1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্নীতিভারত

নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত আরো দুই নারী?

৯ মার্চ ২০২৩

নিয়োগ দুর্নীতিতে উঠে এসেছে দুই নারীর নাম।হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায় ও সোমা চক্রবর্তী। তাদের নিয়ে হইচই তুঙ্গে।

https://p.dw.com/p/4OQqi
ছবি: Subrata Goswami/DW

কোটি কোটি টাকার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় সংস্থা গ্রেপ্তার করে তৃণমূলের যুব নেতা কুন্তল ঘোষকে। হঠাৎই একদিন তিনি হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম করেন। তাকে 'রহস্যময়ী' তকমা দেন।

এই দুর্নীতিমামলায় সন্দেহের ঘেরাটোপে আছেন গোপাল দলপতি, তার দ্বিতীয় স্ত্রী হৈমন্তী। যদিও বছরখানেক আগে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের হয়েছে বলে হৈমন্তী জানিয়েছেন। তিনি পেশায় মডেল, অভিনেত্রী। কুন্তলের মুখে তার নাম শোনার পর মিডিয়া হৈমন্তীর বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে। তারা জানান, কন্যার সঙ্গে সম্পর্ক নেই।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতার বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা পাওয়া গেছে। অর্পিতা এখনো জেলে। অর্পিতার পর  এখন এই দুই নারীকে নিয়ে প্রচুর হইচই হচ্ছে। যত তদন্ত এগোচ্ছে, তত একটা বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে, নিয়োগ দুর্নীতির শিকড় অনেক গভীরে। প্রচুর মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত। তারা চাকরি দেয়ার নামে কোটি কোটি টাকা তুলেছে।

‘অবৈধ টাকা হলে শুধু জানি না বলে রেহাই পাওয়া যাবে না’

বেশ কয়েকদিন হৈমন্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি সংবাদমাধ্যম। এরই মধ্যে নানা তথ্য প্রকাশ পেতে থাকে। গোপালের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে 'নমিনি' হিসেবে রয়েছেন হৈমন্তী। একাধিক জমি ও বাড়ির মালিকানা রয়েছে মডেলের নামে। গোপালের তৈরি করা কয়েকটি সংস্থার ডিরেক্টর পদেও তিনি রয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।

মিডিয়ার সামনে উপস্থিত হয়ে হৈমন্তী নিজেকে ‘নির্দোষ' দাবি করেছেন। তার বক্তব্য, "নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়ে আমি কিছু জানি না। গোপালের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিইনি। আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে।"

যে কুন্তল হৈমন্তীর নাম তুলে হইচই ফেলেছেন, তিনিই আবার ব্যাকফুটে সোমা চক্রবর্তীর ক্ষেত্রে। পার্লার মালকিন সোমাকে দফায় দফায় ৫০ লাখ টাকা দেন কুন্তল। সল্টলেকের অভিজাত মলে তার নেল লাউঞ্জ রয়েছে। তদন্তে এই সংক্রান্ত তথ্য উঠে আসার পর ইডি সোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ফের শুক্রবার তাকে নথিপত্র নিয়ে যেতে হবে ইডি কার্যালয়ে। 

সোমা স্বীকার করেছেন, তিনি টাকা নিয়েছেন। তার বক্তব্য, "কুন্তলের সঙ্গে এক বন্ধু মারফত আলাপ হয়। ব্যবসার জন্য আমার টাকার দরকার ছিল। কুন্তল টাকা দিতে রাজি হন।" তবে কুন্তলের সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতির যোগ আছে তা সোমা জানতেন না বলে দাবি করেছেন। কুন্তলকে সোমার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে গিয়েছেন।

তথাকথিত এই 'রহস্যময়ী'দের সঙ্গে দুর্নীতির মাস্টার প্ল্যানের যোগ কতটা আছে? কুন্তল বা গোপালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বা পরিচয়ের সূত্রে এই নারীরা তাদের কাছ থেকে কতটা 'সুবিধা' পেয়েছে? টাকার বিনিময়ে চাকরি দেয়ার চক্রে কি এরা যুক্ত, এই প্রশ্ন উঠছে।

গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির রাজ্য সম্পাদক রঞ্জিত শূর ডয়চে ভেলেকে বলেন, "একজন অভিযুক্ত কি না সেটা বোঝার আগেই তাকে কার্যত দোষী সাব্যস্ত করে দেয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন। হৈমন্তীর ক্ষেত্রে এটা কিন্তু হচ্ছে।"যদিও সোমার বিষয়ে সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, "৫০ লাখ মানে বিপুল টাকা। ব্যবসার জন্য টাকা ঠিকঠাক চুক্তি মেনে নেয়া হয়েছে কি না দেখতে হবে। শুধু জানি না বলে রেহাই পাওয়া যাবে না। বিশেষত এটা যদি অবৈধভাবে তোলা টাকা হয়।"

আজ টলিউড অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত ইডি কার্যালয়ে হাজির হন। কুন্তলের সঙ্গে তার আর্থিক লেনদেনের সূত্র মিলেছে বলে খবর।

এই প্রশ্নও উঠছে যে, এই নিয়োগ দুর্নীতির ভবিষ্যৎ কি? অনেকের নামই তো এখানে উঠছে। অনেক তথ্য সামনে আসছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই দুর্নীতির কারিগররা ধরা পড়বে, নাকি  সবকিছু ধামাচাপা পড়ে যাবে? শুভাশিসের বক্তব্য, "হাওয়ালা থেকে সারদা মামলার নিষ্পত্তি আজও হল না। কত বড় নেতার নাম উঠে এসেছিল। কিছুদিন পর সব ধামাচাপা পড়ে যায়।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷