প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্তে বাধা নেই
১৫ অক্টোবর ২০১৭শুক্রবার রাতে প্রধান বিচারপতি দেশ ছেড়ে অষ্ট্রেলিয়া যান৷ যাওয়ার আগে বলে যান, ‘তিনি সুস্থ আছেন এবং উচ্চ আদালতে সরকার হস্তক্ষেপ করছে৷' কিন্তু পরদিন শনিবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল এক লিখিত বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১ ধরনের দুর্নীতির কথা জানান৷ এও জানানো হয় যে, ওই দুর্নীতির অভিযোগের কারণে আপিল বিভাগের অপর পাঁচজন বিচারপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এই বেঞ্চে বসতে রাজি নন৷
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ওইসব অভিযোগের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘‘তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো দুর্নীতির৷ দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়ে তদন্ত করতে পারে৷'' তিনি আরো জানান,‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল হবে না কারণ সরকার ওই কনসেপ্ট গ্রহণ করেনি৷ ষোড়শ সংশোধনীর বিরুদ্ধে সরকার রিভিউ করবে৷''
প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগের কথা বলা হলেও তা বিস্তারিত জানানো হয়নি রেজিস্ট্রার জেনারেলের লিখিত বিবৃতিতে৷ বলা হয়েছে অর্থ পাচার এবং নৈতিক স্খলনের কথা৷
দুর্নীদি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত শুরু করতে পারে৷ এতে আইনগত কোনো বাধা নেই৷ বাংলাদেশে একমাত্র রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে তিনি পদে থাকাকালে কোনো মামলা বা তদন্ত করা যায় না৷ আর কারোর ব্যাপারে কোনো বাধা নেই৷ প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে দুদক তদন্ত করতে পারে৷''
তবে তিনি মনে করেন, ‘যেহেতু আপিল বিভাগের পাঁচ জন বিচারপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একই বেঞ্চে বসকে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তাই তাদের উচিত হবে সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে তদন্ত করানো৷ আর এই তদন্ত করতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে হবে না৷ সুপ্রিমকোর্ট স্বাধীনভাবে তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে৷'
গোলাম রহমান বলেন, ‘‘এর আগে সুপ্রিমকোর্ট চিঠির মাধ্যমে সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে তদন্ত না করতে নির্দেশ দিয়েছিল৷ এটা সুপ্রিমকোর্ট পারে না৷ তাই এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট হয়েছিল৷''
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার শাহাবুদ্দিন চুপ্পু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইনমন্ত্রী আইন জেনেই কথা বলেছেন৷ প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে কোনো আইনগত বাধা নেই৷'' এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্যের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘ আইনমন্ত্রী কী বলেছেন তা আমরা এখনো জানি না৷ প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্তের কোনো সিদ্ধান্ত কমিশন নিয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই৷''
এদিকে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে প্রমাণিত হলে তাঁর বিচারের প্রক্রিয়া কী হবে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে একটা শূন্যতা আছে, তবে রাষ্ট্রপতির কিছু নিজস্ব ক্ষমতা আছে৷ অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত হবে, তারপর আইন অনুযায়ী কার্যক্রম চলবে৷''
আর অ্যাটর্নি জেনালের মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘‘পাঁচজন বিচারপতি যদি এক সাথে বসতে না চান তাহলে বিচার বিভাগীয় অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে৷ তাই বিদেশ থেকে ফিরে তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে আদালতে বসতে পারবেন বলে মনে হয় না৷'' তকে যদি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করে তাহলে এটা হবে এই প্রথম সুপ্রিমকোর্টের কোনো ‘সিটিং বিচারপতি' অর্থাৎ পদে থাকাকালে কোন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত৷
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দীর্ঘ ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর সেই দায়িত্বে আসা বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে নতুনভাবে সাজাচ্ছেন৷ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, প্রধান বিচারপতির একান্ত সচিব আনিসুর রহমান, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী, হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার সৈয়দ দিলজার হোসেন, হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মো. সাব্বির ফয়েজকে দায়িত্ব থেকে সরিয়েছেন তিনি৷
রবিবার আনা এক রদবদলে সুপ্রিম কোর্টে দায়িত্বপালনরত ১০ জনসহ বিচার বিভাগীয় মোট ২৫ জন কর্মকর্তার কর্মস্থল পরিবর্তন হয়েছে৷ প্রধান বিচারপতির একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করে আসা আনিসুর রহমানকে পঞ্চগড়ে পাঠানো হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ করে৷
এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷