1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে আরো শক্তিশালী বিজেপি?

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৩ অক্টোবর ২০১৭

তৃণমূল কংগ্রেসের দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিত মুকুল রায় দল এবং দলীয় সাংসদ পদ ছাড়লেন৷ ইঙ্গিত, বিজেপি যোগ দিতে পারেন তিনি৷ সত্যিই কি বিজেপিতে যোগ দেবেন মুকুল রায়?

https://p.dw.com/p/2lmIN
Indien Politiker Lalu Prasad Yadav
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/D. Chakraborty

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে জল্পনা অনেকদিন ধরেই ছিল যে, মমতা ব্যানার্জি যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেসে নিজের ভাইপো অভিষেককে তাঁর রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে ক্রমশই জায়গা করে দিচ্ছেন, মুকুল রায় তাতে ক্ষুব্ধ৷ এই ক্ষোভ আদৌ অসঙ্গত নয়৷ কারণ, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম এবং শুরু থেকেই দলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, যিনি দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জির একান্ত ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত বলে পরিচিত, তাঁর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতো৷ মমতার পর অভিষেককেই যদি দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মুখ হিসেবে তুলে ধরা হয়, তা হলে এতদিন দু'‌নম্বরে থাকা মুকুল নেমে যান তিন নম্বরে৷ এবং মমতার অবর্তমানেও মুকুলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বলে আর কিছু থাকে না৷

ফলে সম্প্রতি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তৃণমূলের রাজ্যসভা সদস্যপদ ছাড়ার কথা ঘোষণা করার সময় মুকুল রায় প্রত্যাশিতভাবেই মমতার নাম না করে তোপ দাগলেন ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতির বিরুদ্ধে, অভিষেকের নাম না করে সমালোচনায় মুখর হলেন রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের৷ যদিও মুকুল রায় তৃণমূল দল থেকে ৬ বছরের জন্য বরখাস্ত হলেও তাঁর ছেলে শুভ্রাংশু রায় এখনও দলেই আছেন৷ উত্তর ২৪ পরগণার বীজপুরের নির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক তিনি৷ রাজনীতিতে আনকোরা এবং অনভিজ্ঞ হয়েও বিধানসভা ভোটে শুভ্রাংশুর তৃণমূল প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাওয়া এবং জিতে আসাও তাঁর বাবার রাজনৈতিক পরিচিতি এবং যোগাযোগের সুবাদেই৷ সেই মুকুল রায়ই এবার পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলছেন৷ 

sudipta sengupta - MP3-Stereo

একইসঙ্গে মুকুল রায় বলেছেন, যে তিনি বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক দল বলে মনে করেন না এবং অতীতে একাধিক ক্ষেত্রে তিনি মমতা ব্যানার্জিকে পরামর্শ দিয়েছেন বিজেপির সঙ্গ না ছাড়ার জন্য৷ ইঙ্গিত স্পষ্ট, মুকুল রায় হয় নিজের অনুগামীদের নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেবেন, বা আলাদা রাজনৈতিক দল গড়ে বিজেপির সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবেন৷ এতে তৃণমূল কংগ্রেসের আদৌ কতটা ক্ষতি হবে?‌ বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার সুদীপ্ত সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলের এই প্রশ্নের উত্তরে পরিষ্কারই জানালেন, তৃণমূলের মতো ব্যক্তিকেন্দ্রিক দলে মুকুলের থাকা না থাকার কোনও প্রভাবই পড়বে না বলে তাঁর ধারণা৷ কারণ, তৃণমূলে মমতাই সব, তাঁকে কেন্দ্র করেই দল, তাঁকে দেখেই লোকে ভোট দেয়৷ তবে মুকুল রায় যদি শেষ পর্যন্ত বিজেপিতে যোগ দেন, তা হলে বিজেপির লাভ হতে পারে৷ কারণ, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রভাব বাড়তে থাকলেও সাংগঠনিক দক্ষতা বলে এখনও কিছু নেই৷ সেই জায়গায় মুকুল রায় বিজেপির পক্ষে প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন৷

কিন্তু মুকুল রায় বিজেপিতে গেলে সম্ভবত কিছু স্থিতাবস্থা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা, যার ইঙ্গিত পাওয়া গেল তৃণমূলের আরেক বরখাস্ত রাজ্যসভা সাংসদ কুনাল ঘোষের সাম্প্রতিক মন্তব্যে৷ কুনাল কার্যত বোমা ফাটিয়েছেন এমন দাবি করে যে, সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারির পর মুকুল রায় বেশ কয়েক দফায় দিল্লি ঘুরে আসার পর বলেছিলেন, বিজেপি নেতা, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তাঁকে না বাঁচালে তিনি এতদিনে জেলে চলে যেতেন৷ একদা ডাকসাইটে কংগ্রেস নেতা, পরবর্তীতে তৃণমূলে যোগ দেওয়া, তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে আবার তৃণমূলেই ফিরে আসা সোমেন মিত্র'র বাড়িতে মুকুল এ কথা বলেছিলেন বলে কুনাল দাবি করেন৷ সোমেন মিত্রও সেই দাবির সত্যতা স্বীকার করেছেন৷ এবং সিবিআই দপ্তরে নিয়মমাফিক হাজিরা দিয়ে বেরোবার সময় কুনাল সাংবাদিকদের সামনে কার্যত মুকুল রায়ের সমস্ত বিরোধী বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন৷ সেই সাংবাদিক সম্মেলনের ভিডিও কুনাল শেয়ার করেছেন নিজের ফেসবুক পেজে—

কাজেই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, মুকুল রায়কে নিয়ে বিতর্ক রাজ্য রাজনীতিতে এখনই শেষ হচ্ছে না৷ বরং মুকুল রায়ের বিজেপিতে যাওয়া-না যাওয়ার সিদ্ধান্ত আরও নাটকীয় কিছু পট পরিবর্তনের কারণ হতে পারে৷