আফগানিস্তানের গুরুত্ব অটুট
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪আফগান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন দিল্লির সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে৷ ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে আফগানিস্তানের যে গুরুত্ব রয়েছে, মোদী সরকারের আমলে তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে৷ মোদী সরকারের এই বার্তা নিয়েই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ১০ই সেপ্টেম্বর থেকে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কাবুল সফর শুরু করেছেন৷ এ সফর এমন একটা সময়ে হচ্ছে, যখন ২০০১ সালে তালিবান শাসনের অবসানের পর সংঘর্ষ-দীর্ণ দেশটিতে এই প্রথম একটা গণতান্ত্রিক সরকার গঠন হতে চলেছে৷ কিন্তু গোল বেঁধেছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে৷
প্রেসিডেন্ট পদের দুই দাবিদার হলেন প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লা আবদুল্লা এবং প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আশরফ গনি৷ ইতিমধ্যেই ভোটের ‘অডিট' প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে৷ ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছেন উভয়েই৷ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট কারজাই-এর স্থলাভিষিক্ত হবেন৷ সুষমা স্বরাজের এই সফরের আর একটা তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, এ বছরের শেষ পর্যন্ত মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী সরে যাবার পর আফগানিস্তানে আবার তালিবান এবং আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির উত্থানের আশঙ্কার প্রেক্ষিতে কাবুল ও দিল্লির মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতা আরো মজবুত করা এবং আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভারতের ভূমিকা নিয়ে কাবুলকে আশ্বস্ত করা৷
আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই-এর বৈঠকে স্বভাবতই উঠবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক ইস্যু, যার শীর্ষে থাকছে আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তায় ভারতের সহযোগিতার বিষয়টি৷ দেশ থেকে ন্যাটো বাহিনী চলে যাবার পর আফগানিস্তানের দরকার হবে প্রচুর পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র, গুলি বারুদ ও অন্যান্য সামরিক উপকরণ৷ সেই চাহিদা মেটাতে দিল্লির ওপর অনেকদিন ধরেই চাপ দিয়ে যাচ্ছিল কাবুল৷ আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশিক্ষণ ইত্যাদিতে সাহায্য করলেও সরাসরি সমর সম্ভার সরবরাহ করার পক্ষপাতি নয় ভারত৷ কারণ ভারতের আশঙ্কা, তাতে পাকিস্তান এবং আফগান জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি আবার সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আফগানিস্তানের দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তিতে কারজাই-এর আপত্তির প্রসঙ্গ নিয়েও কথা হবে৷ কারজাই-এর আপত্তি প্রধান কারণ আফগানবাসীদের ঘরে মার্কিন সেনার হানা বন্ধ করতে হবে৷ এই চুক্তিতে সই করলে ১৫ হাজার মার্কিন সেনা থেকে যাবে আফগানিস্তানে৷ কারজাই সরকার মনে করে সাড়ে তিন লাখ আফগান সেনা দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় সক্ষম৷
যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পুনর্নির্মাণে ভারত বেশি আগ্রহী৷ ভারত ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানের পরিকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করেছে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার৷ ট্রেনিং দিচ্ছে আফগান কর্মীদের৷ ভারতের সহায়তায় যেসব পরিকাঠামো প্রকল্প গড়ে উঠছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, দক্ষিণ-পশ্চিম আফগানিস্তানে জারাঞ্জ থেকে ডেলারাম পর্যন্ত হাইওয়ে, আফগান সংসদ ভবন এবং আফগানিস্তানের সীমান্ত লাগোয়া ইরানের চাবাহার সমুদ্র বন্দর৷ এই বন্দরের গুরুত্ব দিল্লি ও কাবুলের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ এটাই হবে দু'দেশের মধ্যে প্রধান ট্রানজিট পয়েন্ট৷ পাকিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার না করে ভারত থেকে আফগানিস্তানে যাবার ‘স্ট্র্যাটিজিক' বন্দর, যে বন্দর মুক্ত বাণিজ্যে এলাকার দ্বারা পরিবেষ্টিত৷
আফগানিস্তানে ভারতের পরিসম্পদ এবং দূতাবাস ও কনসুলেট ভবনগুলির সুরক্ষা বাড়াবার দিকে প্রেসিডেন্ট কারজাই-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ৷ উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে হেরাট প্রদেশে ভারতীয় কনসুলেটের ওপর হামলা হয়৷ গত বছর পাকিস্তানের সীমান্ত সংলগ্ন জালালাবাদ শহরে ভারতীয় কনসুলেট ভবনে বোমা হামলা হয়৷ মারা যায় ন'জন, তার মধ্যে ছয়জন শিশু৷