নেত্রী বলেছেন তাই আসলেন জয়নাল হাজারি
৩০ অক্টোবর ২০১৯এই প্রশ্নের জবাবে জয়নাল হাজারী নিজেই দিয়েছেন ডয়চে ভেলেকে । তিনি বলেছেন,‘‘আমার এখন আওয়ামী রাজনীতিতে কিছু দেয়ার নেই। কোনো কর্মসূচি নেই। কোনো পরিকল্পনা নেই। শুধু মাত্র নেত্রী(শেখ হাসিনা) যে আদেশ দেবেন সেটা পালন করব। এর বাইরে কিছু করার নেই।''
জয়নাল হাজারী ফেনী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সংসদ সদস্য ছিলেন তিন বার। ২০০১ সালের ১৬ আগস্ট তদারক সরকারের সময় ফেনীর মাস্টার পাড়ায় তার বাড়িতে অভিযান হয়। তখন তিনি গ্রেপ্তার এড়িয়ে ভারতে পালিয়ে যান। ২০০৪ সালে তিনি আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়ই আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশে ফিরে আসেন।এরপর আদালতে আত্মসমর্পণের পর কিছুদিন কারাগারে থেকে জামিনে ছাড়া পান। কিন্তু তিনি আর রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হননি।
তিনি নিজেই জানিয়েছেন এখন তিনি আর ফেনী যান না। ঢাকায়ই থাকেন। তারপরও কেন আবার উপদেষ্টার পদ নিলেন? জয়নাল হাজারী বলেন,‘‘আমি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য কারুর কাছে বলিনি বা ইচ্ছাও প্রকাশ করিনি। নেত্রী বলেছিলেন এখন চুপচাপ থাকো। এতদিন চুপচাপ ছিলাম। নেত্রী বলেছেন এখন আবার আসেন। আবার এসে গেলাম।''
উপদেষ্টার দায়িত্ব কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘‘এমনিতে উপদেষ্টার দায়িত্ব উপদেশ দেয়া। কিন্তু এই উপদেশ কে শোনে! এটা একটি অলঙ্কারিক পদ। কোনো দায় দায়িত্ব নেই। যারা নির্যাতিত, যারা মুক্তিযোদ্ধা যাদের অবদান আছে তাদের এই পদ দেয়া দিয়ে সম্মানিত করা হয়। আমাকেও নেত্রী দিয়েছেন।''
হাজারীর বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দল এমন কি নিজ দলের নেতা কর্মীদেরও নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আছে। তার এই নির্যাতন ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খবর পরিবেশন করতে গিয়ে সাংবাদিকেরাও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেককে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সর্বশেষ সংসদ সদস্য থাকাকালে তিনি ও তার বাহিনীর নির্যাতনের কথা সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রকাশ হয়। তিনি আওয়ামী লীগের বাইরে ‘স্টিয়ারিং কমিটি' নামে একটি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলে সন্ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ। তবে হাজারীর দাবী,‘‘স্টিয়ারিং কমিটি মানুষের জন্য কাজ করেছে। তারা ভালো কাজ করেছে। আমার প্রধান শত্রু জামায়াত-শিবির। তাদের সঙ্গে লড়াই করে আমাকে বাঁচতে হয়েছে। তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছে। এর বাইরে আমার আর কিছু জানা নেই। যারা আমাকে বিতর্কিত বলে তারাই বলতে পারবে কেন বলে।'‘
জয়নাল হাজারী মনে করেন, ফেনীর সব কিছু এখন নষ্ট হয়ে গেছে। খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু তার এখন আর তেমন কোনো শক্তি নেই যে তিনি ফেনী ফিরে গিয়ে সব কিছু ঠিক করে ফেলবেন। তিনি ফেনীতে ফিরে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো নেননি। তবে যদি শেখ হাসিনা বলেন তাহলে তিনি ফিরে যাবেন, সক্রিয় হবেন। এমনকি তিনি চাইলে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনও করবেন।
নির্বাচন করলে আপনি কী ভোট পাবেন? আপনার কি জনপ্রিয়তা আছে? জবাবে হাজারী বলেন,‘‘না আমার এখন কোনো জনপ্রিয়তা বলতে কিছু নেই। আমার জনপ্রিয়তা শূণ্যের কোঠায় চলে গেছে। আমার মনে হয় আমি একটি ভোটও পাবনা। আমার শরীরের অবস্থাও ভালো না যে আবার মাঠে নামব।'‘
তারপও যদি মনোনয়ন পান, তাহলে কী হবে? হাজারী বলেন,‘‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে জনপ্রিয়তা লাগবে না। আওয়ামী লীগের লোকেরাই ভোট দিয়ে দেবে।'‘
এব সময়ে ফেনীর গডফাদার বলে পরিচিত জয়নাল হাজারী তবে এখন নিজের সিদ্ধান্তে কিছুই করবেন না। তারা কথা,‘‘নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।''