পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা ‘বিকৃতি’
২৫ জানুয়ারি ২০১৬তাঁর কথায়, ‘‘যারা পশুকে ভালোবাসে না, তারা কখনও পশুদের সঙ্গে মেশেনি বা সময় কাটায়নি৷''
রুবাইয়া আহমেদের সংগঠন ‘অভয় আরণ্য' ২০১২ সাল থেকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে কুকুরের বন্ধ্যাকরণ ও টিকা দেয়ার কাজ করেছে৷ এ পর্যন্ত ৩৬টি ওয়ার্ডে ১০ হাজারেরও বেশি কুকুরকে টিকা দেয়া ও বন্ধ্যা করেছে তারা৷ শুধু তাই নয়, গত বছরের জুন মাসে একটি কুকুরকে হত্যার দায়ে তিনজন ছেলেকে ধরে পুলিশেও দিয়েছিল সংগঠনটি৷ সেই মামলাটি এখনও চলছে৷
ডয়চে ভেলে: ‘অ্যানিমেল রাইটস' বা ‘অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার' – যেভাবেই বলি না কেন, বাংলাদেশে এটা নিয়ে তো আইন আছে৷ তা আইনটা কি পর্যাপ্ত না এক্ষেত্রে নতুন কিছু করা দরকার?
রুবাইয়া আহমেদ: যেটা আছে, সেটা ১৯২০ সালের আইন৷ ১৯২০ সালের আইন অনুযায়ী যে জরিমানার কথা বলা আছে, সেটা তখনকার সময়ে অনেক ছিল৷ কিন্তু ১৯২০ সালে যদি ১০০ টাকা জরিমানা হয়ে থাকে, ২০১৬ সালে এসে তো সেটা কিছুই না৷ এ কারণেই এখন এর সংশোধন দরকার৷ পাশাপাশি অনেকগুলো ‘পয়েন্ট' এর সঙ্গে যুক্ত করা দরকার, যেগুলো ঐ আইনে নেই৷ আসলে আইনটা যে খুব খারাপ তা নয়, কিন্তু অনেক পুরনো৷ তাছাড়া আইনটা সুনির্দিষ্ট না৷ তাই আমার মনে হয়, আইনটাকে সুনির্দিষ্ট করতে হবে এবং ২০১৬ সালের উপযোগী করে তুলতে হবে৷
আমাদের দেশে তো ‘অ্যানিমেল' বা প্রাণী কয়েক ধরনের আছে, আপনারা কোন ধরনের প্রাণী নিয়ে কাজ করেন?
প্রাণী কল্যাণের আওতাভুক্ত সব ধরনের ‘অ্যানিম্যাল', মানে চতুষ্পদী-দ্বিপদী সব ধরনের প্রাণী নিয়ে আমরা কাজ করি৷ একটা জায়গা থেকে তো শুরু করতে হয়৷ তাই আমরা সবচেয়ে অবহেলিত, কুকুর নিয়ে কাজ শুরু করেছি৷ এর পাশাপাশি আমরা গৃহপালিত পশু, যেমন গরু, ছাগল, হাস, মুরগি নিয়েও কাজ করছি৷ কারণ এদের আমরা খাবার ছাড়া আর কিছুই ভাবি না৷ তাদের প্রতি আচরণ কেমন হবে, তা নিয়েও আমাদের কাজ শুরু হয়েছে৷ সব প্রাণীই আমাদের কাজের আওতাভুক্ত, কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের ‘ফোকাস' হচ্ছে কুকুর৷
পশুর প্রতি মানুষের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?
পশুর প্রতি মানুষের আচরণ হওয়া উচিত – একজন মানুষের প্রতি মানুষের আচরণ যেমন, ঠিক তেমন৷ প্রাণীরা আমাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত৷ আপনি যদি পশু-পাখির প্রতি সহানুভূতি না দেখাতে পারেন, তাহলে আপনি মানুষের প্রতিও সহানুভূতি দেখাতে পারবেন না৷ পশু-পাখি এত নিষ্পাপ, এত ‘ইনোসেন্ট', যা আপনি মানুষের মধ্যেও পাবেন না৷ পশু-পাখি তো কোনো পাপ করতে পারে না৷ এত নিষ্পাপ প্রাণীর প্রতি যদি আমরা মমতা দেখাতে না পারি, তাহলে মানুষের প্রতি মমত্ব দেখানোর কোনো বিষয় তৈরি হয় না৷ সারা বিশ্বে স্বীকৃত যে, মানুষের প্রতি মানুষের ‘ভায়োলেন্স' বা সহিংসতার সূত্রপাত হয় পশু-পাখির প্রতি ‘ভায়োলেন্স' থেকে৷ যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই একটা রিপোর্ট করেছিল যে, তাদের দেশের অধিকাংশ সিরিয়াল কিলারদের ‘অ্যানিমেল অ্যাবিউজ' করার ‘ব্যাকগ্রাউন্ড' আছে৷ ছোটবেলা থেকে প্রাণীদের ওপর নির্যাতন করার প্রবণতা থাকলে এবং সেটা নিয়ে কেউ যদি কিছু না বলে, তাহলে তারা বড় হয়ে মানুষের প্রতিও অমানবিক আচরণ করে৷ একটার সঙ্গে অন্যটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত৷ তাই ‘অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার' ছাড়া ‘হিউম্যান ওয়েলফেয়ার' সম্ভব না৷ একটাকে বাদ দিয়ে একটা করতে হবে, এমনটাও না৷ সব একসঙ্গে করতে হবে, করা সম্ভবও৷ আর সেটাই একটা জাতির লক্ষ্য হওয়া উচিত৷
আপনি কিভাবে ‘অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার'-এর সঙ্গে যুক্ত হলেন? বা আপনার ভালোবাসাটা কিভাবে তৈরি হলো?
আমার ভালোবাসাটা দুঃখের জায়গা থেকে তৈরি হয়েছে৷ আমার পোষা কুকুরটাকে ২০০৯ সালে সিটি কর্পোরেশন মেরে ফেলে৷ রাগ করে বসে থেকে তো লাভ নেই...৷ তা সেই রাগটাকে কাজে লাগাতে পারার সৌভাগ্য আমার হয়েছে৷ যারা কুকুর-বিড়াল ভালোবাসে না বলে, বা পশু-পাখি ভালোবাসে না বলে, তারা কখনও ওদের সঙ্গে সময় কাটায়নি৷
আপনার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রাণী কল্যাণ ফাউন্ডেশন৷ সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আপনারা যৌথভাবে কুকুরের ‘বার্থ কন্ট্রোল' নিয়ে কাজ করছেন৷ সেটা কতদূর এগুলো বা কী পরিমাণ কাজ ইতিমধ্যে হয়েছে?
২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আমরা ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৩৬টি ওয়ার্ডে ১০ হাজারেরও বেশি কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ ও টিকা দিয়েছি৷ গত বছরই এই ‘প্রোগ্রামটা' গোটা ঢাকা শহরে প্রসারিত হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু নির্বাচনসহ নানা জটিলতার কারণে এগোয়নি৷ এখন নির্বাচিত দুই মেয়র আমাদের অসম্ভব রকম সহযোগিতা করছেন৷ আশা করছি, শিগগিরই আমরা নতুন করে আবার কাজ শুরু করবো৷
আমরা জানি যে, গত বছরের জুনে একটি কুকুরকে হত্যার দায়ে তিনটি ছেলেকে ধরে আপনারা পুলিশে দিয়েছিলেন৷ সেই মামলার সর্বশেষ অবস্থা কী?
আগামী মার্চ মাসে মামলার একটা ‘হিয়ারিং' আছে৷ আমরা যাবো, আমাদের দিকটা বলবো৷ এই ধরনের কাজকে আমরা ‘এনকারেজ' করি না৷ আমাদের সমাজে এই ছেলেগুলোকে হয়ত কেউ এ সব হাতে ধরে শেখায়নি যে, কুকুরকে বা প্রাণীদের এভাবে আঘাত করতে হয় না৷ আমরা কোর্টের কাছে আবেদন করবো যেন ঐ ছেলেগুলোর ‘পার্মানেন্ট রিহ্যাবিলিটেশন' হয়৷ শুধু এরা না, যারা পশু নির্যাতন করবে, তাদের সবার ‘রিহ্যাবিলিটেশন' দরকার৷ কারণ এটা একটা ভয়াবহ মানসিক বিকৃতি৷ এটা সমাজে ছড়িয়ে গেলে, তা ভয়ংকর হবে৷
বন্ধু, পশুর প্রতি মানুষের আচরণ কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? জানান নীচের ঘরে৷