প্রজন্ম চত্বর
১৫ মার্চ ২০১৩রাজনৈতিক বিরোধিতার দীর্ঘ অতীত এখনো গুরুত্ব পেলে কিংবা যু্দ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে ঐতিহাসিকভাবেই বিপরীত অবস্থানের হলে কেউ কেউ এসব বিষয়ে নিজস্ব ধারণা বা কৌশলগত অবস্থান থেকে হয়তো সরবেন না৷ তবে যাঁদের মনে এসব নিয়ে ন্যূনতম সংশয়ও আছে তাঁদের জন্য প্রশ্নগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ স্বাধীনতার ৪১ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে, সুবিচারের দাবিতে তরুণ প্রজন্ম জেগেছে৷ এ অবস্থায় শুধু দলীয় অবস্থান থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লোটা অথবা কেবলই ভোটের রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়া-না-পড়ার ভাবনা মাথায় রেখে একটা আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করা কি মেনে নেয়া যায়?
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলো এই যুক্তিতেই প্রজন্ম চত্বর থেকে দূরে৷ দূরে থেকে আন্দোলনে সক্রিয়দের উদ্দেশে সমালোচনার তির ছুঁড়ছেন৷ লাকি আক্তার ডয়চে ভেলেকে দেয়া এ সাক্ষাৎকারে জানালেন, দেশের স্বার্থে চলমান আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান সবার প্রতিই রেখেছিল প্রজন্ম চত্বর, যারা এসেছেন তারা আছেন এবং থাকবেন বলেই আশা তাঁর৷ সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের সম্পৃক্ততা তিনি অস্বীকার করেননি, তবে সঙ্গে ‘প্রজন্ম চত্বর সরকার নিয়ন্ত্রিত নয়'– জোরালোভাবে এ দাবি করার পর বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী লাকি আক্তার বলেছেন, ‘‘প্রজন্ম চত্বরের দলীয়করণ হলে আমরা বসে থাকবোনা৷ ''
ফেনীর মেয়ে লাকি আক্তার৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি আদায়ে সোচ্চার হয়ে ছাত্র লীগের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন৷ তারপরও পিছিয়ে যাননি৷ সেসব আপাতত অতীত৷ গত ৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে লাকি আক্তার শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের, সেই সুবাদে যু্দ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রার্থী সব মানুষেরও৷ লাকি প্রজন্ম চত্বর থেকে সারা দেশ এবং পরে বিশ্বের সব বাঙালির কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন, ‘ক-তে কাদের মোল্লা.........তুই রাজাকার, তুই রাজাকার', ‘স-তে সাকা চৌধুরী.....তুই রাজাকার, তুই রাজাকার'- এমন স্লোগানে রাজাকারদের প্রতি ঘৃণার তীব্রতা শতগুণে বাড়িয়ে৷ এমন স্লোগানে হাজারো মানুষ গর্জে ওঠে শাহবাগে৷ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি আদায়ের আন্দোলনও পায় ভিন্ন মাত্রা৷ সেই থেকে লাকি বাংলাদেশের কারো কারো কাছে তরুণ প্রজন্মের ‘অগ্নি কন্যা', কারো কাছে ‘অগ্নিকণ্ঠী'৷
তবে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে যারা, স্বাভাবিক কারণেই তাদের চক্ষুশূল লাকি আক্তার৷ প্রাণহানির হুমকিও দেয়া হচ্ছে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে৷ এ ব্যাপারে সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? লাকি মনে করেন, সরকার চাইলেও সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেনা, সুতরাং জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব রোখার পাশাপাশি নিজেদের নিরাপদ রাখতেও সবাইকে সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে৷ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বেশ কিছু জায়গায় যে ইতিমধ্যে জামায়াত-শিবিরের অপতৎপরতা রোখা সম্ভব হয়েছে তার কিছু দৃষ্টান্তও তুলে ধরেছেন ইতিমধ্যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞারও পরিচয় রাখা লাকি আক্তার৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এ সাক্ষাৎকার শুনলে তাঁর প্রজ্ঞা এবং আদর্শিক দাবি আদায়ে দৃঢ়তা সম্পর্কে যে আরো নিশ্চিত হওয়া যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷
সাক্ষাৎকার: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন