এক ধনাঢ্যের ওপর নাখোশ তিনি
২৩ মার্চ ২০১৭ডানপন্থি ও পপুলিস্ট নেতা অর্বানের সরকার গত সপ্তাহে ‘ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটস’-এ একটি মামলায় হেরে যায়৷ হাঙ্গেরি সরকারের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিল ‘হাঙ্গেরিয়ান হেলসিংকি কমিটি’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন৷ তাদের অভিযোগ ছিল, হাঙ্গেরির সরকার অবৈধভাবে দুই বাংলাদেশিকে আটকে রেখে পরে বহিষ্কার করেছে৷
এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী অর্বান এক রেডিও সাক্ষাৎকারে এর জন্য সরাসরি জর্জ সরসকে দায়ী করেন৷ কারণ অভিযোগকারী ‘হেলসিংকি কমিটি’ সরসের দাতব্য সংস্থা ‘ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন’ বা ওএসএফ-এর কাছ থেকে তহবিল গ্রহণ করে৷ রেডিও সাক্ষাৎকারে অর্বান বলেন, ‘‘এটি (রায়) মানব পাচারকারী, ব্রাসেলসের কর্মকর্তা আর হাঙ্গেরিতে কাজ করা বিদেশি অর্থে পরিচালিত একটি সংস্থার কারসাজি৷'' তবে পরের কথায় সরাসরি সরসের নামই উল্লেখ করেন তিনি৷ ‘‘স্পষ্ট করে বললে জর্জ সরস এই তহবিল দিয়েছেন৷’’
কে এই সরস?
১৯৩০ সালে হাঙ্গেরিতে এক ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি৷ নকল নথিপত্রের সহায়তা নিয়ে জার্মানির নাৎসি সরকারের হাত থেকে রেহাই পেয়েছিল তাঁর পরিবার৷ এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেনে চলে যান তাঁরা৷ সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র৷ ফোর্বস বলছে, সরসের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ২৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার৷ ওএসএফ-এর ওয়েবসাইট বলছে, দাতব্য খাতে সরস এখন পর্যন্ত ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ করেছেন৷ একশটিরও বেশি দেশে কাজ করা ছোট এনজিও ও দাতব্য সংস্থাকে অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে ওএসএফ৷ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মুক্তচিন্তা, মানবাধিকার, আইনের শাসন নিয়ে কাজ করা এনজিওদের তহবিল দেয় সরসের প্রতিষ্ঠান৷
নাখোশ পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের দেশ
সরসের কাজে সন্তুষ্ট নয় হাঙ্গেরি সহ ম্যাসেডোনিয়া, রোমানিয়া ও পোল্যান্ডের সরকার৷ ম্যাসেডোনিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নিকোলা গ্রুয়েভস্কি তাঁর পরিণতির জন্য সরসকে দায়ী করেন৷ গত জানুয়ারিতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘সরস ম্যাসেডোনিয়ার এনজিওগুলোকে আধুনিক সামরিক বাহিনীতে পরিণত করেন৷ এই কাজ তিনি শুধু ম্যাসেডোনিয়ায় নয়, অন্যান্য দেশেও করছেন৷’’
রোমানিয়ার শাসক দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটের এক নেতা লিভিয়ু ড্রাগনি বলেন, সরসের ফাউন্ডেশন ১৯৯০ সাল থেকে রোমানিয়ার শত্রুদের অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে৷
তবে সরসের প্রতিষ্ঠান ওএসএফ-এর প্রেসিডেন্ট ক্রিস স্টোন রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আপনি গণতন্ত্র রপ্তানি করতে পারেন না৷ এটা শুধু আমদানি করা যায়, এবং তারপর স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে সেটাকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়৷’’
শরণার্থীদের সহায়তা
২০১৫ সালে ইউরোপে যখন শরণার্থীদের ঢল নেমেছিল সেই সময় এক বিবৃতিতে শরণার্থীদের কল্যাণে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছিল ওএসএফ৷ বিবৃতিতে শরণার্থীদের নিয়ে হাঙ্গেরির সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করা হয়েছিল৷ ‘‘হাঙ্গেরিতে যে সংকট দেখা দিয়েছে তা ইউরোপের মূল্যবোধ রক্ষায় ব়্যাডিক্যাল পপুলিস্ট সরকার থাকার বিপদের কথা মনে করিয়ে দেয়,’’ সেই সময় বিবৃতিতে বলেছিল ওএসএফ৷ উল্লেখ্য, শরণার্থীরা যেন ইউরোপে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য হাঙ্গেরি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করেছিল৷
বাংলাদেশি বহিষ্কারের ঘটনায় ইউরোপীয় কোর্টে হারার পর হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী অর্বান সরসের উপর নাখোশ হওয়ার পাশাপাশি একটি নতুন আইনের প্রস্তাব করেছেন৷ বিদেশি সহায়তা নিয়ে হাঙ্গেরিতে কাজ করা সব এনজিও-র নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি৷ পূর্ব ইউরোপের মধ্যে হাঙ্গেরিই প্রথম দেশ হিসেবে এনজিওদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার উদ্যোগ নিল৷
ঠিক এইরকম আইন বছর দুয়েক আগে রাশিয়াতে পাস হয়েছে৷ এছাড়া এনজিওদের বিরুদ্ধে পুটিন সরকারের নেয়া কঠোর পদক্ষেপের কারণে সেই সময় রাশিয়া থেকে সরসের প্রতিষ্ঠানকে বের হয়ে যেতে হয়েছিল৷
জেডএইচ/ডিজি (রয়টার্স)