ভারতের ‘কচ্ছপ গ্রাম’ ভেলাস
৬ মে ২০১৬মোহন উপাধ্যায় চিরকালই জীবজন্তু সম্পর্কে আগ্রহী৷ সামুদ্রিক কচ্ছপরা বিলুপ্ত হওয়ার মুখে, এ কথা শোনার পর তিনি ভারতের এসএনএম এনজিও-র হয়ে কাজ শুরু করেন৷ প্রকল্পটি চালু করা হয় আজ থেকে ১৩ বছর আগে৷ এখন এই প্রকল্প স্থানীয় বনবিভাগের সঙ্গেও কাজ করছে৷
সে এক বিরল দৃশ্য: সদ্যোজাত কাছিমরা শুধুমাত্র তাদের সহজাত প্রবৃত্তি থেকে সাগরে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে৷ মোহন উপাধ্যায় জানালেন, ‘‘কচ্ছপরা চিরকালই এই ভেলাস আর কোঙ্কণ অঞ্চলে এসে ডিম পেড়ে থাকে৷ কিন্তু লোকজন সেগুলো চুরি করে খায়, কিংবা বন্যপ্রাণীরা সেগুলো খেয়ে ফেলে৷ সংরক্ষণকারীরা সৈকতে ডিমের খোলা দেখতে পেয়ে ঠিক করেন যে, তাঁরা কচ্ছপ আর কচ্ছপের ডিম সুরক্ষিত করবেন৷ আমরা কচ্ছপদের সংখ্যা কমে যাওয়া রুখতে, আর এই কচ্ছপরা যে কতটা বিরল, মানুষজনকে তা বোঝাতে চেয়েছি৷ সেভাবেই প্রকল্পের শুরু৷''
ধর্মবিশ্বাসী হিন্দু মোহন কূর্মাবতারের কাহিনি জানেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কচ্ছপকে বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করি৷ কাজেই অধিকাংশ বাড়িতেই এই মাঙ্গলিক চিহ্ন দেখতে পাওয়া যাবে৷ তার সঙ্গে অনেক আবেগ-অনুভূতি জড়িত৷ কচ্ছপ হলো সৌভাগ্য আর ধীরগতির প্রতীক, তাই তাদের অবতার বলে মনে করা হয়৷ কচ্ছপদের চিরকালই দেবতা মনে করে তাদের কাছে প্রার্থনা করা হয়৷''
সমুদ্রের কচ্ছপ আর শহরের টুরিস্ট
ভেলাসের কচ্ছপদের থেকে ব্যবহারিক লাভালাভও আছে৷ মুম্বই-এর মতো বড় শহর থেকে পর্যটকরা আসেন শুধু এই কচ্ছপদের দেখতে৷ ভেলাসে কোনো হোটেল না থাকায় শহুরে টুরিস্টরা গ্রামবাসীদের বাড়িতেই থাকেন – গত দশ বছরে যা প্রায় আটগুণ বেড়েছে, পাঁচ থেকে চল্লিশে উঠেছে৷ সুনীতা সকপাল বাড়িতে টুরিস্ট নেন৷ তিনি জানালেন, ‘‘কচ্ছপদের কল্যাণে বেকাররাও কাজ পেয়েছে৷ কিন্তু এ বছর মাত্র আটটি কচ্ছপ ডিম পেড়েছে – প্রতিবছরই তাদের সংখ্যা কমছে, যে কারণে আমরা খুব চিন্তায় আছি৷ কেননা কচ্ছপরা না এলে জানিনা আমাদের কী হবে৷''
কিন্তু সাগরের পানিতে যদি শুধু মানুষের বর্জ্য পদার্থ, আবর্জনা ভেসে আসে, তাহলে? বিশেষ করে ঠিক যেখানে কচ্ছপরা ডিম পাড়ে? মোহন উপাধ্যায় আর তার সঙ্গিসাথীদের পক্ষে এই অসম যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়, তা তারা যতই ব্যাগ ভর্তি করে প্লাস্টিকের বোতল আর পুরনো ফেলে দেওয়া জুতো কুড়োন না কেন৷ মোহন উপাধ্যায় জানালেন, ‘‘জোয়ার এলে সমস্ত আবর্জনা সৈকতে এসে পড়ে – যেটা কচ্ছপদের পক্ষে খুবই বিপজ্জনক৷''
কচ্ছপরা সম্ভবত প্লাস্টিকের ব্যাগকে জেলিফিশ মনে করে খেয়ে ফেলে৷ সব বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও টুরিস্টরা এখনও সামুদ্রিক কচ্ছপ দেখার আশা রাখেন৷ অবশ্য একজন টুরিস্ট শোনালেন তাঁর দুঃখের কাহিনি, ‘‘আমি গত তিন বছর ধরে নানা রকমের কচ্ছপের খোঁজে আছি৷ সেইজন্যেই এখানে আসার খুব ইচ্ছে ছিল৷ এ বছর সুযোগ হলো৷ কিন্তু কোনো কচ্ছপের দেখা পাইনি৷''
প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভেলাসের সমুদ্রতীরে একই দৃশ্য: মোহন উপাধ্যায়ের সঙ্গিসাথীরা বালির নীচে রাখা ডিমগুলোকে ঢেকে দেন এই আশায় যে, এ রাত্রে খুদে কচ্ছপরা ডিম ভেঙে বেরুবে৷ টুরিস্টদেরও সেই আশা৷