নুসরাতের পুরো পরিবারকে পুড়িয়ে মারার হুমকি
২৪ অক্টোবর ২০১৯রায় ঘোষণার পর আসামিরা আদালতের ভেতেরই এই হুমকি দেন বলে নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান দাবি করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আদালতের মধ্যেই আসামিরা আমাদের সবাইকে নুসরাতের মত পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দেয়৷ তারা বলে আমাদের পরিণতিও নুসরাতের মত হবে৷''
ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ বৃহস্পতিবার ১৬ আসামীর সবার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন৷ এসময় সব আসামী আদালতের কাঠগড়ায় ছিলেন৷
নুসরাতের বড় ভাই ও মামলার বাদি মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘‘আমরা আগেও হুমকি পেয়েছি, এবার আদালতে বসে তারা হুমকি দিল৷ আমরা আতঙ্কে আছি৷ আমাদের পরিবারের সব সদস্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি৷ কারণ তারা প্রভাবশালী এবং তাদের অনেক অনুসারী এবং আত্মীয়-স্বজন আছে৷''
আদালতের ভেতরে হত্যার হুমকি পাওয়ার বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ''আমাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে৷ কারণ আসামিদের ফাঁসির রায় হলেও তাদের লোকজনতো বাইরে আছে৷''
আসামিদের আইনজীবী আহসান কবির বেঙ্গল বলেন, ‘‘ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হয়তো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, আমি তাদের হুমকি দিতে দেখিনি৷''
আইন মেনে এই মামলার রায় দেয়া হয়নি অভিযোগ তুলে এই আইনজীবী বলেন, ‘‘এই মামলায় কোনো প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নেই৷ এটা হত্যা না আত্মহত্যা তাও পরিস্কার নয়৷ আমরা সাত দিনের মধ্যে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব৷''
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, হাইকোর্টে এই মামলার ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হবে৷ হাইকোর্টের রায়ের ওপরই পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করবে৷ সাত দিনের মধ্যে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠাতে হবে৷
এ মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ের প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘‘এই মামলায় কোনো প্রাথমিক ক্লু ও প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না, ফলে খুব সতর্কতার সাথে কাজ করতে হয়েছে৷ কিন্তু মৃত্যুর আগে নুসরাতের একপি ভিডিও স্টেটমেন্ট আমাদের তদন্তে পথ দেখায়৷ ওখান থেকেই আমরা অনেক কিছু পেয়ে যাই৷ তারপর অপরাধীদের চিহ্নিত করি৷ তারপর আর তদন্তে বেগ পেতে হয়নি৷ আমার তদন্ত দল মানবিকতায় উদ্বুদ্ধ ছিল৷''
‘‘আদালতে আমরা বাংলাদেশে প্রথমবারের মত পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে নুসরাত হত্যার ঘটনাটি উপস্থাপন করি৷ এজন্য বিশেষ অনুমতি নিতে হয়েছে৷ আমরা আমাদের তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ওই পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি করি৷''
এই মামলায় ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন বলেও জানান তিনি৷
সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন নুসরাত৷ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি৷ ওই ঘটনায় নুসরাতের মা মামলা করার পর গত ২৭ মার্চ গ্রেপ্তার হন অধ্যক্ষ সিরাজ৷
সিরাজ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার পক্ষে নামেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা৷ তার মুক্তি দাবিতে মানববন্ধনও করেন মাদ্রাসার কিছু শিক্ষার্থী৷ মামলা তুলে নিতে ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে নুসরাতের পরিবারের অভিযোগ৷
এর মধ্যেই ৬ এপ্রিল পরীক্ষা শুরুর আগে পরীক্ষা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নুসরাতকে কৌশলে ডেকে নিয়ে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়৷ অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে ঢাকায় এনে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হলেও টানা পাঁচ দিন যন্ত্রণা সহ্য করে ১০ এপ্রিল মারা যান তিনি৷
নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার দুদিন পর তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন৷ নুসরাতের মৃত্যুর পর এটি হত্যা মামলায় পরিণত হয়৷