1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কৃষ্ণাঙ্গ শিশুর মৃত্যুতে উত্তাল ব্রাজিল

৯ জুন ২০২০

একদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হটস্পটে পরিণত হওয়া, অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন৷ এরমধ্যেই রেসিফে শহরে পাঁচ বছরের কৃষ্ণাঙ্গ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সামনে নিয়ে এসেছে দেশটির গভীরে বিদ্যমান বর্ণবাদী আচরণকে৷

https://p.dw.com/p/3dTyR

ইতিহাসবিদ লারিসা ইবুমি লিখেছেন, ‘‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখন ব্ল্যাকলাইভসম্যাটার হ্যাশট্যাগ সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, ব্রাজিলে আমরা তখন সমাজের গভীরে জমে থাকা বর্ণবাদের কারণে আরেক কৃষ্ণাঙ্গ শিশুকে হারালাম৷ এই সমাজ কাঠামো এখনও কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের শ্বেতাঙ্গ মালকিনদের অধীনস্থ দাস হিসেবেই মনে করা হয়৷’’

ব্রাজিলের পেরনামবুচো রাজ্যের রাজধানী রেসিফে শহরে ৩ জুন মিগুয়েল সান্তানা দা সিলভা নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়৷ একটি বিলাসবহুল ভবনের পাঁচ তলায় মির্তেস রেনাটা সুজা নামের গৃহকর্মী কাজে যাচ্ছিলেন৷ করোনার লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় নিজের পাঁচ বছর বয়সী সন্তানকেও কাজে নিয়ে আসেন তিনি৷

এরপর সুজা তার চাকরিদাতা সারি গাসপার কর্তে রেয়ালের কথামতো ছেলেকে অ্যাপার্টমেন্টটিতে বসিয়ে রেখে কুকুরকে নিয়ে হাঁটতে বের হন৷ কিন্তু এর পরপরই মিগুয়েল মায়ের পিছু নিতে চাইলে রেয়াল শিশুটিকে একাই লিফটে তুলে দেন৷

সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে শিশুটি লিফটে নয় তলায় উঠে যায়, তারপর একটি জানালা দিয়ে ব্যালকনিতে বের হয়ে একসময় নীচে পড়ে যায়৷ সুজার চাকরিদাতার বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে৷ এরই মধ্যে ৩,৪৫০ ইউরো (প্রায় সোয়া তিল লাখ টাকা) সমমানের অর্থের বিনিময়ে জামিন পেয়ে গেছেন রেয়াল৷

ব্রাজিলের টেলিভিশন চ্যানেল গ্লোবোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মিগুয়েলের মা সুজা জানিয়েছেন, ‘‘আমার চাকরিদাতা প্রায়ই তার সন্তানদের আমার ওপর ভরসা করে ছেড়ে যান৷ দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি যখন আমার সন্তানকে তার ভরসায় রেখে এলাম তার সে ধৈর্যটুকু হলো না৷’’

মিগুয়েল মির্তেস রেনাটা সুজার একমাত্র সন্তান৷ এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে৷ এমনকি রাজনীতিবিদরাও #জাস্টিসাপোরমিগুয়েল হ্যাশট্যাগ দিয়ে এর ঘটনার বিচার ও শাস্তি দাবি করছেন৷ মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি অনলাইন পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন প্রায় সাত লাখ মানুষ৷

পপ গায়ক ইজা ইনস্টাগ্রামে তার ২৫ লাখ ফলোয়ারের সঙ্গে এ বিষয়ে নিজের মন্তব্য শেয়ার করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে মাগুয়েলের গল্পটি একটি বাস্তব ট্র্যাজেডি৷ মা মির্তেসকে যখন অসহনীয় যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, তখন তার বস টাকা দিয়ে জামিন নিয়ে বাড়িতে গেছেন৷ এর উলটো ঘটনা ঘটলে কী হতো?''

‘অভিশপ্ত উচ্চশ্রেণী’

ব়্যাপার, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট জয়েস ফার্নান্দেস ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘‘অভিশপ্ত অভিজাত শ্বেতাঙ্গ ও অধঃপতিত উচ্চশ্রেণীর কারণে একটি তাজা প্রাণ ঝরে গেলো৷ এরা আমাদের পূর্বপুরুষদের দাস বানানোর টাকায় সবকিছু কিনে ফেলতে চায়৷’’

মঞ্চে ‘প্রেতা রারা’ বা ‘বিরল কালো’ নামে পারফর্ম করেন ফার্নান্দেস৷ ব্রাজিলের কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের মধ্যে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়৷ ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনিও গৃহকর্মী ছিলেন৷ এরপর তিনি ‘এউ, ইমপ্রেগাদা ডমেস্টিকা’ (আমি গৃহকর্মী) নামে ফেসবুক পেজ ও একই নামে বই প্রকাশ করে বেশ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন৷ তারপর থেকে নারী অধিকার ও বর্ণবাদসহ নানা ইস্যুতে টেলিভিশন অনুষ্ঠানের নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছেন ফার্নান্দেস৷

দেশটির গৃহকর্মীদের সংগঠন ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ডমেস্টিক ওয়ার্কার্স এ ঘটনায় চাকরিদাতা কর্তে রেয়ালের অবহেলাকেই দায়ী করেছে৷ এক বিবৃতিতিে সংগঠনটি জানায়, ‘‘কৃষ্ণাঙ্গ ব্রাজিলিয়ানদের কী দৃষ্টিতে দেখা হয় এই ঘটনা তার অন্যতম উদাহরণ৷ দাসপ্রথার পরম্পরা এবং বর্ণবাদ থেকে যে আমাদের দেশ বের হয়ে আসতে পারেনি, এটিই তার প্রমাণ৷’’

২০১৩ সালের ১ জুন দেশটিতে গৃহকর্মীদের অন্য কর্মজীবীদের সমমর্যাদা দিয়ে আইন পাস হয়৷ এর আগ পর্যন্ত গৃহকর্মীদের দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিজীবী মনে করা হতো৷ তাদের তখন ওভারটাইম বা ছাঁটাইয়ে ক্ষতিপূরণের কোনো অধিকার ছিলো না৷

কিন্তু আইন পাস হলেও বাস্তবে গৃহকর্মীদের প্রতি ব্যাপক বৈষম্যের অভিযোগ রয়েছে৷ করোনা মহামারিতে এ সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে৷ রিও ডি জেনেইরোর প্রথম করোনায় মৃত্যু হয় এক ৬৩ বছর বয়সী গৃহকর্মী ক্লেওনিস গনসালভেসের৷ তার চাকরিদাতা ইটালিতে ছুটি কাটাতে গিয়ে মার্চ মাসে করোনা আক্রান্ত হন৷ কিন্তু সে তথ্য গৃহকর্মীর কাছে গোপন রাখা হয়৷ ১৯ মার্চ এক হাসপাতালে মারা যান গনসালভেস৷

মিগুয়েলের মৃত্যুর ঘটনার পর এমন নানা তথ্য এখন প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে৷

আস্ত্রিদ প্রাঙ্গে/এডিকে

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য