র ইসলামপন্থিরা বরাবরই নেতিবাচক মন্তব্য করছে৷ কিন্তু এবার বাংলা নববর্ষে স্বামী-স্ত্রী ছাড়া মটরবাইকে একসঙ্গে আরোহী হওয়ার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আলোচনায় এসেছে সিলেট মহানগর পুলিশ৷

https://p.dw.com/p/3GjCc
Ein Paar in Dhaka
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Abdullah

পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ঐতিহ্যবাহী আয়োজন নিয়ে উগ্র ইসলামপন্থিরা বরাবরই নেতিবাচক মন্তব্য করছে৷ কিন্তু এবার বাংলা নববর্ষে স্বামী-স্ত্রী ছাড়া মটরবাইকে একসঙ্গে আরোহী হওয়ার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আলোচনায় এসেছে সিলেট মহানগর পুলিশ৷

এদিকে, বিকাল ৫টার মধ্যে পহেলা বৈশাখের সব আয়োজন শেষ করতে বলা, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে মুখোশপরাসহ নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে প্রশাসন৷ আর এত নিষেধাজ্ঞার কারনে পহেলা বৈশাখের সার্বজনীন উদযাপনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে৷   

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ১৩ দফা নির্দেশনা জারী করেছে৷ এরমধ্যে অন্যতম হলো, পহেলা বৈশাখের দিন স্বামী-স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ একসঙ্গে মটরবাইকে আরোহণ করতে পারবে না৷

নয় নম্বর নির্দেশনায় সিলেট পুলিশ বলছে, ‘‘মোটরসাইকেলে চালক ব্যতিত অন্য কোন আরোহী বহন করা যাবে না৷ তবে স্বামী-স্ত্রী চলাচল করতে পারবেন৷ একযোগে বা দলগতভাবে মোটরসাইকেল চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি বা যান চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না৷''

এদিকে, হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘পহেলা বৈশাখ উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে মঙ্গল শোভাযাত্রার যে আয়োজন করা হয় তা ইসলামী শরিয়ত সমর্থন করে না৷ কোন ঈমানদার মুসলমান মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারে না৷''

‘আমরা এগুলোকে গুরুত্ব দেইনা’

তিনি আরো বলেন, ‘‘মানুষের জীবনের কল্যাণ ও মঙ্গল-অমঙ্গল সবকিছুই আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তাআলার হুকুমে হয়৷ পৃথিবীর সব বিশ্বাসী এটাই বিশ্বাস করেন৷ কোন মূর্তি, ভাস্কর্য, পোস্টার, ফেস্টুন ও মুখোশে মঙ্গল-অমঙ্গল থাকতে পারে না৷ বাঘ, কুমির, বানর, পেঁচা, কাকাতুয়া, ময়ূর, দোয়েলসহ বিভিন্ন পশুপাখি মঙ্গল আনতে পারে না৷ এসব বিশ্বাস যেমন ইসলামি শরীয়তবিরোধী চেতনা, তেমনি বর্তমান আধুনিক সময়ে মূর্তি-ভাস্কর্য ও জীবজন্তুর ছবি নিয়ে মঙ্গল-অমঙ্গল কামনা করা একটি কুসংস্কারচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণ৷''

এর আগে ওলামা লীগ ২০১৬ সালে ঢাকায় এক মানববন্ধন ও সমাবেশে বলেছিল, ‘‘পহেলা বৈশাখে উৎসব উদযাপন ইসলাম বিরোধী৷'' সংগঠনের নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ‘‘পহেলা বৈশাখের নামে দেশে কোন বেহায়াপনা সহ্য করা হবে না''

তারা আরও বলেন, ‘‘ইসলামে পহেলা বৈশাখ ও পহেলা জানুয়ারি তারিখে নববর্ষ পালন জায়েজ নয়৷''  তাই রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের দেশে হারাম দিবস পালনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ করার আহবান জানান তারা৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন এবং পহেলা বৈশাখ মঙ্গল শোভাযাত্রার সদস্য সচিব অধ্যাপক নিসার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওরা মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে যত বলে আমাদের আগ্রহ তত বেড়ে যায়৷ আমাদের কাছে মনে হয় আমরা ভালো কিছু একটা করছি৷ কারণ তারা ধর্মনিরপেক্ষ, মানবিক এবং বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে৷''

‘এটি নাগরিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যায়’

তিনি বলেন, ‘‘তারাতো ধার্মিক নয়, ধর্ম ব্যবসায়ী৷ ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে৷ উদার ও মানবিক সংস্কৃতির যত বিকাশ হবে তারা ততই হারিয়ে যাবে৷ তাই তারা পহেলা বৈশাখ, মঙ্গল শোভাযাত্রা এগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলে৷ তবে আমরা এগুলোকে গুরুত্ব দেইনা৷''

এদিকে, এ বছর বিকেল ৫টার মধ্যে পহেলা বৈশাখের সব আয়োজন শেষ করতে বলেছে পুলিশ৷ অনুষ্ঠান আয়োজন বিষয়ে গত কয়েক বছর ধরেই এ ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছে প্রশাসন৷ পাশাপাশি পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় বা কেনো অনুষ্ঠানে মুখোশ ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষ যেন উৎসবের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে পারে সেজন্য সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে৷''

অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘‘আমাদের কাছে পুলিশের একটি সাধারণ নির্দেশনা আছে৷ আমরা সেটা মেনেই নববর্ষের আয়োজন করি৷ কিন্তু সিলেটের পুলিশ আলাদাভাবে যে নির্দেশনা দিয়েছে সেটাকে কোনো পুলিশ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ইচ্ছার প্রতিফলন বলেই মনে হয়েছে৷ এটা সরকারকে সমালোচনার মুখে ফেলবে৷ আর সিলেটের মানুষ চাইলে এর প্রতিবাদ করতে পারেন৷ আইনগত ব্যবস্থাও নিতে পারেন পুলিশের এই আদেশের বিরুদ্ধে৷''

’পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে’

মানবাধিকার কর্মী এবং আইন সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পারিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিলেট মহানগর পুলিশ যে নির্দেশনা দিয়েছে তাতে উগ্রবাদ উৎসাহিত হবে৷ তাদের এই নির্দেশনার কারণে এক ধরনের আশঙ্কা তৈর হবে যা উগ্রবাদের জন্য সহায়ক৷ স্বামী-স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নববর্ষে একই মোটর বাইকে আরোহী হতে পারবেনা - এটা রাষ্ট্রীয় আইন বিরোধী৷ অনেক সময় পুলিশ ‘পাবলিক নুইসেন্স' কমানোর জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়ে থাকে৷ কিন্তু এই নির্দেশনাকে সেভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই৷ এটি নাগরিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যায়৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘পহেলা বৈশাখসহ বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম ও আরো কিছু সংগঠন শুধু এবার নয়, দীর্ঘদিন ধরেই বিষোদগার করে আসছে৷ আর দেখে শুনে মনে হয়ে তারা সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে৷ তাদের আসলে এখন থামানোর সময় এসেছে৷ তাদের এই বিষোদগার চলতে দিলে দেশের সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা আছে৷''

তবে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জেদান আল মুসা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা পহেলা বৈশাখে স্বামী-স্ত্রী ছাড়া একাধিক ব্যক্তিকে একই মটরবাইকে আরোহী হতে নিরুৎসাহিত করেছি৷ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিনি৷ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতেই এটা করা হয়েছে৷ কারণ, অতীতে দেখা গেছে ২০-২৫ জন মিলে মটরবাইকে চড়ে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে৷ মোটরসাইকেলে থাকা পিছনের আরোহী অনেক সময় ছিনতাই করে৷ এগুলো প্রতিরোধই আমাদের উদ্দেশ্য৷ অন্যকোনো উদ্দেশ্য নেই৷''