বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদ
১৮ ডিসেম্বর ২০১৩কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নিন্দা প্রস্তাব পাসের পর মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাই কমিশনার মিয়া আশরাসিয়াব মেহেদী হাশমি কুরেশিকে মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়৷ বিকেল ৫টার পর তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাজির হলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল তাঁর সঙ্গে কথা বলেন৷ জানা গেছে, তাঁর কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে লিখিত প্রতিবাদপত্র তুলে দেয়া হয়েছে৷ এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা নিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া বিবৃতি এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে আনা নিন্দা প্রস্তাব অত্যন্ত দুঃখজনক৷ এর বিরুদ্ধে কড়া এবং জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়েছে৷
এদিকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন পাকিস্তানের সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাস এবং দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত৷ তথ্যমন্ত্রী বলেন, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর শামিল৷ এজন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত৷ তাদের উচিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সহায়তা এবং তথ্য সরবরাহ করা৷
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়৷ এরপর গত শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিতৃতিতে বলে, ‘‘পাকিস্তান কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষেয়ে হস্তক্ষেপ করে না৷ এরপরও আমরা দেখছি, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করছে৷ বিচারের কারণে সেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বেড়ে গেছে৷'' বিবৃতিতে আরো বলা হয় ‘‘আমরা আশা করি বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণ সংহতির মূল্য বুঝবে এবং সহিংসতামুক্ত পরিবেশ বিরাজ করবে৷''
গত সোমবার পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়৷ পাকিস্তান জামায়াতের সংসদ সদস্য শের আকবর খান প্রস্তাব উত্থাপন করলে তাতে সমর্থন জানায় সরকারি দল মুসলিম লীগ৷ এছাড়া ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ, আওয়ামী মুসলিম লীগ, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কায়েদে আজম) ও জমিয়তে উলামা ইসলাম এই প্রস্তাবে সমর্থন জানায়৷ প্রস্তাবে বলা হয় বাংলাদেশের উচিত হবে না ৪২ বছর আগের পুরনো ক্ষতকে নতুন করে জাগিয়ে তোলা৷
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত সব ধরণের মামলা ‘পারস্পরিক সমঝোতা'র ভিত্তিতে প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়৷ পাকিস্তান জামায়াতের সংসদ সদস্য শের আকবর খান জাতীয় পরিষদে বলেন, ‘‘১৯৭১ সালে কাদের মোল্লা পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে৷ তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভুয়া৷'' তিনি বলেন, ‘‘অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কাদের মোল্লা দেশপ্রেমিকের পরিচয় দিয়েছেন৷''
তবে পাকিস্তান পিপলস পার্টি জাতীয় পরিষদে এধরণের প্রস্তাব পাসের বিরোধিতা করে৷ তারা বলে, পুরো বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়৷ ‘‘আমাদের উচিত হবে না একটি স্বাধীন এবং স্বার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে এধরণের প্রস্তাব পাস করা৷'' এছাড়া মুত্তাহিদা কওমী মুভমেন্ট এবং আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টিও প্রস্তাব পাসের বিরোধিতা করে৷
আর কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার পর পরই পাকিস্তান জামায়াত তার দেশের সরকারকে বাংলাদেশ আক্রমণের আহ্বান জানিয়েছে৷