অস্বস্তিতে ভারত
১২ মার্চ ২০১৩ভারতে পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক ইউকিয়া আমানোর ৫ দিনের ভারত সফর তাৎপর্যপূর্ণ৷ তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটে যে সব নতুন পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ সরকার হাতে নিয়েছে, স্থানীয় লোকজনদের প্রতিবাদ বিক্ষোভে তার কাজ আপাতত স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছে সরকার৷ আমানো ভারতের বিভিন্ন পরমাণু শক্তি দপ্তরের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে পরমাণু কেন্দ্রগুলির নিরাপত্তার নতুন মাপকাঠি এবং অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করবেন৷ কথা হবে ভারতের বিতর্কিত পরমাণু দায়বদ্ধতা ধারা নিয়ে৷
পরমাণু সরঞ্জাম সরবরাহকারী দেশগুলি ভারতের ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেয়ায় আন্তর্জাতিক পরমাণু চুল্লি সরবরাহকারী কোম্পানিগুলি এই ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷ চুল্লিতে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ বর্তাবে সরবরাহকারী কোম্পানির ওপর৷ উল্লেখ্য, ভারতে এখন ২০টি পরমাণু চুল্লি চালু আছে৷ আরো ৭টি বসানো হচ্ছে৷ ২০৩২ সাল নাগাদ ভারতে পরমাণু বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৩ হাজার মেগাওয়াট৷
প্রতিবাদ আন্দোলন কেন?
কিছু এনজিও-র নেতৃত্বে পরমাণু প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী আশপাশের লোকজনদের বক্তব্য, তাদের প্রধান উদ্বেগ নিরাপত্তা৷ জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রের দুর্ঘটনা তাদের ভীতি বাড়িয়ে দিয়েছে৷ তামিলনাড়ুর আন্দোলনকারীরা মনে করে, পরমাণু কেন্দ্রের বর্জ্য পদার্থ সমুদ্রের জলে মিশলে উপকূলবর্তী মৎসজীবীদের রুজি-রোজগার মার খাবে৷ মহারাষ্ট্রের আন্দোলনকারীদের মতে, বর্জ্য পদার্থে উপকূলের ম্যানগ্রোভ বা বাদাবন বিনষ্ট হবে৷ জৈব বৈচিত্র্য তথা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে৷ গুজরাটের সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য৷ এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা হয় জনস্বার্থ মামলা৷ পশ্চিমবঙ্গের হরিপুরে রাজ্য সরকার পরমাণু কেন্দ্র বসানোর অনুমতি দেয়নি এইসব কারণে৷
পরমাণু অস্ত্রের ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা
পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে ভারত তার নীতি স্পষ্ট করেছে৷ যেমন, ভারত কখনই প্রথমে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে না৷ তবে আক্রান্ত হলে পাল্টা আঘাত হানবে দ্বিগুণ শক্তিতে৷ কোনো দেশ যদি ভারতের বিরুদ্ধে জীবাণু ও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের অধিকার থাকবে ভারতের৷ পরমাণু অস্ত্রহীন কোন দেশের বিরুদ্ধে ভারত পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে না৷ প্রতিরক্ষার জন্য পরমাণু অস্ত্রের কমান্ড ও কন্ট্রোল থাকবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে৷ পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ নিবারণে ন্যূনতম পরমাণু অস্ত্র মজুত রাখা হবে৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ হতে হবে বৈষম্যহীন৷