1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবারের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক রুখতে পারে অনার কিলিং

২৫ অক্টোবর ২০১৬

বর্তমানে কত অশান্তির কারণেই না তরুণ-তরুণীদের জীবন দিতে হয়৷ তাই বলে শুধু ভালোবাসার কারণে হত্যার শিকার? তাও আবার পরিবারেরই কারো হাতে? হ্যাঁ, বলছি অনার কিলিং বা পরিবারের সম্মান বাঁচাতে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় সেসবের কথা৷

https://p.dw.com/p/2RZ8X
Darmstadt Gerichtsprozess Ehrenmord Angeklagte Shazia K.
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler

পাকিস্তানি একটি মেয়ের ছেলেবন্ধুকে তার মা-বাবার পছন্দ নয়, তাই পরিবারের সম্মান বাঁচাতে মেয়েটিকে গলা টিপে হত্যা করেছে তার নিজের বাবা-মা৷ তবে ঘটনাটি পাকিস্তান বা দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে নয়, ঘটেছে কয়েক মাস আগে জার্মানির  ডার্মস্টাড্ট শহরে৷ পরিবারের হাতে খুন হওয়া মেয়েটার ‘অপরাধ,' সে পরিবারের অপছন্দের কাউকে ভালোবেসেছিল৷ 

জার্মানির হানোফার শহরে এই বছরই ঘটেছে আরেক ঘটনা৷ মেয়েটি পরিবারের পছন্দের পাত্র তার কাজিনকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় বিয়ের আসরেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ আর বার্লিনে এক তুর্কি যুবক তার অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ এতেও যুবকটির সাধ মেটেনি৷ শেষ পর্যন্ত মেয়েটির পেটে ছুরিকাঘাত করে যুবকটির ঔরসজাত সন্তান এবং তার হবু মা'কে মেরে ফেলে৷

ল্যুনেবুর্গে এক ইরাকি তাঁর স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে তার স্ত্রী খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করতে চাওয়ার কারণে৷

কখনো কখনো দেখা যায়, তরুণ-তরুণীদের অন্য ধর্মের ছেলে বা মেয়ে বন্ধু থাকে৷ অথবা বর্তমান স্বামীর সাথে থাকতে না চাওয়ায় বিচ্ছেদ বেছে নেন অনেকে৷ আর এরকম পরিস্থিতিতে পরিবারের হাতে খুন হওয়ার ঘটনা ঘটছে জার্মানিতেও৷

প্রভাবশালী সাপ্তাহিক ডেয়ার স্পিগেলে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে ১৯৯৬ সালে প্রথম দু'টি অনার কিলিং হয়৷ ২০০৯ সালে এমন অপরাধের সংখ্যা বেড়ে হয় ৩০টি, যার মধ্যে একজন পুরুষ ছাড়া বাকি সকল ভুক্তভোগীই নারী৷ আর খুনীদের  তালিকায় ছিল বর্তমান বা প্রাক্তন স্বামী, বয়ফ্রেন্ড, বাবা, ভাই এমনকি মেয়ের কাজিনরা৷

জার্মানিতে সংখ্যার বিচারে অনার কিলিং খুব বেশি না হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন বয়সের ৫০০০ নারীকে প্রতিবছর পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে হত্যা করা হচ্ছে৷ জাতিসংঘের দেয়া এই হিসেবের সঙ্গে আসল হিসেব হয়ত মিলবে না, কেননা, কিছু দেশে অনার কিলিংকে দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷

এখানে লক্ষ্যনীয়, বাবা-মা, ভাইবোন বা পরিবারের সকলের মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকার কারণে সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব গড়ে ওঠে৷ আবার পরবর্তীর্তে অভিবাবকরা তাদের অধিকারের দাবি নিয়ে সন্তানের ওপর অনেক কিছুই চাপিয়ে দিতে চায়৷ এক্ষেত্রে মেয়ে বা ছেলে তা মেনে নিতে না চাইলে সন্তানকে নিজের হাতে খুন করা হচ্ছে জেদ বা রাগের মাথায়৷

DW Programm Hindi Redaktion Nurunnahar Sattar
নুরুননাহার সাত্তার, ডয়চে ভেলেছবি: DW

জার্মানিতে অনেক তুর্কি এবং তুর্কি বংশোদ্ভুত মানুষ থাকেন৷ তাছাড়া ইরাক, ইরান, মরক্কো, লেবানন, সিরিয়াসহ নানা দেশ থেকে থেকে আসা মুসলমানের বাস জার্মানিতে৷ মুসলিম দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের অনেক পরিবারের মধ্যে পুরুষতান্ত্রিক আচরণ খুব প্রকট৷ তাদের বাড়িতে বাবা বা ভাইয়ের পছন্দকেই মা, বোনদের পছন্দ বলে ধরে নিতে হয়৷ জার্মানিতে জন্ম এবং বড় হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে জার্মানি বা ইউরোপের প্রভাব পড়ে৷ আর তখন বাবা-মায়ের চিন্তার সাথে সন্তানের ভাবনায় পার্থক্য সৃষ্টি হয়৷ আমার মনে হয়, দুই প্রজন্মের মধ্যে ভাব বিনিময়ের অভাব, একে অপরকে বোঝার মনোভাব না থাকায় অনার কিলি-এর মতো ঘটনা বেশি ঘটে৷ 

স্বাধীনচেতা মনোভাবের মানুষদের দেশ জার্মানিতে থেকেও অনেক বিদেশি অভিবাবককে দেখা যায় তারা সন্তানকে খুব বেশি মাত্রায় তাঁদের দেশের সংস্কৃতিতেই বড় করতে চান৷ অর্থাৎ পরিবারে ঘরের ভেতরে চলে তাদের দেশের সব নিয়ম-কানুন৷ বাইরে তো এ দেশের  নিয়ম কিছুটা মেনে চলতেই হয়৷ আমার ধারণা, ব্যাপারটি যেমন মা-বাবার জন্য কঠিন, সন্তানের জন্যও সহজ নয়৷ পরিবারের মধ্যে ‘সুস্থ' সম্পর্ক থাকলে মানুষ কখনো এতটা হিংস্র হতে পারে না৷ ‘সুস্থ' পরিবার থেকে গড়ে ওঠে একটি ‘সুস্থ' সমাজ এবং ‘সুস্থ' জাতি৷

নিজের সন্তান, বোন বা আত্মীয়াকে খুন করে পরিবারের সম্মান রক্ষা সম্ভব নয়, এই শিক্ষাটাও পরিবারকেই দিতে হবে৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য