পুলিশে করোনা-সংকট: বেশি আক্রান্ত ব্যারাকে
২৪ এপ্রিল ২০২০পুলিশ সদর দপ্তর বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশে ২১৮ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানায়৷ আর কোয়ারিন্টিনে আছে ৬৫২ জন৷
রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মনোয়ার হাসনাত শুক্রবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সারাদেশে আক্রান্ত আরো বেড়েছে৷ এখন ঢাকায়ই আক্রান্ত ২১৮ জন, যারা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আছেন৷ গতকাল(বৃহস্পতিবার) এখানে ছিল ১৮৮ জন৷ বাকিরা দেশের অন্য এলাকায় চিকিৎসাধীন৷’’
তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের যারা সরাসরি মাঠে দায়িত্ব পালন করেন, তাদের মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়৷ তাই তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন৷ তারা ব্যারাকের মেসে থাকেন৷ সেখানে তো সামাজিক দূরত্ব রাখা কঠিন৷ এটা একটা বড় সমস্যা৷’’
কোথায় এবং কারা বেশি আক্রান্ত
পুলিশে যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের দুই তৃতীয়াংশের বেশি ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) এলাকার৷ এরপরই গাজীপুরের অবস্থান৷ আক্রান্তের দিক দিয়ে তারপরে রয়েছে গোপালগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ৷ আর আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদমর্যাদার ডিএমপি'র একজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনারও (এডিসি) আছেন৷ বাকিরা কনেস্টবল, সহকারি সাব-ইন্সপেক্টর ও সাব-ইন্সপেক্টর পর্যায়ের৷
পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন ‘‘ফিল্ড লেভেলে দায়িত্ব পালন আক্রান্ত হওয়ার একটি বড় কারণ৷ যারা ফিল্ড লেভেলে কাজ করেন তাদের বড় একটি অংশ পুলিশ মেসে থাকেন৷ সেখানে থাকার যে ব্যবস্থা তাতে সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব হয় না৷ তাদের খাবার মান নিয়েও প্রশ্ন আছে৷আর পুলিশকে তো এখন চেকপোস্ট, লকডাউন, আসামি ধরা, করোনার লাশ দাফন, রোগীকে হাসপাতালে পাঠানো, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা- সব দায়িত্বই পালন করতে হয়৷ ফলে তাদের করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি অনেক বেশি৷’’
ডা. মনোয়ার হাসনাত বলেন, ‘‘রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে যারা আছেন তাদের মধ্যে সংকটাপন্ন কেউ নেই৷ এরই মধ্যে চারজন সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন৷ হাসপাতালটি আড়াইশ' বেডের৷ পুলিশের আরো কয়েকটি স্থাপনায় সেন্টার করা হচ্ছে৷ এখানে আইসিইউ সুবিধা আছে৷ ১৭টি ভেন্টিলেটার আছে৷ প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন৷ এর বাইরে দুটি হাসপাতালের সাথেও আমরা চুক্তি করছি৷’’
ডিএমপিতে যে কারণে বেশি
ডিএমপিতে কেন বেশি আক্রান্ত জানতে চাইলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘‘অন্যসব বিষয় বাদ দিলেও বাংলাদেশ পুলিশের মোট ফোর্স দুই লাখ ১০ হাজার৷ এরমধ্যে ডিএমপিতে আছে ৩৪ হাজার৷ ঢাকা সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা৷ ঢাকায় করোনা আক্রান্তও সবচেয়ে বেশি৷ আর সেই বিবেচনায় সারাদেশের মধ্যে ঢাকায়ই করোনায় আক্রান্ত পুলিশ বেশি৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা চাইলেই তো ব্যারাকের মেস থেকে সব পুলিশ সদস্যকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে পারবো না৷ তাই এখন চেষ্টা করছি যতদূর সম্ভব এর মধ্যে তাদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে৷ একটি অংশকে পুলিশের অন্য স্থাপনায়ও সরিয়ে নিচ্ছি৷ ব্যারাকের বেডগুলোর দূরত্ব বাড়াচ্ছি৷ ডাইনিং টেবিলে পাশাপাশি বসার ব্যবস্থা বাতিল করে দুই প্রান্তে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷’’ আর ডা. মনোয়ার বলেন, ‘‘আমরা প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারিন্টিনের ব্যবস্থা করছি৷ যাদের প্রয়োজন. তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসছি৷’’
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা
এরইমধ্যে পুলিশ সদস্যদের জন্য বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ যারা আক্রান্ত তাদেরসহ পুরো ফোর্সের মনোবল চাঙ্গা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তাদের ভিটামিন সি ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ ডিএমপির উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, ‘‘পুলিশ সদস্যদের জন্য মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস দেয়া হয়েছে৷ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পিপিই দেয়া হয়েছে৷ আর তাদের ব্যারাকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সামাজিক দূরত্বের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তাদের ওয়াশ রুম উন্নত করা হয়েছে৷ গরম পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে৷’’
তিনি আরো জানান, ‘‘যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের সুচিকিৎসার পাশাপাশি মনোবল চাঙ্গা রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে৷ তাদের পরিবারের সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ এবং আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ হাসপাতালে ওয়াইফাই সংযোগ ও বই দিয়েছি আমরা৷ আর আমাদের সিনিয়র অফিসাররা তাদের নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন৷’’
পুলিশ সদর দপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত আয়োজন রাখা হয়েছে৷ পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ ব্যক্তিগতভাবে তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন৷ আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের খোঁজখবরও নয়া হচ্ছে নিয়মিত৷
এদিকে বিভাগীয় পর্যায়েও পুলিশের জন্য করোনা সেন্টার খোলা হচ্ছে৷ এছাড়া দাগী আসামি না হলে পুলিশকে আসামি ধরায় নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বলে পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন৷