প্রধানমন্ত্রী স্বপ্ন দেখালেন, নাকি দুঃস্বপ্ন
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫বাংলাদেশে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত রোগী বা রোগীর স্বজনদের প্রায়ই বলতে দেখি, ‘প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চাই'৷ বিএনপি আমলেও এমন হয়েছে৷ তখন সব মুশকিল আসান করার জন্য সবাই খালেদা জিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতেন, এখন সেই জায়গায় শেখ হাসিনা৷ দু'জন অনেক কারণেই দু'রকম, তারপরও তাঁদের কাছে অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যাশাটা একই থাকে৷
ছোট-বড় অনেক প্রত্যাশা পূরণও করেন তাঁরা৷ কখনো সকরুণ অনুরোধে, কখনো জোরালো সুপারিশে, কখনো বা গনদাবির চাপে৷ ক'দিন আগেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নেমে ‘গরম' করে দিয়েছিলেন দেশ৷ অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের অর্থবোধক, নিরর্থক এবং পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে হাওয়ার ‘গরম' বাড়ছিল৷ একসময় শুরু হলো প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা৷ প্রধানমন্ত্রী হস্তপক্ষেপ করলেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই হাওয়া ঠান্ডা৷ বিজয় মিছিল করতে করতে রাস্তার শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরলেন৷
দেশ থেকে বাল্যবিবাহ দূর করা এত সহজ নয়৷ এমন নয় যে প্রধানমন্ত্রী আজ মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে বলবেন আর কালই দেখা যাবে কচি কচি মেয়েরা বাল্যবিবাহের শঙ্কামুক্ত জীবনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখেই আনন্দমিছিল শুরু করেছে৷
দেশের খুব কম মানুষই বোধহয় বাল্যবিবাহকে জেনে-বুঝে মেনে নিয়েছে৷ ‘অশিক্ষা', অসচেতনতা, কুসংস্কার আর দারিদ্র্যের কারণে যাঁরা এই অভিশপ্ত পথে চলছেন, তাঁদের রুখতে অল্পবিস্তর কাজ হচ্ছে বৈকি৷
প্রায় সারা দেশেই চলছে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়াস৷ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে হচ্ছে৷ ব্যক্তির আন্তরিক উদ্যোগের নজিরও দেখছি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে৷
মানবাধিকার কর্মীদের হস্তক্ষেপে কোথাও কোথাও কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে রোধ করা সম্ভব হয়েছে৷
কখনো কখনো এমন বিয়ে করানোয় কাজীর হয়েছে সাজা৷
মানুষের মধ্যে সচেতনতা ধীরে হলেও বাড়ছে৷ নারীকে সম্মানের চোখে দেখার আহ্বান জানিয়ে সময়ের আগে বিয়ের প্রবণতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন তাঁরা৷
এ সব উদ্যোগের কিছু সুফল ইতিমধ্যে চোখে পড়তে শুরু করেছে৷ মাঝে মাঝে যে আমরা একটা-দু'টো গ্রামকে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করার খবর পাই বর্তমান পরিস্থিতিতে এইটুকুও কম কথা নয়৷
তারপরও বাল্যবিবাহ প্রত্যাশা অনুযায়ী কমছে না৷ সচেতন জনমানসে তাই হতাশা আছে৷
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এই সেদিনও বাংলাদেশেই বাল্যবিবাহের হার বেশি ছিল৷ রাতারাতি নিশ্চয়ই সব বদলে যায়নি, যাবেও না৷
তাই বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ বছর সময় নেবেন? শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে দেয়া ভাষণে তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বাল্যবিবাহ দূর করার আশ্বাস দিয়েছেন৷
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই আশ্বাসে আমরা খুব আশাবাদী হতে পারছি না৷ দেশের মানুষ প্রাচীন কাল থেকে জেনে আসছে ‘কামান চাইলে পিস্তল পাওয়া যায়'৷ স্বাধীনতার পরের ৪৪ বছরেও বহুবার দেখেছি, নির্বাচনের আগে ভোটপ্রার্থী ৫ বছরের মেয়াদে হাজার রকমের ‘হ্যান করেঙ্গা, ত্যান করেঙ্গা' অঙ্গীকার করেন, মেয়াদ শেষে বাকির খাতা প্রায় পূর্ণ থাকে৷ ডিজিটাল বাংলাদেশ যদি আগে সম্ভব হয়, কোনো বালক বা বালিকার জীবনবৃত্তান্তে বৈবাহিক অবস্থার জায়গায় আর ‘বিবাহিত' লিখতে হবে না – এমন সুদিন দেখতে কেন আমাদের এতকাল অপেক্ষায় থাকতে হবে?
জাতিকে স্বাভাবিক স্বপ্ন দেখান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী৷ ২০৪১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকা কোনো স্বপ্ন কিনা তা বুঝতে খুব কষ্ট হচ্ছে৷ আপনার এই আশ্বাস দুঃস্বপ্নময় আগামীর ইঙ্গিত হয়ে গেল না তো!