পোকার উপদ্রবে চাষির ফসল নষ্ট
২৬ এপ্রিল ২০১৭‘ফল আর্মিওয়ার্ম’ বা হেমন্তের কীট বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে এটাই জাক প্রিন্সলু’র শেষ অস্ত্র৷ চাষি হিসেবে তিনি গোটা সেচ ব্যবস্থায় সার ও কীটনাশক পাম্প করে পোকাগুলি ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন৷ এই নিয়ে ১০ রকম রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করলেন তিনি৷ কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না৷ পোকারা প্রায় অর্ধেক ভুট্টার গাছ ধ্বংস করে দিয়েছে৷
নামটি অবশ্য পুরোপুরি ঠিক নয়৷ এটা আসলে সত্যি কোনো কীট নয়, এক ধরনের ক্ষুধার্ত শুঁয়োপোকা, যা মথ হয়ে ওঠার আগে শস্য খেয়ে ফেলে৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকায় তার উৎস৷ তারা কীভাবে আফ্রিকায় এলো, তা স্পষ্ট নয়৷ কৃষি গবেষণা পরিষদের রজার প্রাইস বলেন, ‘‘কোনোভাবে পালিয়ে এসে এখানে জুটেছে৷ আফ্রিকার পশ্চিম থেকে মধ্যাঞ্চল হয়ে দক্ষিণেও ছড়িয়ে পড়েছে৷ এক বছরের মধ্যে নাইজেরিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায়ও এসে পড়েছে৷ গত বছরের জানুয়ারি মাসে প্রথম রিপোর্ট এসেছিল৷ এক বছর পর আমাদের এখানেও ছেয়ে গেছে৷ এগুলি অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷’’
‘ফল আর্মিওয়ার্ম’-এর ঝাঁক কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গোটা ফসল ধ্বংস করে দিতে পারে৷ বিশাল সংখ্যায় তারা এক খেত থেকে অন্য খেতে হানা দেয়৷ তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জেতা সহজ নয়৷ এলেস ফান খেলডার বলেন, ‘‘ফল আর্মিওয়ার্ম ভুট্টা গাছের কাণ্ডের গভীরে গর্ত করে৷ সেটাই হলো সমস্যা৷ বেশিরভাগ সময় চাষিরা অনেক দেরিতে তা টের পান৷ ততক্ষণে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়৷ এমনকি তাঁরা শক্তিশালী কীটনাশক ব্যবহার করলেও তা সব পোকা পর্যন্ত পৌঁছয় না৷ কারণ, সেগুলি গাছের অত্যন্ত গভীরে বসে থাকে৷’’
কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে রজার প্রাইস-ও বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন৷ তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক৷ আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এটা একটা হুমকি৷ বিশেষ করে চাষিদের যেখানে পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে কীটনাশক কেনার সামর্থ্য নেই৷ অথচ ভালো কীটনাশক, ভালো নজরদারি ছাড়া সব শস্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷’’
বছরের পর বছর ধরে চরম খরার ফলে এই অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তার মাত্রা এখনই কমে গেছে৷ বৃষ্টির অভাবে চাষি হিসেবে প্রিন্সলু তাঁর শেষ ফসল হারিয়েছেন৷ তাই এই ফসল তাঁকে বাঁচাতেই হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘খেতের মধ্য দিয়ে হাঁটলে ক্ষতির মাত্রা দেখতে পাই৷ তখন খুব আবেগ চলে আসে, কারণ, এটাই তো আমার রুজি-রুটি৷ সারা জীবনের পরিশ্রম হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ তাই আমার মনে খুব দুঃখ৷’’
কীটনাশকে কাজ হলো কিনা, আর্মিওয়ার্মের বিরুদ্ধে সংগ্রাম সফল হলো কিনা – এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি তা জানতে পারবেন৷
এলেস ফান খেলডের/এসবি