পাকিস্তানের গদরে কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে শঙ্কার কালো মেঘ
২৩ ডিসেম্বর ২০২০পাকিস্তানের দৈনিক দ্য নিউজ-এর খবর অনুযায়ী, সে দেশের সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গদর ফেন্সিং প্রোজেক্টের কাজ শুরু হয়েছে গত সপ্তাহ থেকে৷ চীনের অর্থ সাহায্যে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ দ্য নিউজকে গদর বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নাসির খান কাশানি বলেন, কাঁটা তারের বেড়ার কাজ শেষ হলে বন্দর নগর গদরের নিরাপত্তার গতিপথ বদলে যাবে৷
পাকিস্তানের সবচেয়ে দরিদ্র এবং সবচেয়ে কম জনবহুল প্রদেশ বালোচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার ২৪ বর্গ কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার পরিকল্পনা করেছে৷ প্রকল্পটি ৫০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি)-র অংশ৷
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গদরকে ঘিরে গড়ে তোলা কাঁটা তারের বেড়ায় দুটি প্রবেশ পথ থাকবে৷ ওই দুই পথে অন্তত ৫০০ নজরদারি ক্যামেরা বসানো হবে বলেও জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম৷
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কাঁটাতারের বেড়ার কাজ শুরুর কারণে বালোচিস্তানে উত্তেজনা আরো বাড়তে পারে৷
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য-সম্পর্ক আরো জোরদার এবং মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে সিপিইসি প্রকল্প ঘোষণা করে চীন৷ এই প্রকল্প পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় গদর বন্দরকে একদিকে আরব সাগর এবং অন্যদিকে চীনের দক্ষিণাঞ্চল শিনজিয়াংয়ের সঙ্গে যুক্ত করবে৷ সড়ক পথ, রেল পথ তৈরি করে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াতে পারবে চীন৷
বালোচিস্তান আবার উত্তপ্ত হবে?
ইসলামাবাদ এবং পাঞ্জাব অন্যায়ভাবে বালোচিস্তানকে বঞ্চিত করছে, শোষণ করছে- এমন দাবি তুলে বঞ্চনার অবসানের জন্য কয়েক দশক ধরে কাজ করছে বালোচ একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ৷ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নির্মূল করতে ২০০৫ সালে সামরিক অভিযান চালিয়েছিল পাকিস্তান সরকার৷ কিন্তু তাতে বালোচ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নির্মূল হয়নি৷ সেই অভিযানের ১৫ বছর পরও পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায় বালোচ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা৷
২০১৮ সালে করাচিতে চীনের কনস্যুলেটে হামলা চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা৷এ বছরের শুরুর দিকে পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনে হামলা চালায় চার বন্দুকধারী বালোচিস্তান লিবারেশন ওয়ার (বিএলএ কর্মী) কর্মী৷ হামলায় দুই নিরাপত্তারক্ষী ও এক পুলিশসহ তিনজন মারা যায়৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, কাঁটাতারের বেড়ার কাজ শুরু করায় স্থানীয়রা ঘরছাড়া হওয়ার আশ্ঙ্কায় পড়েছে৷ তবে পাকিস্তানের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গদরের নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন খুব জরুরি৷
নিরাপত্তা উৎপাদন বিষয়ক মন্ত্রী জুবায়দা জালাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এর পেছনে নিরাপত্তাজনিত কারণ রয়েছে৷ এর মাধ্যমে স্থানীয়দের নিরাপত্তাও দেয়া হবে৷'' কিন্তু বালোচিস্তানের বাসিন্দা এবং পাকিস্তানের বিরোধী দলের রাজনীতিবিদদের একাংশ মনে করেন এই প্রকল্পের মাধ্যমে আসলে বালোচদের এলাকাছাড়া করা হবে৷
বালোচিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আব্দুল মালিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নিরাপত্তার কথা বলে ওরা আসলে স্থানীয় মানুষদের এলাকাছাড়া করার পাঁয়তারা করছে৷ আমরা অন্যান্য বিরোধী দলকে সাথে নিয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব৷''
বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা রহিম জাফর মনে করেন, ‘‘এই প্রকল্প জনগণের স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকারকে ক্ষুন্ন করবে৷ এটা অন্যায়, এটা সংবিধানবিরোধী৷ এই বেড়া স্থানীয়দের মনে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়াবে৷''
এস খান(ইসলামাবাদ)/ এসিবি