মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের কর্মসূচি
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪নতুন দিল্লির রাজনৈতিক মহলের ধারণা, ২০০২ সালের গুজরাট সাম্প্রদয়িক দাঙ্গায় নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে যে মোদীকে একসময় ভিসা দিতে অস্বীকার করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সেই ওবামা প্রশাসন আজ প্রধানমন্ত্রী মোদীকে লাল কার্পেট বিছিয়ে স্বাগত জানাতে তৈরি৷
২৭শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী মোদী ‘নতুন ভারতের' বক্তব্য তুলে ধরবেন জাতিসংঘে সাধারণ সভায়৷ পার্শ্ব বৈঠকে মিলিত হবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ্রা রাজাপাকসের সঙ্গে৷ প্রসঙ্গত, মোদী-হাসিনা বৈঠকের আলোচ্যসূচি তৈরি করতে সম্প্রতি নতুন দিল্লিতে এসেছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলি৷ প্রধানমন্ত্রী মোদী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি জানিয়ে গেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের সঙ্গে মৌলবাদী জামাতের যোগাযোগ রয়েছে৷ আর তার ফলে বহু মৌলবাদী জঙ্গি সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে গা ঢাকা দিয়ে আছে৷ এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের একটি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার টাকাও নাকি চোরাপথে যাচ্ছে জামাতের হাতে, যা দু'দেশেরই উদ্বেগের বিষয়৷ মোদীর কর্মসূচিতে অবশ্য আপাতত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বৈঠকের কোনো সম্ভাবনা নেই৷
৩০শে সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রী মোদী বৈঠকে বসবেন প্রেসিডেন্ট ওবামাসহ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে৷ যে সব দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, তাতে মোদী তাঁর রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক বিচক্ষণতার কতটা প্রমাণ দিতে পারবেন, সেদিকে তাকিয়ে আছে গোটা দেশ৷ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হলেও তার কেন্দ্রবিন্দু থাকছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ৷ তারপর আছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার মধ্যে আছে ভারতে জ্যাভেলিন ক্ষেপণাস্ত্রসহ উচ্চ-প্রযুক্তি সম্পন্ন প্রতিরক্ষা সমরাস্ত্র৷ এছাড়া আছে সন্ত্রাস-বিরোধী ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন, এনার্জি, মেধাস্বত্ত্ব, সাইবার রক্ষাকবচ, স্বাস্থ্য ও অভিবাসন৷
এর আগে ২৮শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে এক মিলন মেলায় যোগ দেবেন মোদী৷ অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় মিলিত হবেন যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-মার্কিন প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে৷ এঁদের অনেকেই শিল্প, বাণিজ্য ও প্রযুক্তিতে নাম কিনেছেন৷ ঐ মিলন মেলায় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ভিড় হবে বলে মনে করছেন উদ্যক্তারা৷ ইতিমধ্যেই ১৮ হাজার টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে, যার মোট অর্থমূল্য ১৬ লাখ ডলার৷
সামান্য চা-ওয়ালা থেকে স্বনির্ভর হয়ে কিভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতায় ১২৫ কোটির দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারলেন, সেই মোদীকে সামনে থেকে দেখার আগ্রহ সবার৷ তাই এদিন মোদী তাঁর চিরাচরিত হাফ হাতা কুর্তা, যা ‘মোদী কুর্তা' নামে পরিচিত, সেটা ছেড়ে বিশেষ ফ্যাশান দুরস্ত পোষাক পরবেন বলে ডেকে পাঠিয়েছেন মুম্বই-এর নাম করা ফ্যাশান ডিজাইনারদের৷ ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের পরা সেই একই ধরণের কুঁচকানো সুতির জামা-কাপড়, ভারতের অনাড়ম্বর জীবনযাপনের পরিচিত ছবিটা কি মোদী এবার তাহলে পাল্টাতে চান?
পাশাপাশি এ সময় হিন্দু দেবী দূর্গার আগমন উপলক্ষ্যে উদযাপিত ‘নবরাত্রি'-তে বহু ভক্তের মতো উপবাস পালন করেন হিন্দু জাতীয়তাবাদী এই নেতা৷ শোনা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে শত ব্যস্ত কর্মসূচি থাকলেও নিরামিষ খাবারও মুখে তুলবেন না মোদী৷ তাই তাঁর জন্য থাকছে ভিটামিনযুক্ত তরল লেমোনেড ও চা৷ আর রাষ্ট্রীয় ভোজ সভায় ‘চর্ব চোষ্য লেহ্য পেয়' না খেয়ে খাবেন শুধু ফলের রস৷