পশ্চিমবঙ্গেও আতঙ্করাজ!
১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি–র দেওয়া যুবা পুরস্কার পেয়েছিলেন গদ্যকার সাদিক হোসেন, ২০১২ সালে৷ নবীন সাহিত্যিকদের মধ্যে আগামীর সম্ভাবনাকে চিহ্নিত করতে যে পুরস্কার দেওয়া হয়৷ সেই সাদিক হোসেন এখন সাহিত্য কেন, জীবনের মধ্যেও কোনও ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছেন না৷ প্রথমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি, অর্থাৎ এনআরসি এবং সদ্য নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সিএবি ভারতীয় সংসদে পাস হয়ে যাওয়ার পর লক্ষ লক্ষ ভারতীয় মুসলিমের মতো সাদিকও নিছক এখন একজন আতঙ্কিত নাগরিক৷ অদূর ভবিষ্যতে যাকে হয়ত নিজের ভারতীয়ত্বের প্রমাণ দিতে হবে৷
সাদিকের কিশোরী কন্যা, যার বয়স এখন হয়ত সবে ১০, সেও পারিপার্শ্বিক থেকে এই আতঙ্কের পরিস্থিতির কিছুটা আঁচ পেয়েছে৷ একদিন বাবার সঙ্গে বসে টিভিতে কার্টুন দেখার সময় সে এই অস্বস্তির কথা প্রকাশ করে৷ সেই ঘটনার কথা ফেসবুকে লিখেছিলেন সাদিক৷ এক কিশোরীর অস্বস্তি এবং আতঙ্কের কথা৷ যে পোস্টটি বহু লোক নিজেদের ফেসবুকের পাতায় শেয়ার করেন৷ তার পরই শুরু হয়ে যায় আক্রমণ৷
একদল লোক, যারা ঘোষিতভাবেই দেশের শাসকদল বিজেপি এবং তাদের হিন্দুত্ববাদী নীতির কট্টর সমর্থক, সাদিক এবং তাঁর কন্যার অসহায়তা নিয়ে রীতিমত মজা করতে শুরু করে! কেউ বলে, দেশ ছেড়ে তাড়াতাড়ি বিদায় হন! কেউ বলে, পাকিস্তানে বা বাংলাদেশে যখন হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হয়, তখন তোমাদের কেন কষ্ট হয় না? এক মহিলা এই বলেও আফসোস করেন, যে শুধু দেশ থেকে তাড়িয়েই দেওয়া হবে, কেন এদের গণকবর তৈরি হবে না!
ডয়চে ভেলে–কে সাদিক জানিয়েছেন, এখানেই এই বিদ্বেষ শেষ হয়নি৷ প্রকাশ্যে তাঁকে হুমকি এবং তাঁর মেয়েকে নিগ্রহের হুমকি দেওয়া শুরু হয়ে যায়৷ ক্রমশ আরও বিপন্ন হতে থাকেন সাদিক৷ তিনি এবং তাঁর পরিবারের সবাই খুব একা বোধ করতে থাকেন এবং নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ তার আগে পর্যন্ত কিন্তু সাদিক কলকাতায় এনআরসি, সিএবি–র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলে সবাইকে সামিল হওয়ার ডাক দিয়েছেন৷ কিন্তু এখন তাঁর মনে হচ্ছে, মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলো, অর্থাৎ তৃণমূল, সিপিএম-কেউ সেভাবে প্রতিবাদ করবে না৷ দু'একটা মিছিল হয়ত হবে, কিন্তু যে ধরনের গণ আন্দোলন দরকার ছিল, সেটা হবে না৷