পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নানা উদ্যোগ
২১ মার্চ ২০২১আর কিছুদিন পরই বিধানসভার ভোট হবে পশ্চিমবঙ্গে৷ এবার আট দফার এ ভোটাভুটি শুরু হবে ২৭ মার্চ, শেষ হবে ২৯ এপ্রিল৷ ফলাফল প্রকাশ হবে ২ মে৷ এবার ভোটার সংখ্যা প্রায় সাত কোটি৷ এত বিপুল ভোটার যেন ভোটকেন্দ্রে আসেন এবং নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন সেজন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন৷ সেক্ষেত্রে বাদ পড়ছেন না কেউই৷ বরং বিশেষ বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ উদ্যোগ চোখে পড়ছে৷
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য বিশেষ উদ্যোগ
সবার মত তৃতীয় লিঙ্গের ভোটও যে মূল্যবান, এবার সেই সচেতনতা অন্যদের মধ্যে প্রচার করতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন৷ উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসতের ১ নম্বর ব্লকের নির্বাচন কমিশনের আধিকারিক মঞ্জুলা বসুর উদ্দেশ্য ছিল তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের মধ্যে ভোটাধিকার নিয়ে সচেতনতা প্রচার৷
নির্বাচনী আধিকারিকের এমন অভিনব উদ্যোগ হিজড়াদের কাছেও বেশ অন্যরকম৷ মঞ্জুলার তিন বছরের একরত্তি মেয়ের জন্মদিনও তিনি এখানেই পালন করলেন৷ ভোটাধিকারের প্রচারের মাঝে কেক কাটার আনন্দ! হিজড়া দলের একজন হেমা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পঞ্চাশ বছর ধরে ভোট দিচ্ছি, কেউ ভোটদান নিয়ে বোঝাতে এর আগে আসেনি৷ কোনও প্রার্থীও এসে বলেনি কিছু৷ এই চেষ্টা ভালই লেগেছে৷’’
জগদিঘাটা কাজিপাড়ায় হেমার মতো আরো ১৮-১৯ জন একসঙ্গে থাকেন বহুদিন ধরে৷ ভোটও দিয়ে আসছেন অনেক দিন থেকে৷ হেমার দলের কাজল, সাথী, বাঁশী, মেঘনা, মধু সমাজের অংশ, স্বাধীন ভারতের নাগরিক৷ সমাজ বহু দিন ব্রাত্য রেখেছে তাঁদের৷ তাঁরা কিন্তু নিজেদের ব্রাত্য ভাবেননি৷ বরং তাঁরা স্পষ্ট করে বলেন, ‘‘নিজের ভোট নিজে দেব৷’’
বৃদ্ধাশ্রমে কমিশন
প্রবীণ মানুষদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে কমিশন৷ বিশেষভাবে সক্ষম এবং আশি বছরের বেশি বয়স হলে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়া যাবে৷ বাড়ি থেকে বেরিয়ে বুথে হাজির হতে হবে না৷ জেলায় ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে নয়া পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ পর্ব৷ প্রথম দফায় (২৭ মার্চ) রাজ্যের যেসব আসনে ভোট রয়েছে, সেখানে বাড়ি গিয়ে অশীতিপর এবং বিশেষভাবে সক্ষমদের ভোট নেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় দফায় (১ এপ্রিল) যেসব আসনে ভোট রয়েছে, সেখানে এই প্রক্রিয়া চালু হল গতকাল থেকে৷ কমিশন চাইছে, প্রবীণদের ভোটদানের হার বাড়ুক৷ তাই বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে একটি বৃদ্ধাশ্রমে পৌঁছে গিয়েছিলেন বারাসাত ১ ব্লকের বিডিও সৌগত পাত্র৷ তিনি কথা বলেন প্রবীণদের সঙ্গে৷ ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে আবাসিকদের সমস্যার কথা উঠে আসে৷
অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সঞ্জয় বসু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের যা নির্দেশ আছে, সেই অনুযায়ী কাজ হচ্ছে৷ আমরাও সেই অনুযায়ী কাজ করছি৷’’
জনসংযোগে পথনাটিকা, লোকসংস্কৃতি
আবালবৃদ্ধবনিতার কাছে পৌঁছতে সোশ্যাল মিডিয়ার পাশে পথনাটিকা আর লোকসংস্কৃতিকে পুরোদমে ব্যবহার করতে চাইছে কমিশন৷ ‘সিস্টেমেটিক ভোটার্স এডুকেশন অ্যান্ড পার্টিসিপেশন’ (এসভিইইপি) নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খুলে নির্বাচন সংক্রান্ত নানা বিষয় পোস্টার বা ভিডিও পোস্ট সহযোগে তুলে ধরা হচ্ছে ভোটারদের সামনে৷ পাশাপাশি জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় লোকশিল্পের মাধ্যমে কমিশন ভোটের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে৷ এ জন্য বাংলার প্রাচীন লোকশিল্প ‘খন পালাগান’ চরিত্র খনদাদু ও খনাদিদাকে প্রচারে নামানো হয়েছে৷ একইসঙ্গে কমিশনের হাত ধরে মাস্ক, স্যানিটাইজার নিয়ে নদিয়ার নির্বাচনী ম্যাসকট তথা রাজবিদূষক গোপালভাঁড়ও বার্তা দিচ্ছে, ‘‘মগজাস্ত্রে দিয়ে শান, সপরিবারে ভোট দান৷’’ এমনকি ভোটারদের ভোটসংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হচ্ছে পথনাটিকার সাহায্যে৷ কলকাতার ‘কও কথা’ নাট্যগোষ্ঠীর সেক্রেটারি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় নাটক দেখানো হচ্ছে৷ মানুষের খুব ভাল সাড়া পাচ্ছি৷ মানুষের কোনো কনফিউশন থাকলে নাটকের পরে আমাদের জিজ্ঞাসা করছেন৷’’
বাড়তি চাপ করোনার
কেরালা-মহারাষ্ট্রের পর এ রাজ্যে অতিমারীর দ্বিতীয় ঢেউ আসতে চলেছে৷ তাই নির্বাচন কমিশনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এই নিউ নর্মালে নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করে তোলা৷ রাজনৈতিক দলগুলির প্রচার, সভা, মিছিলে করোনা বিধি মানা হচ্ছে না কিছুই৷ ইতোমধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে নতুন ভোটারদের অনলাইনে ভোটার কার্ড দেওয়া শুরু হয়েছে৷ পরিবেশকর্মী থেকে চিকিৎসকেরা চিঠি দিয়েছেন কমিশনে৷ কমিশনের কাছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের দাবি, করোনাবিধি নিয়ে কোনোরকম আপোস নয়৷ ভোটপ্রচারে বিধি লঙ্ঘিত হলে প্রার্থীপদ বাতিল করা হোক৷ কিন্তু কতটা সফল হবে কমিশন সেটা সময়ই বলবে৷