পশ্চিমবঙ্গে আবার রাজনৈতিক সহিংসতা, খুন
২ মে ২০২৩কয়েক সপ্তাহ ধরেই ছোটখাট গন্ডগোল হচ্ছিল পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায়। তৃণমূল ও বিজেপির এই দ্বন্দ্বের আবহে অস্বাভাবিক মৃত্যু হল এক গ্রামবাসীর। মৃত বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়া (৬০) বাকচা পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপির বুথ সভাপতি ছিলেন।
বিজেপির অভিযোগ, বিজয়কৃষ্ণকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে। তাদের দাবি, সোমবার বিকেলে সপরিবার বেরিয়েছিলেন বিজেপির বুথ সভাপতি। তখন তাকে মারধর করে তুলে নিয়ে যায় তৃণমূলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা। গভীর রাতে বাড়ির কাছে পুকুরে বিজয়ের দেহ মেলে।
এর প্রতিবাদে রাতভর ময়না থানা ঘেরাও করে বিজেপি। আজ সকালে ময়নার বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দার নেতৃত্বে পথ অবরোধ হয়। তার অভিযোগ, "এখানকার সাবেক বিধায়ক সংগ্রাম দোলুই আছেন এই ঘটনার পিছনে। তার নেতৃত্বে তৃণমূলের মনোরঞ্জন হাজরা খুন করেছে আমাদের কর্মীকে।"
সোমবার বিজয়ের মতো নিখোঁজ ছিলেন বিজেপির বুথ কর্মী সঞ্জয় তাঁতি। সকালে তার খোঁজ মেলে। অবরোধে সামিল সঞ্জয়ের বক্তব্য, "বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের পঞ্চায়েত এলাকায় ১১ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিল। এই সমর্থন কেড়ে নিতে নেতা-কর্মীদের আক্রমণ করছে তৃণমূল। আমার মাথায় রড মেরেছে।"
এ সব অভিযোগে খারিজ করেছেন তৃণমূল নেতা সংগ্রাম দোলুই। শাসক দলের স্থানীয় নেতা মনোরঞ্জন হাজরার বক্তব্য, "পারিবারিক বিবাদের জেরে এই ঘটনা। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।" তৃণমূল মুখপাত্র, সাংসদ শান্তনু সেনের পাল্টা অভিযোগ, "মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে বিজেপি। কালিয়াগঞ্জের পুনরাবৃত্তি হয়েছে ময়নায়।"
দুপুরে বিজেপির বিক্ষোভে যোগ দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বুধবার ১২ ঘন্টার ময়না বনধের ডাক দিয়েছেন। তার সঙ্গে জেলার বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ হবে। এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন তিনি।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এ ধরনের হিংসা, মৃত্যু পশ্চিমবঙ্গ আগেও দেখেছে। সেই মেঘ কি ফের ঘনাচ্ছে? সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, "তৃণমূল বিভিন্ন দুর্নীতি মামলায় অস্বস্তিতে আছে। তার উপর সাগরদিঘির হার তাদের চিন্তায় ফেলেছে। তাই গড় ধরে রাখতে তারা মরিয়া চেষ্টা করবে। তার জেরে হিংসা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।"
গ্রামের ছবি শহরেও
শুধু গ্রাম নয়, শহর কলকাতা কি রাজনৈতিক হিংসা থেকে মুক্ত? কলকাতার উত্তর শহরতলি কাশীপুরে কার্যালয় দখল ঘিরে সোমবার গন্ডগোলে জড়াল তৃণমূল ও সিপিএম।
সিঁথি থানা এলাকার সেভেন ট্যাংকস লেনে তৃণমূলের একটি কার্যালয় রয়েছে। সোমবার মে দিবস উপলক্ষে বামেদের একটি মিছিল সেই এলাকায় আসে। সিপিএম কর্মীরা তৃণমূলের পতাকা খুলে ফেলেন। লাল পতাকা ও দলীয় সাইনবোর্ড লাগানো হয়। কার্যালয়ের তালা খুলে নতুন তালা লাগিয়ে দেন বাম কর্মীরা।
খবর পেয়ে ছুটে আসেন তৃণমূল কর্মীরা। উভয় পক্ষের বচসা থেকে হাতাহাতি শুরু হয়। কয়েকজন এই ঘটনায় আহত হন। বামেদের পতাকা, সাইনবোর্ড খুলে ফের দলীয় নিশান লাগিয়ে দেন শাসক দলের কর্মীরা।
বাম নেতৃত্বের বক্তব্য, এটা তাদের কার্যালয় ছিল। ২০১৬ সালে দখল নেয় তৃণমূল। পুলিশকে জানিয়ে লাভ হয়নি। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, এটা ছিল একটি পরিত্যক্ত জায়গা। সেখানে তারা পার্টি অফিস খুলেছে। সিপিএম কেন তার দখল নেবে?
আদতে যে কার্যালয় নিয়ে বিবাদ, তা রয়েছে পুরসভার জমিতে। সরকারি জমিতে দলের অফিস খোলা কি বেআইনি নয়? এই প্রশ্নের সদুত্তর নেই যুযুধান শিবিরে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মইদুল ইসলাম মনে করছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে দৌড়ে থাকবে এই দুই শিবিরই। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "পঞ্চায়েত ভোটে লড়াই হবে দুটো পুরনো দলের। তৃণমূল ও সিপিএমের। বিজেপি এখানে নতুন দল।"