নিহতদের পরিবারে আছে শুধুই কান্না, হতাশা
২৮ এপ্রিল ২০১৬গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধায়, যিনি নিলয় নীল নামে পরিচিত ছিলেন, তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল ঢাকায় নিজ বাসায় ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট৷
নীলাদ্রির গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে৷ বাবা-মা নিলয় হত্যাকাণ্ডের পর এখন অনেকটা বেঁচে না থাকার মতো বেঁচে আছেন৷ তেমন কথা বলেন না তাঁরা৷ এখনো বিলাপ করেন৷ কথা হয় নিলয়ের ছোট কাকা নির্মল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে৷
নির্মল চট্টোপাধায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘আমিই নিলয়কে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলাম৷ আবার পাঁচ বছর পর আমিই ওর লাশ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসি৷ এই কষ্ট আমাকে সবচেয়ে বেশি তাড়া করে৷''
ঢাকায় ডিবি তদন্ত করছে মামলাটির৷ কিন্তু নিলয়ের পরিবারের সদস্যরা পিরোজপুরে থাকায় মামলার অগ্রগতির খোঁজ-খবর পাওয়া তাঁদের পক্ষে কঠিন৷ তবুও নির্মল চট্টোপাধায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্তি পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলামের সঙ্গে৷
নির্মল বলেন, ‘‘শুধু আশ্বাস আর আশার কথাই শোনায় আমাদের৷ কিন্তু কোনো অগগ্রতির খবর জানায় না৷ একবার পাঁচজনকে আটকের কথা বলেছিল৷ বলেছিল তারা জড়িত, কিন্তু এরপর আর কোনো খবর নাই৷ তারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত কিনা – তা নিশ্চিত হওয়ার কোনো তথ্য আমাদের জানানো হয়নি৷ আমরা যোগাযোগ না করলে তারা যোগাযোগই করেন না৷''
নির্মল চট্টোপাধায় স্থনীয় আওয়ামী লীগের নেতা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি আওয়ামী লীগের লোক হয়ে বলছি, যদি নিলয় বা অন্য ব্লগার হত্যার বিচার হতো তাহলে ঢাকার কলাবাগানে জোড়া খুনসহ আর কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটত না৷ আমি জেলা গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও যাই৷ তারা বলে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই৷ দেখেন কী হয়৷ আমার প্রশ্ন, আমাদের বিচার পেতে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে? আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই৷''
নিলয় নীল হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আশামনি-ই বাদি৷ হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি বাসায় ছিলেন৷ জীবন ভয়ে তিনিও এখন অনেকটা গোপন জীবনযাপন করছেন৷ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করা কঠিন৷ তবে পাঁচমাস আগে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‘যে পাঁচজনকে ডিবি ধরেছে তাদের সামনে আমাকে নিয়েছিল৷ তাদের কাউকেই আমি চিনতে পারিনি৷ আমি মামলার তদন্ত নিয়ে হতাশ৷''
২০১৫ সালের ১২ মে সিলেটে বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে উগ্রবাদীদের হামলায় নিহত হন আরেক মুক্তমনা ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস৷ তিনিও গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ তাঁর বাবা এখন শয্যাশায়ী৷ মা অসুস্থ৷ শুরু থেকেই এই মামলার খোঁজ-খবর রাখছিলেন অনন্তের দুলাভাই অ্যাডভোকেট শেখর দাস৷ তিনি এই মামলার বাদিও৷
শেখর দাস ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘শুরুতে পুলিশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত৷ কিন্তু এখন আর করে না৷ আমরা জানি না এই মামলার তদন্ত নিয়ে কী হচ্ছে৷ অগ্রগতিও জানা নেই৷ তাদের কোনো নড়াচড়া নাই৷ একজন ফটো সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের খবর আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখেছি, এই পর্যন্তই৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘কী হচ্ছে, আসল না নকলকে ধরা হচ্ছে, তাও জানি না৷ আমরা মামলার খোঁজ নেয়ার আগ্রহ পাচ্ছি না৷ তাদেরও আগ্রহ নেই৷''
শেখর দাস ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েও তেমন আগ্রহ দেখাননি৷ মনে হয়েছে বিষয়টি নিয়ে তিনি চরম হতাশ৷
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী আহমেদ রাজীব হায়দারকে তাঁর পল্লবীর বাসার অদূরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ এই মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগ-পত্র দিতে পেরেছে পুলিশ৷ মামলার রায় হয়েছে এবং দু'জনকে মৃত্যুদণ্ডও দিয়েছে আদালত৷ কিন্তু এরপর আর কোনো হত্যাকাণ্ডের কুলকিনারা হয়নি৷
ঢাকা মাহনগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘‘জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় সারা দেশে ২১টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ ব্লগার, প্রকাশক হত্যায় সারা দেশে এ পর্যন্ত ২১টি মামলা হয়েছে৷ এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে হয়েছে মোট ১১টি মামলা৷ তাঁর দাবি, ‘‘১৬টি মামলার ‘ডিটেকশন' হয়েছে৷ এই মামলাগুলোর পাঁচটির চার্জশিট দেওয়া হয়েছে৷''
তিনি অরো জানান, ‘‘লেখক এবং ব্লগার অভিজিৎ রায় এবং প্রকাশক দীপন হত্যায় জড়িত অনেকেই দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে৷''
কেন এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডগুলোর কোনো কুলকিনারা হচ্ছে না? আপনার কী মনে হয়, জানান নীচের ঘরে৷