পরিবর্তনের সুপারিশসহ সংসদে ইসি গঠনের বিল
২৬ জানুয়ারি ২০২২ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, বুধবার কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার বিলের প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করেন৷ গত রোববার সংসদে বহুল আলোচিত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২' উত্থাপন করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷ বিলটি পরীক্ষার পর সাত দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়৷
যে কোনো দিন আইনমন্ত্রী সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করবেন ৷ সংসদ সদস্যরা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনীর প্রস্তাব তোলার পর বিলটি নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে৷ সংসদ চাইলে সংসদীয় কমিটির সুপারিশসহ বা সংসদে স্থির করা খসড়া আইনটি পাস করতে পারে৷
পরিবর্তনের যেসব সুপারিশ
সংসদে উত্থাপিত বিলে সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা সংক্রান্ত ৫(গ) ধারায় বলা আছে, সিইসি ও কমিশনার হতে গেলে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে৷
এই ধারায় সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও পেশায়' যুক্ত করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি৷
অর্থাৎ সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে সার্চ কমিটি এমন কাউকে সুপারিশ করবে, যার কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা আছে৷
বিলটি নিয়ে আলোচনার পর সংসদীয় কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার বলেছিলেন, ‘অনান্য পেশা' এখানে যুক্ত করা হয়েছে৷
আর অযোগ্যতার ক্ষেত্রে ৬ (ঘ) ধারায় বলা আছে, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সিইসি ও কমিশনার হওয়া যাবে না৷
এখানে দুই বছরের কারাদণ্ড উঠিয়ে দিয়ে শুধু কারাদণ্ডের সুপারিশ করেছে কমিটি৷ অর্থাৎ, নৈতিকস্খলন ফৌজদারি অপরাধে যে কোনো মেয়াদের সাজা হলেই তা সিইসি বা কমিশনার হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগত্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে৷
সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছে, ‘‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইতোপূর্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির ও তৎকর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলি এবং উক্ত অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ বৈধ ছিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত বিষয়ে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না৷’’
আইনের প্রেক্ষাপট
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন এবং সার্চ কমিটি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য বিলটি গত রোববার সংসদে তোলা হয়৷
গত ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইনের খসড়া অনুমোদন করা হয়৷ সেদিন বঙ্গভবনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ইসি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির এবারের সংলাপ৷ কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের বিদায়ের সময় তোলা এই নতুন আইনের খসড়া সংসদে পাসের প্রক্রিয়ায় রয়েছে৷
কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷ রাষ্ট্রপতিকে তার আগেই নতুন কমিশন গঠন করতে হবে৷ বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে, সাংবিধানিক সংস্থা ইসিতে কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির৷ এবং একটি আইনের অধীনে হবে৷ এতদিন সেই আইন না হওয়ায় প্রতিবারই ইসি গঠনের সময় বিতর্ক হয়৷
তা এড়াতে ২০১২ সালে নতুন কমিশন নিয়োগের সময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সার্চ কমিটি নামে একটি মধ্যস্থ ফোরাম তৈরি করেন, যেটি নিয়েও বিতর্ক হয়৷
রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিশিষ্ট কয়েকজন নাগরিকদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করেন৷ সার্চ কমিটি সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হওয়ার জন্য যোগ্যদের নামের তালিকা করেন৷ সেই তালিকা থেকে একজন সিইসিসহ অনধিক পাঁচজন কমিশনার নিয়োগ দেন৷ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালে সেই পদ্ধতিই অনুসরণ করেন এবং এবারও সেভাবেই করতে যাচ্ছিলেন৷
তবে সংলাপে অংশ নেওয়া ২৫টি দলের প্রায় সবগুলো ইসি গঠনে স্থায়ী সমাধান হিসেবে আইন প্রণয়নের উপর জোর দেয়৷ আলোচনায় রাষ্ট্রপতিও এ বিষয়ে সম্মত হন৷ বিএনপিসহ সাতটি দল অংশ নেয়নি এবারের সংলাপে৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)