বাল্যবিবাহের শাস্তি
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪তাঁকে আর্থিক দণ্ড দেয়া হবে৷ মন্ত্রিসভা সোমবার সাজা ও জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে নতুন বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৪-র খসড়া নীতিগত অনুমোদন করেছে৷ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই আইন অনুমোদ হওয়ার পর, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান, ‘‘বিদ্যমান আইনে বাল্যবিবাহের অপরাধের জন্য এক হাজার টাকা জরিমানা ও সর্বোচ্চ তিন মাসের সাজার বিধান রয়েছে৷ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে এই আইন আরো কঠোর হচ্ছে৷ যাঁরা বাল্যবিবাহ করেছেন, যাঁরা বিষয়টি পরিচালনা করেন এবং যাঁরা বাল্যবিবাহের অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁরা এই দণ্ডের আওতায় পড়বেন৷ তবে অপরাধী নারী হলে শুধু আর্থিক দণ্ড হবে, কারাভোগ করতে হবে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘নতুন আইন অনুযায়ী, বাল্যবিবাহের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ সাজা হবে দুই বছর কারাদণ্ড এবং জরিমানা হবে ৫০ হাজার টাকা৷ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এই সাজা দেবেন৷ তবে বিয়ে বাতিলের বিষয় থাকলে তা করবে পারিবারিক আদালত৷'' তিনি বলেন, ‘‘ছেলের বয়স ২১ ও মেয়ের বয়স ১৮ বছরের কম হলে প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী তা ‘বাল্যবিয়ে' এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে৷''
১৯২৯ সালের সালে বাল্য বিয়ে নিরোধ আইন ১৯৮৪ সালে সংশোধন করা হয়৷ এই আইনে পুরুষের বিয়ের আইনসম্মত বয়স ন্যূনতম ২১ বছর এবং নারী ন্যূনতম ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়৷ বর্তমানে বিয়ের সঙ্গে জড়িতদের ১ মাস জেল ও ১০ হাজার জরিমানার বিধান করা হয়৷ মন্ত্রিপরিষদ সচিব আশা করেন নতুন আইন কার্যকর হলে বাল্য বিয়ে কমবে৷
বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বাল্য বিয়ে কমলেও ‘সেভ দ্য চিলড্রেন'-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ৬৬ শতাংশ নারীর ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক সার্ভে অনুযায়ী, বাংলাদেশে নারীর বিয়ের গড় বয়স ১৫ বছর ৩ মাস থেকে ২৪ বছর৷ আর যাঁদের ১৮ বছরের মধ্যে প্রথম বিয়ে হয়েছে তাঁদের শতকরা হার ৬৫ ভাগ৷ বাল্যবিবাহের শিকার শতকারা ৮০ ভাগ নারীরা স্বামী কতৃক নির্যাতিত হচ্ছেন৷ এছাড়া এ সব নারীর শতকারা ৬০ ভাগ শিশু জন্মগত নানাবিধ রোগ ও প্রতিবন্ধিতার শিকার হচ্ছে৷ বর্তমানে ৬৬ শতাংশের এক তৃতীয়াংশ মা ১৯ বছরের হওয়ার আগেই গর্ভবতী হচ্ছেন৷
নারী ও শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘১৮ বছরের আগে একটি মেয়ের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ পূর্ণতা পায় না৷ এ জন্যে ১৮ বছরের পর্যন্ত একটি মেয়েকে শিশু বা কিশোরী বলা যায়৷ বাল্য বিয়ে ও মাতৃত্ব একই সাথে অনেকগুলো সমস্যা সৃষ্টি করে সমাজকে জটিল করে তুলছে৷''
মানবাধিকার নেত্রী এবং বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নতুন এই আইন বাল্যবিবাহ নিরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে৷ কিন্তু এর সঙ্গে প্রশাসনের নজরদারি এবং ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷'' তিনি বলেন, ‘‘পাঠ্যক্রমেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে৷''