পেট ভরানোর লড়াইয়ে গুরবিন্দর
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০বড় রাস্তার একদিকে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস বা এইমস, উল্টোদিকে সফদরজঙ্গ হাসপাতাল৷ রাজধানী দিল্লির সব চেয়ে বড় দুইটি সরকারি হাসপাতাল৷ প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগী, তাঁদের আত্মীয় আসেন এখানে৷ তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ গরিব মানুষ৷ এইমসের এক নম্বর গেটের আশপাশের ছবিই পরিস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছে৷ রাস্তার পাশের ফুটপাথেই বসে কয়েকশ মানুষ৷ একপাশে দিল্লি সরকারের রেন বসেরা, মানে রাতে গরিবদের ঘুমনোর জায়গা৷ কিন্তু তাতে খাবার পাওয়া যায় না। পুষ্টিকর ভরপেট খাবার পাওয়া তো দূরের কথা৷ বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান থেকে আত্মীয় পরিবার নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসেছেন বহু মানুষ। দামি খাবার কিনে খাওয়া তাঁদের পক্ষে অসম্ভব।
এই অবস্থায় গত পাঁচ বছর ধরে গরিব রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের মুশকিল-আসান হয়ে দেখা দিয়েছে দিল্লি লঙ্গর সেবা সমিতি৷ দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালের সামনে বিনা পয়সায় তাঁরা দিচ্ছেন পুষ্টিকর খাবার৷ মাসে অন্তত ৫০ হাজার অভুক্ত মানুষের মুখে তাঁরা অন্ন তুলে দিচ্ছেন৷
এইমসের সামনে একটু প্রার্থনার পর শুরু হল খাবার বিতরণ৷ পরিবেশ বান্ধব প্লেটে চারটি রুটি, ডাল, সুজি, এক প্যাকেট বিস্কিট ও জল৷ এই জলও পরিশুদ্ধ৷ রাস্তায় পাত পেতে বসে গিয়েছেন অনেকে। সেখানে তাঁদের পাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা৷ আলাদা লাইনেও খাবার দেওয়া চলছে৷ বিপন্ন মানুষের মুখে ফুটে উঠছে তৃপ্তির হাসি৷ আর সেই তৃপ্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে সেবা সমিতির সেবকদের মুখেও৷
পাঁচ বছর আগে এইমসের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে লোকের অবস্থা দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন গুরবিন্দর সিং ভিকি৷ পেশায় ব্যবসায়ী৷ তাঁর মনে হয়েছিল, এই গরিব মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া উচিত৷ সেই থেকে শুরু৷ ডয়চে ভেলেকে গুরবিন্দর জানিয়েছেন, ''এখন দিল্লির এগারোটি হাসপাতালের সামনে আমরা লঙ্গর করে খাবার দিই৷ সব দিন পারি না। তবে প্রতি সপ্তাহে প্রতিটি হাসপাতালে এক থেকে দুই দিন বিনা পয়সায় রোগী ও আত্মীয়দের মুখে খাবার তুলে দিই৷ এইমস ও সফদরজঙ্গে আমরা ভিতরে ঢুকতে পারি না বলে বাইরেই সেবা করি৷ অন্য হাসপাতালে তো ভিতরে গিয়ে খাবার দিয়ে আসি৷ মাসে অন্তত ৫০ হাজার লোকের মুখে খাবার তুলে দিই৷ তিনশ জন স্বেচ্ছাসেবক আমাদের সঙ্গে আছেন৷'' পয়সা কোথা থেকে পান? গুরবিন্দারের জবাব, ''শুরু করেছিলাম নিজের পয়সায়৷ তারপর অনেক লোক পয়সা দিচ্ছেন, বেশ কিছু কোম্পানি সাহায্য করছে৷ আমরাও পরিধি বাড়িয়ে যাচ্ছি৷''
বাইরে তখন লাইন লম্বা হচ্ছে৷ গুড়গাঁও থেকে নিয়ে আসা মেশিনে তৈরি রুটি তখনও গরম৷ গরম ডালও৷ খিদেরমুখে তা অমৃতসমান৷ বিহার থেকে এসেছেন মাঝবয়েসী অলোক৷ হাসপাতালের ভিতরে চিকিৎসাধীন ভাই৷ তিনি বাইরে বসেছিলেন৷ লঙ্গর দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন লাইনে৷ সুস্বাদু খাবার খাওয়ার পর ডয়েচে ভেলেকে অলোক জানিয়েছেন, ''মনে মনে কৃতঞ্জতা জানিয়েছি এবং প্রার্থণা করেছি, ওদের ভালো হোক৷''
এই শুভকামনা, প্রার্থনাই তাঁদের মূলধন বলে জানিয়েছেন গুরবিন্দর৷ এইমসের সামনে প্রায় হাজার খানেক লোকের মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দেওয়ার পর তাঁর প্রার্থনা হল, ‘‘কামনা করবেন, যেন আরও লোকের মুখে অন্ন তুলে দিতে পারি৷ খিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কিছুটা যেন সাফল্য পাই৷’’