কলকাতার চায়না টাউন
২২ অক্টোবর ২০১৩কলকাতার টেরেটি বাজার বললে কেউ হয়ত চিনতে নাও পারে, কিন্তু চায়না টাউন বললে যে কেউ চিনতে বাধ্য৷ যেখানে গেলে চীনের ঐতিহ্যবাহী খাবার চেখে দেখার সুযোগ হবে আপনার৷ ১৮ শতকে অভিবাসী হিসেবে চীনের মধ্যাঞ্চল থেকে ভারতে এসেছিলেন এসব চীনারা৷ কেউবা বন্দরে কাজ করার উদ্দেশ্যে, কেউ চামড়ার ব্যবসা, আবার কেউবা রেস্তোঁরার ব্যবসা খুলে বসেছিলেন৷ একসময় জমে উঠেছিল তাঁদের ব্যবসা৷ আর কলকাতায় চীনাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল এক লাখে৷
কিন্তু বর্তমান চিত্র ভিন্ন৷ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখন কলকাতায় চীনাদের সংখ্যা মাত্র দুই হাজার৷ ডয়চে ভেলেকে এর কারণ সম্পর্কে বলেছেন কলকাতার চীনা অধিবাসীদের তৃতীয় প্রজন্ম জিনা হুয়ান৷ একটি রেস্তোঁরার মালিক হুয়ান জানালেন, দশ বছর আগেও ব্যবসা ছিল জমজমাট, কিন্তু এখন সে অবস্থা নেই৷
মুদির দোকানের মালিক ডোমিনিক লির দোকানে পাওয়া যায় চীনের সুস্বাদু সস এবং অন্যান্য খাদ্য উপকরণ৷ কিন্তু চীনাদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তাঁর দোকানে বিক্রি কমে গেছে৷ লি একথাও জানান যে, চীনাদের মন্দির এবং গির্জাগুলো সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হতে বসেছে৷
ডয়চে ভেলেকে লি জানালেন, সরকারি কোনো সাহায্য না পাওয়ায় তাঁদের নিজেদের ব্যবসা বা অন্যান্য কাজ করতে হয়৷ এ কারণে তরুণ প্রজন্ম দেশের বাইরে লেখাপড়া করতে গিয়ে সেখানেই কাজ শুরু করে এবং স্থায়ীভাবে থেকে যাচ্ছে৷
ইন্ডিয়ান-চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পল চুং ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, তাঁর পিতামহ যখন পরিবার নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন তখন ছিল স্বর্ণ যুগ৷ কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম ভারতের নাগরিকত্ব পেলেও সরকারি কোনো সুবিধা পায়নি৷
১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের পর অনেকেই কলকাতা ছেড়ে চীনে চলে যায়৷ ৭২ বছর বয়সি চুং বললেন, তাঁদের আর চীনে ফিরে যাবার কোনো সম্ভাবনা নেই৷ তাই পরিস্থিতির পরিবর্তন করাটা জরুরি৷
এ বছরের শুরুতে চীনা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ যৌথভাবে সরকারের কাছে চায়না টাউনের সংস্কার এবং এটিকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাব দেয়৷ স্থানীয় সরকার এই চা প্রকল্পে এরই মধ্যে সম্মতি দিয়েছে৷ এমনকি, নতুন চায়না টাউন গড়ে তোলার বিষয়েও সম্মত হয়েছে৷
এ প্রকল্পের উদ্যোক্তা অনির্বান রায় ডয়চে ভেলেকে বললেন, পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য চায়না টাউনের চেয়ে কলতাকাতার চায়না টাউন একেবারেই স্বতন্ত্র এবং এর ঐতিহাসিক মূল্য অনেক বেশি৷ তাই এটাকে অবহেলা করা উচিত নয়৷
কবে হবে এই সংস্কার, পুরোনো ঐতিহ্য কি আদৌ ফিরে পাবে চায়না টাউন? সে অপেক্ষাতেই আছেন চায়না টাউনের অধিবাসীরা৷