কোভিড পরিবারে খাবার জোগাচ্ছেন তারা
৩০ এপ্রিল ২০২১কোনো সরকারি সংস্থা বা রাজনৈতিক দল তো নয়ই, এমনকি তারা কোনো সেবা সংগঠনেরও অংশ নন৷ তাদের অনেকেই চেনা–পরিচিতির বাইরে কাউকে সাহায্য করার কথা ভাবেননি৷ কিন্তু চলতি কোভিড সংকট তাদের বদলে দিয়েছে৷ ফেসবুকসহ সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে তারা কেউ জানাচ্ছেন, দরকারের সময় অক্সিজেনের বন্দোবস্ত করতে, হাসপাতালে নিয়ে যেতে তারা তৈরি আছেন৷ অ্যাম্বুলেন্স না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই, নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়িতে চড়িয়ে কোভিড রোগীকে নিয়ে যেতেও তারা পিছপা নন৷ কোনো কোভিড রোগীর রক্ত লাগবে, কার প্লাজমা, তারা জামার হাতা গুটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন৷ দেশে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সিদের কোভিড টিকা দেওয়ার কর্মসূচি চালু হতে চলেছে৷ একবার টিকা নিলে পরের দু মাস অন্তত রক্ত দেওয়া যাবে না৷ এদিকে প্রতি বছরই গরমকালে রক্তের আকাল দেখা দেয়৷ তাই এখনই তারা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছেন৷
এভাবেই কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইটা এক থেকে বহুজনের লড়াই হয়ে উঠছে প্রতিদিন৷ তারা বেশিরভাগই আধুনিক প্রজন্মের ছেলে–মেয়ে৷ তারা নাকি সমাজের জন্যে তেমন কিছু ভাবেন না, করেন না বলে দুর্নাম৷ কথাটা যে কত বড় মিথ্যে, তারা এখন রোজ প্রমাণ করে দিচ্ছেন৷ কোনো স্বীকৃতি, প্রশংসা বা পুরস্কারের প্রত্যাশা না রেখেই৷ কেউ কেউ বন্ধু, সহপাঠীদের জুটিয়ে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছেন৷ আবার কেউ নিজের যা সামর্থ, সেটাই কবুল করছেন৷ যেমন শ্রাবস্তী ঘোষ৷ নৃত্যশিল্পী এবং নাট্যকর্মী৷ কোভিড আক্রান্ত পরিবারে যদি শক্ত সমর্থ কেউ না থাকে, তা হলে তারা দুবেলা খাবারটুকুও পাচ্ছে না জানার পর শ্রাবস্তী ফেসবুকে একটি পোস্ট করে জানিয়ে দেন, উত্তর কলকাতার কিছু জায়গায় তিনি অন্তত ১৫টি পরিবারকে বিনামূল্যে খাবার পৌঁছে দিতে পারেন৷ দুদিন হল সেই পরিষেবা শুরুও হয়ে গিয়েছে৷ শ্রাবস্তী জানাচ্ছেন, তাঁর বাড়িতে তার মা দু'বেলা রান্না করে দিচ্ছেন ওই খাবার, যা কোভিড আক্রান্ত পরিবারগুলিকে পৌঁছে দিচ্ছেন পরিচিত স্বেচ্ছাসেবকরা৷
‘‘ভেবেছিলাম ১৫ জনকেই দিতে পারবো৷ কিন্তু গতকাল ৩৩ জনের লাঞ্চ আর ৪০ জনের ডিনার গেছে৷ আজ ৪১ জনের লাঞ্চ আর ৩৩ জনের ডিনার যাচ্ছে৷''ডয়চে ভেলে–কে বললেন শ্রাবস্তী৷ কাদের কাছে এই খাবার যাচ্ছে? ‘‘বেশিরভাগ হচ্ছেন একা মানু্ষ৷ হয়ত অনেক বয়স্ক, ৭৪–৭৫ বছর বয়স, ছেলে–মেয়ে বাইরে থাকে— এরকম অনেকেই আছেন, যারা একা থাকেন৷ তাঁরা যোগাযোগ করেছেন৷''শ্রাবস্তী জানালেন৷আর এর খরচ কীভাবে উঠছে?অনেকেই একেবারে বিনামূল্যে খাবার নিতে অস্বস্তি বোধ করছেন৷ তাঁদের বলা হচ্ছে, যদি ইচ্ছে হয় তাহলে এই পরিষেবা চালু রাখার জন্য চাঁদা দিতে পারেন৷ এছাড়া বাইরে থেকেও অর্থসাহায্য করছেন অনেকে৷ সেভাবেই আপাতত চলছে৷ যদিও শ্রাবস্তী জানেন না, ঠিক কতদিন এই মডেলে পরিষেবা দিয়ে যাওয়া যাবে৷ তবে এখন যেটা ঘটছে, একজনকে দেখে উৎসাহিত হয়ে শুরু করেছেন আরেকজন, তাঁকে দেখে আরও একজন৷ ফলে গোটা কলকাতা শহর জুড়ে, শহরতলী অঞ্চলে, মফস্সলেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই সমাজসেবার উদ্যোগ৷ খাবার থেকে, ওষুধ থেকে, অক্সিজেন— সাধ্যমতো জোগান দিয়ে যাচ্ছেন তারা, ক্লান্তিহীন৷
এবং সম্ভবত এখানেই শেষ নয়৷ কারণ এর মধ্যেই প্রস্তাব উঠতে শুরু করেছে ভারচুয়ালি জোট বেঁধে এই সর্বব্যাপী সোশাল মিডিয়াতেই একটা যৌথ সংগঠন গড়ে তোলার, যেখানে সব ধরনের সাহায্যের খোঁজ পাওয়া যাবে৷ কারণ এক কোভিডেই যে সমস্যার শেষ নয়, সেটাও তারা বুঝতে পারছেন৷