পশ্চিমবঙ্গে অক্সিজেনের এত দাম?
১ মে ২০২১করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা৷ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার ফলে হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়বে৷ সেক্ষেত্রে এমন রোগীদের অক্সিজেনের জোগান দেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে৷ চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনা ভাইরাস ফুসফুসে যে প্রদাহ তৈরি করে, তাতে বায়ুথলিতে (অ্যালভিওলাই) রক্ত চলাচল বাধা পায়৷ ফলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের আদান-প্রদান ব্যাহত হয় এবং অক্সিজেনের ঘাটতি ধরা পড়ে৷ এমন পরিস্থিতিতে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিতে হয় রোগীকে৷ কিন্তু এই মহামারির মধ্যে বাজারে দেখা দিয়েছে অক্সিজেন সঙ্কট৷ অনেক ওষুধের দোকানই এখন অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করতে চাইছেন না বলে অভিযোগ৷ আর এ সুযোগে শুরু হয়েছে কালোবাজারি৷
৩ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা
হলদিয়ার সুপ্রিয় শাসমল তার কোভিড আক্রান্ত মায়ের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার চেয়ে নাজেহাল হয়ে পড়েছিলেন৷ কোথাও সিলিন্ডার পাননি৷ আবার উত্তর কলকাতার অনুসূয়াদে-র কাছ থেকে সিলিন্ডারের জন্য যে পরিমাণ মূল্য চাওয়া হয়েছে, সেটা জোগাড় করার আগেই রোগীর মৃত্যু ঘটে৷
কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাতে টাকা থাকলেও মিলছে না সিলিন্ডার৷ এ চিত্র কমবেশি সর্বত্র৷ সঙ্কট আঁচ করতে এক অক্সিজেন সরবরাহকারীর সঙ্গে কথা বলে ডয়চে ভেলে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সরবরাহকারী জানান, সিলিন্ডারের জন্য জমা রাখতে হবে ২০ হাজার টাকা৷ ইনস্টলেশন খরচ পাঁচ হাজার আট'শ টাকা৷ দৈনিক ভাড়া ১৫০ টাকা৷
প্রশ্ন হলো এই বিপুল টাকা কীভাবে জোগাড় করবেন সাধারণ মানুষ? সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, কালোবাজারির জেরে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকা হচ্ছে সিলিন্ডারের৷ ১৫০০ লিটারের অক্সিজেন সিলিন্ডার সাধারণত হাজার তিনেক টাকায় ভাড়া পাওয়া যায়৷ মাসে একবার রিফিল-এর খরচ আড়াইশো টাকা৷আর এখন এর জন্য এখন দিতে হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার টাকা৷ ডি-টাইপ সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে খরচ ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যা সাধারণ সময়ের দশগুণ৷
বাম যুবদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ভলান্টিয়ার্স-এর সদস্য ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অক্সিজেন সরবরাহ পর্যাপ্ত নেই৷ এ ছাড়া মেডিক্যাল অক্সিজেন প্লান্ট-এ পূর্ণমাত্রায় এর উৎপাদন হচ্ছে না অক্সিজেন৷'' যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলিও কোভিড চিকিৎসায় ব্যবহৃত হবে৷
তবে রাজ্য সরকারের দাবি, তাদের হাতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন রয়েছে৷ শীর্ষ আদালতে হলফনামায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, রাজ্যের অক্সিজেন উৎপাদন ক্ষমতা ৪৯০ মেট্রিকটন৷ এখন ৩৬২ মেট্রিকটন উৎপাদন হচ্ছে৷ রাজ্যের বর্তমান চাহিদা ২৫০ মেট্রিক টন৷ তবে জুনে এই চাহিদা ৬০০ মেট্রিক টনে পৌঁছাতে পারে৷ তখন সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার অভিযোগ করেছে যে, কেন্দ্রীয় সরকার ২০০ মেট্রিকটন অক্সিজেন বাংলার প্লান্ট থেকে অন্য রাজ্যে সরবরাহ করছে৷ সংক্রমণের ঊর্ধগতির এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যসচিব৷
উল্লেখ্য, হিসাবে অনুযায়ী, শুক্রবার রাজ্যে সংক্রমণ ১৭ হাজারের বেশি৷
কালোবাজারি ঠেকাতে কী করছে প্রশাসন?
এদিকে অক্সিজেনের কালোবাজারি ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে প্রশাসন৷ তৈরি হয়েছে এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ-এর বিশেষ দল৷ তারা ওষুধের দোকান থেকে গুদামে মজুত অক্সিজেন সিলিন্ডারের হিসেব নিচ্ছে বলে জানা গেছে৷ তৈরি করা হয়েছে তিন স্তরের কন্ট্রোল রুম৷ প্রথম স্তরে তিন শিফটে থাকবেন ১২ জন অফিসার৷ দ্বিতীয় স্তরে থাকবেন ড্রাগ কন্ট্রোলার ও সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরের অফিসাররা৷ আর তৃতীয় স্তরে থাকবেন পুলিশ, পরিবহণ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা৷ অক্সিজেনের অপচয় রুখতে দেওয়া হয়েছে নতুন গাইডলাইন৷ কখন অক্সিজেন চালু করতে হবে, কখন বন্ধ করতে হবে, কখন ও কোন পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে হবে এর সবই বলা হয়েছে সেই গাইডলাইনে৷ আর প্রেসক্রিপশন ছাড়া মেডিক্যাল অক্সিজেন বিক্রি না করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে৷
এদিকে শনিবার থেকে রাজ্যে চালু হয়েছে অক্সিজেন পার্লার৷ এ ধরনের উদ্যোগের কতটা সুফল পাবে মানুষ? ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মী ডাক্তার কৌশিক চাকিরর প্রশ্ন, ‘‘প্রথম ঢেউয়ের পর এত মাস সরকার সময় পেয়েছে৷ এখন অক্সিজেন নিয়ে কালোবাজারি হচ্ছে কেন? কেন অর্থের বিনিময়ে মানুষকে অক্সিজেন কিনতে হবে?’’