পাকিস্তানে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ব্লাসফেমি মামলা
১০ সেপ্টেম্বর ২০২০পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইনকে কেন্দ্র করে মামলা, হত্যা, সাজার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে৷ দেশটির বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা থেকে শুরু করে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরও এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে৷
হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান (এইচআরসিপি) জানিয়েছে গত এক মাসে ৪০টিরও বেশি এমন মামলা নিবন্ধন করেছে পুলিশ৷ বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, এই মামলাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে শিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে৷ বার্তা সংস্থা ডিপিএ-কে এইচআরসিপির চেয়ারম্যান মেহদী হাসান বলেন, ‘‘এটা (মামলা) অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, যা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উস্কে দিতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা৷''
সবশেষ গত বুধবার ব্লাসফেমি বা ধর্মনিন্দার অভিযোগে এক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে পাকিস্তানের আদালত৷ ৩৭ বছরের ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইসলাম নিয়ে ‘অন্যায়’ এবং ‘অবমাননাকর’ মন্তব্য করেছেন তিনি৷ যদিও তার আইনজীবীর দাবি, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে না চাওয়ায় তার বিরুদ্ধে ধর্মনিন্দার অভিযোগ করা হয়৷ প্রায় সাত বছর ধরে বিচার চলার পরে মঙ্গলবার নিম্ন আদালত তাকে ফাঁসির সাজা দেয়৷
ব্লাসফেমি আইন
পাকিস্তানে এই আইনের সূচনা হয় সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউল হকের অধীনে ১৯৮০ এর দশকে৷ এই আইন অনুযায়ী ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) কে অবমাননা করলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷ এছাড়া ইসলাম ধর্ম, পবিত্র কোরআনসহ নির্দিষ্ট ধর্মীয় ব্যক্তিদের নিন্দা বা অবমাননায় কারাদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে৷
যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআরএফ)-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৮০ জন এই ‘ব্লাসফেমির অপরাধে' কারাগারে আটক রয়েছেন৷ তাদের অর্ধেকই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি৷
তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সংখ্যালঘুদের দমনে এই আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে৷ অনেক ক্ষেত্রে এমনকি মুসলিমরাও ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে একজন আরেকজনকে ব্লাসফেমি মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছেন৷
বিচারের আগেই হত্যা
জুলাই মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানের পেশোয়ারে তাহির নামিস নামে একজনকে বিচার চলাকালে আদালতকক্ষের ভিতরেই গুলি করে হত্যা করা হয়৷ তার বিরুদ্ধে ব্লাসফেমির অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ ঐ ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় বিবৃতি দিয়ে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ হত্যাকারীকে ‘ধর্ম যোদ্ধা’ অ্যাখ্যা দিয়ে তার মুক্তির দাবিতে তখন মিছিলও করে কয়েক হাজার কট্টর সমর্থক৷
বিচার চলাকালীন এমন হত্যার ঘটনা এই প্রথম নয়৷ ১৯৮০-র দশক থেকে এখন পর্যন্ত ব্লাসফেমির অভিযোগ আনা হয়েছে এমন ৭৫ জন ব্যক্তি বা কোনো গোষ্ঠীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন৷
এইচআরসিপি চেয়ারম্যান মেহদী হাসান বলেন, বিচারাধীন ব্যক্তির ভাগ্য মানুষের করুণার উপর ছেড়ে দিয়ে রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন করছে৷
জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরও এ নিয়ে মুখ খুলেছে৷ সংস্থার মুখপাত্র রুপার্ট কলভিলে সাংবাদিকদের বলেন, ব্লাসফেমির অভিযোগ খুবই উদ্বেগজনক৷ কেননা, অভিযুক্ত ব্যক্তি সহিংসতার ঝুঁকিতে পড়ছেন৷ এ বিষয়ে পাকিস্তানের সরকারের কাছে তারা উদ্বেগ তুলে ধরেছেন বলেও জানান তিনি৷ ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে ব্লাসফেমি আইনের প্রয়োগ বাড়ছে উল্লেখ করে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার উস্কানিমূলক ঘটনা বন্ধে দেশটির নেতৃত্বের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তারা৷
এফএস/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি, রয়টার্স)
২০১৮ সালের ছবিঘরটি দেখুন...