পরিবেশ বান্ধব বাহন সাইকেল নিয়ে এককাহন
২৩ আগস্ট ২০১১সাইকেল চালকদের ক্ষেত্রেও চোখে পড়বে শত আশ্চর্যজনক ব্যাপার৷ সাধারণত দ্রুতগামী গাড়ি চলার পথের পাশেই থাকে পথিক এবং সাইকেল চালকের জন্য নির্ধারিত পথ৷ তবুও এই পথ দু'টোকেও আলাদা রং কিংবা কোন বিশেষ চিহ্ন দিয়ে আলাদা করা থাকে৷ এতো কিছুর পরেও কোন পথিক যদি কোনভাবে সাইকেলের পথ আগলে চলতে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই সাইকেল চালক খুব মেজাজ খারাপ করে গালি দিয়ে বসবেন? হ্যাঁ, বাংলাদেশে হলে হয়তো এরকম গালি কিংবা সাইকেলের ধাক্কা খেতে হতো৷
কিন্তু বনের পথে পথিকের এমন বেখেয়াল কিংবা ভুলের জন্য বেচারা সাইকেল চালক পেছন থেকে বেল তো বাজাবেই না, মুখেও কিছু বলবে না৷ যা করবে তা হলো নিজেই চুপ করে পথিকের পেছনে এসে সাইকেল থেকে নেমে প্রয়োজনে দ্রুত সাইকেল ঠেলে নিয়ে পথিককে পেরিয়ে যাবে৷ তারপরই আবার সাইকেলে উঠে চুপ করে চলে যাবে৷ হয়তো আমাদের মতো ভিন্ন সংস্কৃতির অনেকের কাছেই এটাকে অত্যন্ত বাড়াবাড়ি রকমের সৌজন্য বলে মনে হবে৷ কিন্তু তাতে তাদের কিছুই আসে যায় না৷ এমন ভদ্র আচরণ শুধু বড়রাই নয়, একেবারে ছোট্ট শিশুটিকেও শেখানো হয় এমন চমৎকার শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা৷
শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে মোটরসাইকেলে উঠলে হেলমেট পরা কিংবা গাড়িতে উঠলে সিট বেল্ট বাঁধার নিয়ম মানতে মানুষের কষ্ট কিংবা অস্বস্তির শেষ নেই৷ এমনকি নিরাপত্তা কর্মীরাও এ ব্যাপারে কড়াকড়ি করে খুব একটা সুফল পাননি৷ অথচ জার্মানির পথে ঘাটে এমন একটিও গাড়ি কিংবা মটরসাইকেলের যাত্রী পাওয়া যাবে না যিনি বা যারা সিটবেল্ট বেঁধে নেই কিংবা হেলমেট পরেননি৷ এটুকু শুনেই যারা চমকে যাবেন তাদের জন্য রয়েছে আরো চমক৷ সাইকেল চালাতেও হেলমেট পরতে হয় - এমন কথা জীবনে প্রথমবারের মতো শুনছেন এমন মানুষের সংখ্যা আমাদের দেশে খুব কম হবে না৷ আর আমি নিজেও তাদের দলেই রয়েছি৷ অথচ এই দেশটিতে হেলমেট ছাড়া সাইকেল চালক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর৷ তাতে সাইকেল চালক সেই ছোট্ট শিশুটিই হোক আর বুড়ো কিংবা কোন বুড়ি মানুষই হোক না কেন৷
এর সাথে রয়েছে, পথে সাইকেল নিয়ে বের হলেই সেটির সবগুলো যন্ত্রপাতি একেবারে পুরোপুরি সচল থাকার বাধ্যবাধ্যকতা৷ হয়তো ভাবছেন, সাইকেলে আবার এতো যন্ত্রপাতির কী আছে? প্রশ্নটা খুব স্বাভাবিক বাংলাদেশের মতো দেশের পথে৷ কিন্তু এখানে সেটিই কড়া নিয়ম৷ বনের পথে দিনের বেলাতেও যদি আকাশ একটু মেঘলা হয়ে উঠে, তাহলেই মোটর সাইকেল থেকে শুরু করে সব যন্ত্রচালিত গাড়িগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হয়৷ অবশ্য সাইকেলের ক্ষেত্রে দিনের বেলায় আলো জ্বালানোর প্রয়োজন না হলেও রাতের বেলা বাতি ছাড়া সাইকেল চালানোর কোন উপায় নেই৷ সাইকেলে বাতি না থাকলেও পুলিশ ধরে আচ্ছামতো জরিমানা কষে দেবেন৷ সাইকেল চালকের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য দেখা যায় কিছু চালক সাইকেলের বাতি ছাড়াও নিজের কপালের সাথেও আরেকটি বাতি জ্বেলে রাখেন৷ গায়ে পরে থাকেন বিশেষ উজ্জ্বল রঙের কোটি বা কোর্তা জাতীয় পোশাক৷ কারণ তাতে আশেপাশের গাড়ির আলো পড়লেই বেশ তীব্র প্রতিফলন ঘটে এবং গাড়ির চালক সাইকেল চালকের ব্যাপারে মনোযোগী হতে পারেন৷ ফলে সাইকেল চালক দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে পারে৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক