পাকিস্তান-ন্যাটো
১৫ মে ২০১২
পাকিস্তানের সিদ্ধান্তের রূপরেখা
মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার প্রতিরক্ষা কমিটির রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মন্ত্রী ও সামরিক কর্মকর্তারাদের মধ্যে ন্যাটো’র সরবরাহের পথ আবার খুলে দেওয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ বুধবার গোটা মন্ত্রিসভা এবং সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ সরকার ও সামরিক বাহিনী একযোগে এই সিদ্ধান্ত নিলে বিষয়টি ততটা স্পর্শকাতর হবে না বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে কট্টর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলি সহজে এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না৷
আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর কাছে রসদ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে পাকিস্তানের গুরুত্ব
আফগানিস্তানে সক্রিয় ন্যাটো বাহিনীর জন্য রসদ, সামরিক ও অন্যান্য সরঞ্জামের প্রায় ২৫ শতাংশ পাঠানো হতো পাকিস্তানের মাধ্যমে, সড়কপথে৷ কিন্তু গত নভেম্বর মাসে ন্যাটো’র এক বিমান হামলায় ২৪ জন পাকিস্তানি সৈন্যের মৃত্যুর জের ধরে সেই পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ সন্ত্রাসবাদ দমনে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সহযোগিতাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল৷
এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট
প্রথমে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন’কে হত্যা, তারপর নভেম্বরে বিমান হামলায় পাকিস্তানি সেনাদের মৃত্যু – সেই সঙ্গে লাগাতার ড্রোন হামলা৷ এসবের ফলে অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে জনরোষ বেড়ে চলেছে৷ এই অবস্থায় সরকার ন্যাটো বাহিনীর সরবরাহের পথ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল৷ আগামী ২০ ও ২১শে মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে ন্যাটো’র শীর্ষ সম্মেলনের আগে পাকিস্তান তার অবস্থান বদলাচ্ছে৷ তার ফলও দেখা যাচ্ছে৷ ন্যাটো আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে৷ বুধবার মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হলে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি শিকাগোয় পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করবেন৷ সেক্ষেত্রে বর্তমানে প্রায় একঘরে হয়ে পড়া এই দেশ ন্যাটো-পরবর্তী আফগানিস্তান সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের উপর কিছুটা হলেও প্রভাব রাখার আশা করছে৷
অ্যামেরিকা তথা পশ্চিমা জগতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির প্রয়োজন
এমন এক সিদ্ধান্তের পেছনে নিজস্ব স্বার্থও কাজ করছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, নভেম্বরের হামলার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি অ্যামেরিকা৷ এখন অবশ্য সেই দাবি ছেড়ে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না – সেই আশ্বাস চাইছে ইসলামাবাদ৷ অন্যদিকে ওয়াশিংটন’কে চটিয়ে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন সাহায্যও পাওয়া কঠিন৷ এই অবস্থায় মুখরক্ষা করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার বলেছেন, ন্যাটো’কে কড়া বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল৷ সেই কাজ সফল হয়েছে৷ এবার ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে৷ মোটকথা দুপক্ষই এই সিদ্ধান্তের ফলে লাভবান হবে, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন (এএফপি, এপি, ডিপিএ)
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ