1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পর্নোগ্রাফি বন্ধে সরকার সক্রিয় কেন?

২৯ নভেম্বর ২০১৬

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় অনলাইন পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটি কমিটি গঠন করেছে৷ ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানিয়েছেন, ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি বন্ধের প্রক্রিয়া চলমান থাকবে৷ 

https://p.dw.com/p/2TSKt
Symbolbild Online Konsum von Pornographie im Internet
ছবি: Fotolia/morrbyte

বাংলাদেশে গত মাসে ফেসবুকের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে একটি ফেসবুক গ্রুপের কিরুদ্ধে৷ পুলিশ ওই গ্রুপের তিন সদস্যকে আটকও করে৷ তবে মুল অ্যাডমিন দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আর আটক করতে পারেনি৷  মেডিক্যালে পড়ুয়া এক ছাত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত ভিডিও ওই গ্রুপে ছেড়ে তাকে ব্ল্যাক মেইলের চেষ্টা করা হয়েছিল৷ ওই মেয়েটি শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার চেষ্টা করে৷ এরকম আরো অনেক ফেসবুক গ্রুপ আছে যেগুলোকে পর্যায়ক্রমে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ৷

ফেসবুকের বাইরে বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে কিছু পোর্টাল বা ওয়েব সাইটের বিরুদ্ধে৷ আবার এসব পর্নোগ্রাফির অধিকাংশেরই উৎস বাংলাদেশ নয়৷ প্রতিবেশি দেশসহ উন্নত বিশ্ব৷ এর বাইরেও ব্যক্তিগত পর্যায়ের পর্নোগ্রাফির আদান- প্রদান হয়৷ অনলাইন ছাড়াও অফ লাইনে এর বিতরণ এবং ব্যবহারের অভিযোগ আছে৷

‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন'-এর এক জরিপে বলা হচ্ছে ঢাকায় স্কুলগামী শিশুদের প্রায় ৭৭ ভাগ পর্নোগ্রাফি দেখে৷ ঢাকার ৫০০ স্কুলগামী শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালিয়ে এই তথ্য প্রকাশ  করে তারা৷ আর শিশুরা এই পর্নোগ্রাফি দেখে প্রধানত মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারে৷ 

মাসুদুর রহমান

সব দিক বিবেচনা করে তাই টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় অনলাইন পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটি কমিটি গঠন করেছে৷ সোমবার সচিবালয়ে ‘অনলাইনে আপত্তিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত এক সভা' শেষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ তথ্য জানান৷

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-র মহা-পরিচালককে আহ্বায়ক করে কমিটিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, মোবাইল অপারেটরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে৷

তারানা হালিম সাংবাদিকদের জনিয়েছেন, এই কমিটি আগামী সাত দিনের মধ্যে ইন্টারনেটে পর্নোগ্রফি ও আপত্তিকর কন্টেন্টের পূর্ণাঙ্গ ওয়েব তালিকা করবে৷ তবে শুধু এই তালিকা ধরে নয়, ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি বন্ধের প্রক্রিয়া চলমান থাকবে৷  তিনি আরো জানান, আপত্তিকর ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশের পরও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বা ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) যদি বন্ধ না করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ 

এ নিয়ে কন্টেন্ট ম্যাটারস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী রফিক উল্লাহ রোমেল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাধারণভাবে ধারণা করা হয় যে তরুনরাই পর্নোগ্রাফি বেশি দেখে বা পড়ে৷ আসলে আমার মনে হয় তা নয়৷ ছেলে-বুড়ো অনেকেই এর ভোক্তা৷ আর আমরা যেহেতু কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করি, তাই দেখতে পাই, পর্নোগ্রাফি কন্টেন্ট হিসেবে বেশ আকর্ষনীয় এবং এর চাহিদা ব্যাপক৷ এখন কথা হলো, পর্নোগ্রাফির সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট কিনা৷ এটা সুনির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন৷ আমি টেলি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করি৷ তবে এটা যেন অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আবার ব্যবহার করা না হয়৷''

রফিক উল্লাহ রোমেল

তিনি আরো বলেন, ‘‘পর্নোগ্রাফি নানা ফর্মে নানাভাবে উপস্থাপন করা হয়৷ আমার কথা হলো, এর সঙ্গে বড় বড় সংবাদ মাধ্যমও জড়িয়ে গেছে৷ তাদেরটা বন্ধ করতে না পারলে টুকটাক বন্ধ করে আসলে কাজ হবেনা৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. রাশেদা রওনক খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পর্নোগ্রাফি বন্ধে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে আমি সাধুবাদ জানাই৷ এখন মেবাইল ইন্টারনেটে এটা ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে৷ এর নেতিবাচক প্রভাব বেশি দেখা যায় তরুনদের মধ্যে৷ শিশু ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার এটা অন্যতম কারণ৷'' তবে এটা ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে বাবহার হতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়না৷ আর যদি হয়ও তার দায়-দায়িত্ব যারা করবেন, তাদেরই নিতে হবে৷ তবে আমি মনে করি, সরকার একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷'' 

বাংলাদেশের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২-এ পর্নোগ্রাফির সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে৷

আর সেই সংজ্ঞা  অনুযায়ী পর্নোগ্রাফি হলো:

(১) যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোনো অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য, যা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, গ্রাফিক্স বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যাহার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই৷

ড. রাশেদা রওনক খান

(২) যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল বই, সাময়িকী, ভাস্কর্য, কল্পমূর্তি, মূর্তি, কাটুর্ন বা লিফলেট;

(৩) উপ-দফা (১) বা (২) এ বর্ণিত বিষয়াদির নেগেটিভ ও সফট ভার্সন;

(ঘ) ‘পর্নোগ্রফি সরঞ্জাম' অর্থ পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, সংরক্ষণ, ধারণ বা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ক্যামেরা, কম্পিউটার বা কম্পিউটার যন্ত্রাংশ, সিডি, ভিসিডি, ডিভিডি, অপটিক্যাল ডিভাইস, ম্যাগনেটিক ডিভাইস, মোবাইল ফোন বা উহার যন্ত্রাংশ এবং যে কোনো ইলেক্ট্রনিক, ডিজিটাল বা অন্য কোনো প্রযুক্তিভিত্তিক ডিভাইস৷

পর্নোগ্রফি আইনে পর্নোগ্রাফি তৈরি, বিতরণ, বিক্রি এবং ব্যবহারের আলাদা আলাদা শাস্তির বিধান রয়েছে৷ সর্বনিম্ন শাস্তি দুই বছর এবং সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড৷ এর সঙ্গে আর্থিক জরিমানার বিধানও আছে৷ এর সঙ্গে পর্নোগ্রামি উদপাদনের সরঞ্জাম, প্রচার সরঞ্জাম বা মাধ্যম জব্দ করার বিধানও আছে৷

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সব ধরণের পর্নোগ্রফির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই৷ তবে এই সময়ে ইন্টারনেটভিত্তিক পর্নোগ্রাফি বেড়ে গেছে৷ আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিশেষ করে নারীদের হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইল করার জন্য পর্নোগ্রাফির ব্যবহার দেখা যাচ্ছে বেশ৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয় অনলাইন পর্নোগ্রাফি বন্ধে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা আমাদের জন্য অনেক সহায়তা হবে৷''

বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ২২ লাখেরও বেশি৷ এর মধ্যে ৫ কোটি ৮৩ লাখের বেশি মোবাইল ফোন থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়৷ ফলে মোবাইল পর্নোগ্রাফি বাংলাদেশে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান