ন্যাটোয় সুইডেন-ফিনল্যান্ডের যোগদান মানলেন এর্দোয়ান
২৯ জুন ২০২২রীতিমতো চুক্তি সই করে ন্যাটোয় ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের অন্তর্ভুক্তি মেনে নিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান। মঙ্গলবার সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠক হয় এর্দোয়ানের। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ন্যাটোপ্রধান জেন স্টলটেনবার্গও। দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো প্রথম বিবৃতি প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের ন্যাটোয় যোগদানের রাস্তা খুলে গেছে। দীর্ঘ বৈঠকের পর তুরস্ক সবুজ সংকেত দিয়েছে।
এর কিছুক্ষণ পরেই তুরস্ক একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, তুরস্কের দাবিগুলি মেনে নেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তুরস্ক বিষয়টিকে তাদের জয় হিসেবে দেখছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড সিদ্ধান্ত নেয়, তারা ন্যাটোয় যোগ দেবে। ভৌগোলিক দিক থেকে ফিনল্যান্ডের অবস্থান রাশিয়ার সীমান্তে। সুইডেন রাশিয়ার সীমান্তে অবস্থিত না হলেও খুব দূরেও নয়। দুই দেশই জানিয়েছিল, যেভাবে রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমণ করেছে, তা দেখেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বস্তুত, এর আগে দুই দেশই পশ্চিম এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভারসাম্যের রাজনীতির নীতি নিয়ে চলতো। কোনো পক্ষের প্রতিই তারা পক্ষপাতিত্ব করতো না। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ দুই দেশেরই নীতি বদলে দিয়েছে। ন্যাটোর অধিকাংশ দেশ সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডকে সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু তুরস্কের প্রধান এর্দোয়ান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি এই দুই দেশের অন্তর্ভুক্তি মেনে নেবেন না। ন্যাটোর ভোটে তিনি ভেটো প্রয়োগ করবেন। এর্দোয়ানের যুক্তি ছিল, বিশেষ করে সুইডেন সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে তুরস্ককে সমর্থন করে না। তুরস্ক কুর্দ যোদ্ধাদের সংগঠন পিকেকে-কে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে দেখে। ন্যাটোর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকাতেও পিকেকে আছে। কিন্তু সুইডেন পিকেকে-কে সন্ত্রাসবাদী বলে মনে করে না। সুইডেন এই মনোভাব পরিবর্তন না করলে তুরস্ক সুইডেনের অন্তর্ভুক্তি মেনে নেবে না।
গত কয়েকমাসে এনিয়ে তুরস্কে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের প্রতিনিদিদের সঙ্গে তুরস্কের একাধিক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রফাসূত্র অধরা থেকেছে। মঙ্গলবার মাদ্রিদে ন্যাটোর বৈঠক শুরু হওয়ার আগে তিনটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ফের বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসে। মধ্যস্থতা করেন ন্যাটো প্রধান। দীর্ঘ আলোচনার পর একটি চুক্তিপত্র তৈরি হয়। সেখানে তুরস্কের তোলা আপত্তিগুলি মেনে নেয় সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড। তারই ভিত্তিতে চুক্তিপত্রে সই করে সবপক্ষ। তারপরেই তুরস্ক জানায়, তাদের সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড নিয়ে আর কোনো আপত্তি নেই।
তুরস্কের বক্তব্য ছিল, পিকেকে-র সদস্যরা সুইডেনকে তাদের গোপন ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে তারা সুইডেনে গিয়ে থাকছে। এবং সেখান থেকে তুরস্কের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরিকল্পনা করছে। সুইডেন জানিয়েছে, পিকেকে-র বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেবে। এবং তাদের দেশকে তুরস্কের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য ব্যবহৃত হতে দেবে না।
এদিকে এদিনি স্পেনের রাজসভায় ন্যাটো সদস্যদের নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু বৈঠক দীর্ঘায়িত হওয়ায় তুরস্ক, সুইডেন, ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধানরা তাতে যোগ দিতে পারেননি।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)