প্রবল বর্ষণে বানভাসি ভারত
২৮ জুলাই ২০১৭উত্তর গুজরাট এবং পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ-পশ্চিম রাজস্থানের বিভিন্ন জেলা টানা বৃষ্টির ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷ ত্রাণ ও উদ্দার কাজে নামানো হয়েছে সেনা ও বিমান বাহিনী৷ এছাড়াও নামানো হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী৷ এ পর্যন্ত নীচু এলাকাগুলি থেকে ৩০ হাজারেরও বেশি জলবন্দি লোকজনকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনা হয়েছে৷ চলতি বন্যায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৯৷ গুজরাটের সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত বনসকন্থা জেলার একটি গ্রামে বন্যার জল সামান্য সরে যেতেই বেরিয়ে পড়ে জলকাদায় মাখামাখি একটি পরিবারের ১৭ জনের মৃতদেহ৷ আশংকা এই রকম আরো মৃতদেহ হয়ত কাদার নীচে চাপা পড়ে আছে৷
এদিকে গুজরাটে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত্রি থেকে আবার তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়৷ চলবে রবিবার পর্যন্ত, জানিয়েছে গুজরাট আবহাওয়া দপ্তর৷ দক্ষিণ-পূর্ব উত্তর প্রদেশের নিম্নচাপের প্রভাবে গুজরাট অঞ্চলে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আশংকা৷ সামগ্রিক প্রভাবে গুজরাটের সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ এলাকায় আগামী দু’দিন টানা বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা৷ ওদিকে বন্যার ধ্বংসলীলায় বিপর্যস্ত গুজরাটের জনজীবন৷ সবরমতী নদীর জল পাড় ছাপিয়েছে৷ আমেদাবাদ বিপন্ন৷ গতকাল আমেদাবাদে ১৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়৷ আমেদাবাদ বিমানবন্দর তাই জলমগ্ন৷ এছাড়া রাজ্যে ২০৩টি বাঁধের মধ্যে ৩১টি বাঁধের জল বিপদসীমা পেরিয়ে গেছে৷ রাজ্যের জলমগ্ন পাঁচটি জেলার প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ স্কুল কলেজ বন্ধ রাখতে বলেছে৷ গুজরাটের সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে৷ বাতিল করা হয়েছে বহু ট্রেন৷ হেলিকপ্টার ও মোটরবোটে দূর দূরান্তের গ্রামগুলিতে দু'লাখ খাবার প্যাকেট বিলি করা হয়েছে৷ বানভাসি এলাকাগুলিতে পৌঁছে গেছে ৪০০ জনের এক মেডিক্যাল টিম৷ জলবাহিত সংক্রমণরোধে দেওয়া হচ্ছে ক্লোরিন ট্যাবলেট এবং ওআরএস-এর প্যাকেট৷ প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে গুজরাটের বন্যা প্লাবিত এলাকাগুলি আকাশপথে নিরীক্ষণ করেছেন৷ শুধু তাই নয়, অবিলম্বে ৫০০ কোটি টাকা ত্রাণ সাহায্য হিসেবে মঞ্জুর করেন তিনি৷ এবার রাজ্যের গ্রাম ও শহরাঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখতে রওনা হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি দল৷
রাজস্থানের তিনটি জেলা বন্যার দাপটে বিপর্যস্ত৷ রাজ্যের একমাত্র শৈলশহর মাউন্ট আবুতে বৃষ্টি হয়েছে ৭৩০ মিলিমিটার৷ কাছের দু'টি বাঁধ এবং বিখ্যাত নিকি লেকের জল উপচে পড়ে ভাসিয়ে দিয়েছে আশেপাশের এলাকা৷ বাড়ির ছাদে এবং গাছে আশ্রয় নেওয়া কয়েকশো মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে, হচ্ছে৷ মঙ্গলবার মধ্যরাতে জম্মু-কাশ্মীরে মেঘভাঙা বৃষ্টি নামে৷ তারপর আসে হড়কা বান৷ মারা যায় অন্তত জনা ছয়েক৷ জলের তোড়ে ভেসে যায় বহু ঘরবাড়ি, দোকানপাট৷ জলমগ্ন স্থানীয় জুমা মসজিদ৷ জাতীয় সড়ক সংলগ্ন বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত৷ আটকা পড়ে বহু মানুষ৷
অন্যদিকে পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িষার বন্যা পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক৷ দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের বাঁধের জল ছাড়া নিয়ে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের মধ্যে চাপানউতোর৷ বাঁধের জল ছাড়লে পশ্চিমবঙ্গের বহু এলাকা ডুবে যাবে৷ অথচ মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার কানায় কানায় পূর্ণ৷ সেক্ষেত্রে জল না ছাড়লে বাঁধ ফেটে যাবার আশংকা৷ তাতে ক্ষতির আশংকা আরও বেশি বলে জানিয়েছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ৷ ঝাড়খণ্ডে বেশি বৃষ্টি হলে সব জল নেমে আসবে দক্ষিণবঙ্গে৷ এমনিতেই এলাকার নদীগুলি জলে টইটুম্বুর৷ বাঁধ বাঁচাতে বিপুল জল ছাড়তে হবে দুর্গাপুর, ময়ুরাক্ষী ও কংসাবতী বাঁধ থেকে৷ সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ৷
গুজরাট এবং রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলিতে হঠাৎ হঠাৎ বন্যার সঙ্গে কি বিশ্বের উষ্ণায়নের কোনো যোগ আছে? কলকাতার আবহাওয়া দপ্তরের কর্তাব্যক্তি বি. দেবনাথের কাছে এই প্রশ্নটা রেখেছিল ডয়চে ভেলে৷ উত্তরে উনি বললেন, ‘‘ঘূর্ণাবর্ত যেটা ছিল সাধারণত, তার কিছুটা দক্ষিণের দিকে থাকে যেমন গুজরাটের বন্যা৷ ঐ ঘূর্ণাবর্ত একটু সরে উপরের দিকে উঠে রাজস্থান ও গুজরাটের দিকে গেছে৷ আরেকটা কথা, দেশের নির্দিষ্ট জায়গায় বৃষ্টি বা আবহাওয়ার পরিস্থিতি তো শুধু আমাদের দেশের আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে না৷ যেমন বার্মার দিকেও আরেকটা শক্তিশালি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে৷ সেটাও ওপরের দিকে উঠছে৷ সরে যাচ্ছে গুজরাট ও রাজস্থানের দিকে৷ এরই সার্বিক প্রভাব গুজরাট ও রাজস্থানের বন্যা৷
বিজ্ঞানিরা বলছেন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্বের উষ্ণায়ন যেটাকে বলে ‘এক্সট্রিম ইভেন্ট'৷ মানে যেখানে যেটা হবার নয়, সেখানে সেটা বাড়ছে৷ অর্থাৎ যেসব জায়গায় বৃষ্টি কম হয় সেখানে হঠাত করে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে৷ কম সময়ের মধ্যে বেশি বৃষ্টি৷ আর এটাকেই বলা হচ্ছে বিশ্বের উষ্ণায়নের কুফল, ডয়চে ভেলেকে জানান আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ বি. দেবনাথ৷