পরমাণু বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ অন্ধকার
১১ মার্চ ২০১৫মাইকেল স্নাইডার প্রতি বছর গোটা বিশ্বের পরমাণু শিল্পের একটা খতিয়ান প্রকাশ করেন৷ এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বে জ্বালানির উৎস হিসেবে পরমাণু বিদ্যুৎ কতটা আকর্ষণীয়, সেই রিপোর্টে তার একটা চালচিত্র উঠে আসে৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি পরমাণু বিদ্যুতের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন৷
স্নাইডার-এর মতে, গত কয়েক বছরে পরমাণু বিদ্যুতের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে৷ অন্যদিকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের ব্যয় কমে চলেছে৷ ফলে এই ক্ষেত্র সত্যি বিকল্প হয়ে উঠছে৷ তার উপর ইউরোপে বিদ্যুতের চাহিদা কমে চলেছে৷ যে সব সংস্থা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাচ্ছে, তাদের বিপুল ঋণের ভার বড় একটা সমস্যা হয়ে উঠছে৷
এমন পরিস্থিতি সত্ত্বেও ব্রিটেনের মতো দেশ এখনো পরমাণু বিদ্যুৎ আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইছে৷ কারণ সে দেশে একের পর এক সরকার পরমাণু বিদ্যুৎকে মুশকিল আসান হিসেবে গণ্য করে আসছে৷ সামগ্রিক জ্বালানি নীতির বিকাশ নিয়ে তারা মাথা ঘামায়নি৷ এখন সে দেশেও পরমাণু বিদ্যুতের মূল্য বাড়ছে, অথচ এর কোনো বিকল্প প্রস্তুত করা হয়নি বলে মনে করেন মাইকেল স্নাইডার৷ এমনকি পরিকল্পিত নতুন কেন্দ্র নিয়েও সে দেশে কোনো স্পষ্ট দিশা দেখা যাচ্ছে না৷
অর্থনৈতিক মানদণ্ডে দেখলেও পরমাণু বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলে মনে করেন মাইকেল স্নাইডার৷ তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, কোনো বেসরকারি বড় ব্যাংক আর পরমাণু বিদ্যুতের অর্থায়নে এগিয়ে আসছে না৷ রেটিং এজেন্সিগুলিও এক্ষেত্রে বিনিয়োগকে নেতিবাচক হিসেবে গণ্য করছে৷ উলটে সিমেন্স-এর মতো কোম্পানি যখন পরমাণু বিদ্যুত ক্ষেত্র থেকে পুরোপুরি সরে আসছে, তখন তাদের রেটিং বেড়ে যাচ্ছে৷
মোটকথা, সরকার মোটা অঙ্কের ভরতুকি না দিলে কোথাও আর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব হয়ে উঠছে না৷ মুক্ত বাজার অর্থনীতির কাঠামোয় এর কোনো জায়গা নেই৷ রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন ও জাপানের মতো দেশে পরমাণু বিদ্যুৎ শিল্প এখনো টিকে রয়েছে বটে, কিন্তু তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ মাইকেল স্নাইডার এ প্রসঙ্গে ফ্রান্সের ‘আরেভা' কোম্পানির দশা তুলে ধরেছেন৷ উল্লেখ্য, এই কোম্পানির ৮৭ শতাংশ মালিকানা রাষ্ট্রের হাতে৷ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুয়র্স এই কোম্পানির রেটিং অনেক কমিয়ে দিয়েছে৷ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থারও একই অবস্থা৷
তবে কোণঠাসা হয়ে পড়লেও পরমাণু শিল্পের ‘লবি' এখনো অত্যন্ত শক্তিশালী বলে মনে করেন মাইকেল স্নাইডার৷ বিশাল মাত্রায় বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার মাধ্যমে তারা পরমাণু শক্তির উপযোগিতার বার্তা ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করে চলেছে৷ কথায় বলে, ‘যা রটে তার কিছুটা তো বটে'৷ প্রচারণা, বিশাল পরিমাণ অর্থ এবং দুর্নীতিও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে৷
পরমাণু কেন্দ্র নির্মাণের সময় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে উচ্চবাচ্য করা হয় না বলে অভিযোগ করেছেন মাইকেল স্নাইডার৷ এমন কেন্দ্র গড়ে ২৯ বছর চালু থাকে৷ তারপর সেটিকে বন্ধ করে নিরাপদভাবে ভেঙে ফেলার কাজ অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল৷ সেই আর্থিক ব্যয়ভার বহন করার ক্ষেত্রে মালিক সংস্থা সাধারণত কোনো প্রস্তুতি রাখে না৷ হিসাবের খাতায়ও তার কোনো উল্লেখ থাকে না৷
গোটা বিশ্বে জ্বালানির ব্যবহার সম্পর্কে একটা পূর্বাভাষও দিয়েছেন মাইকেল স্নাইডার৷ বিশ্বের প্রথম সারির বেসরকারি ব্যাংকগুলির সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে তিনি এমন এক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন, যখন অনেক দেশে বাড়ির ছাদেই সরাসরি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন জ্বালানির মূল উৎস হয়ে দাঁড়াবে৷ তখন আর সাধারণ গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ কেনার প্রয়োজন পড়বে না৷ ইলেকট্রিক গাড়িও দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠবে৷