ফিরে এলো ভাস্কর্য!
২৯ মে ২০১৭গত বছরের শেষের দিকে সুপ্রিম কোর্টের সামনে ন্যায়বিচারের প্রতীক ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হলে তার বিরোধিতা শুরু করে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামপন্থি সংগঠন৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাদের সেই বিরোধিতাকে কার্যত সমর্থন করে ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলার পক্ষে মতামত দেন৷ ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলো ভাস্কর্যটিকে ‘গ্রিকদেবীর মূর্তি’ হিসেবে বিবেচনা করে এটিকে ‘অনৈসলামিক’ আখ্যা দেয়, যদিও ভাস্কর মৃণাল হক জানান যে, একহাতে তলোয়ার ও অন্যহাতে দাড়িপাল্লা ধরা শাড়ি পরা ভাস্কর্যটি তিনি বাঙালি নারীর আদলে তৈরি করেছেন৷
ভাস্কর্যটি নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে এটি হঠাৎ করে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনের সামনে থেকে সরিয়ে ফেলা হয়৷ ভাস্কর্য সরানোর তীব্র প্রতিবাদ করেন বাংলাদেশের মুক্তমনা এবং ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীগুলো৷ সুশীল সমাজের একাংশ ইসলামপন্থিদের চাপের কাছে নতিস্বীকার করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেন৷ তাঁরা আরো দাবি করেন যে, হাসিনা সরকার আগামী বছরের নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের ভোট পেতে এটা করেছে৷
অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলাম ‘মূর্তি’ সরিয়ে ফেলায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান, যদিও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দাবি করেন যে, সরকার নয়, বরং সুপ্রিম কোর্টই এটি সরিয়ে ফেলেছে৷ তবে হেফাজতের আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি, কেননা, শনিবার রাতে ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্টেরই আরেকাংশ অ্যানেক্স ভবনের সামনে স্থাপন করা হয়েছে৷ এই পুনঃস্থাপনে নাখোশ হয়ে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী বলেছেন যে, ‘‘জাতির ধর্মীয় বিশ্বাস ও আবেগের সাথে তামাশা’ করা হয়েছে৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘ভাস্কর্য অপসারণ নিয়ে ‘মধ্যপন্থার’ কোনো সুযোগ নেই, বরং এটিকে চিরতরে দেশ থেকে অপসারণ করতে হবে৷’’ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একথা বলেন তিনি৷
এদিকে, ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে মৃণাল হক জানিয়েছেন, তাঁকে ভাস্কর্যটি সরাতে বলা হয়েছে৷ ‘‘এখন সেটিকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরে সুপ্রিম কোর্টের পেছনে স্থাপন করা হয়েছে,’’ বলেন তিনি৷
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ হলেও গত কয়েকবছর ধরে উগ্রপন্থি ইসলামিস্টদের প্রভাব বাড়ছে৷ গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন ব্লগার, বিদেশি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ উগপ্রন্থিদের হাতে নিহত হয়েছেন৷ আল-কায়দা এবং ‘ইসলামিক স্টেটের’ মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশে নিজেদের অবস্থান বাড়ানোর কথা বলেছে, যদিও সরকার মনে করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর কোনো অস্তিত্ব সে দেশে নেই৷
এআই/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...