পাকিস্তানে সংস্কৃতি
২০ মার্চ ২০১২পানা'র তুলনায় বড়ই দুর্ভাগা গনি দাদ৷ অনুষ্ঠান থেকে ফিরে আসার পথে সোয়াত এলাকার এই গায়ককে হত্যা করে তালেবান জঙ্গিরা৷ আর নৃত্য শিল্পী শাবানার ভাগ্যটা তো আরো খারাপ৷ নির্মমভাবে হত্যার পর বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে তাঁকে ঝুলিয়ে রাখা হয়৷ এখানেই শেষ নয়, সিডি'র দোকানগুলোতেও একের পর এক হামলা করে মানুষের মনে আতঙ্ক ধরিয়ে দিয়েছে তালেবান জঙ্গিরা৷
পশতু প্রধান প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া'র এই যখন অবস্থা, তখন প্রাণভয়ে অনেক শিল্পীই মাতৃভূমি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন অন্য কোথাও৷ কেউ কেউ ভয়ে বন্ধ করে দিয়েছে গান, নাচ বা নাটকের মঞ্চায়ণ৷ একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে সিনেমা হল৷
হামলার ভয়ে খাইবার পাখতুনখোয়া'র সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিরাট কেন্দ্র ‘নিশতার হল' ছয় বছর ধরে একটানা বন্ধ থেকেছে৷
তবে কি না আশার কথা হলো, গত ক'বছর ধরে এই প্রদেশে আবারো ফিরেছে সংস্কৃতির সুদিন৷ ২০০৮ সালে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি ক্ষমতায় আসার পর থেকে তালেবানে জঙ্গিরা পিছু হটতে শুরু করেছে৷
খুলেছে বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘নিশতার হল'৷ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গানের আসর একের পর এক বসছে সেখানে৷ শত শত মানুষের কোলাহলে আবারো ভরে উঠেছে নিশতার হল৷
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সাংস্কৃতিকমন্ত্রী মিয়া ইফতেখার হোসেন বলেছেন, তালেবান জঙ্গিদের বিরোদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ পশতুনরা সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ এক জাতি৷ ভয়ের পরিবেশ দূর করে তাদের জন্য আবারো তৈরি করা হবে নির্ভয় সমাজ৷
ধর্মীয় জঙ্গি গোষ্ঠী, তালেবান মিলিশিয়া, আত্মঘাতী আক্রমণ, পাল্টাপাল্টি হামলা - গত ক'বছর ধরে বিশ্বের দরবারে এই হলো পাকিস্তানের পরিচয়৷ তবে আশাবাদীরা বলছে, সেই পরিচয় মুছে দেশটি এবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে৷
পরিবর্তনের এই জোয়ার শুরু হলো খাইবার পাখতুনখোয়া থেকেই৷ জঙ্গি অস্ত্রের বিরোদ্ধে এখন সেখানে জেগে উঠছে রুবাব, বাঁশী আর অন্য সব বাদ্যযন্ত্রগুলো৷ আশাবাদীদের মতে, রক্ত ও মৃত্যুর বিরোদ্ধে শিল্পের এই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের সুর একদিন ছড়িয়ে যাবে পুরো পাকিস্তানে৷
প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ