প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান
১ ফেব্রুয়ারি ২০১২সম্মেলনের সময় হরতাল
সংকটের শুরু থেকে শুধু আর্থিক বিষয়ে ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছেন ইউরোপীয় নেতারা৷ সুদৃঢ় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দেখা যায় নি৷ ফলে বাজারও স্থায়ীভাবে শান্ত হতে পারে নি৷ এবার কিন্তু তারা ভবিষ্যতের একটা রূপরেখা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন৷ ব্রাসেলস'এ এবারের ইইউ শীর্ষ সম্মেলন একাধিক কারণে মনে রাখার মতো৷ বেলজিয়ামে ২৪ ঘণ্টার হরতালের ফলে অনেক নেতা ঠিক সময় সম্মেলনস্থলে পৌঁছতেই পারেন নি৷ যাই হোক, এই প্রথম অ্যাজেন্ডার শীর্ষে ছিল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর বিষয়টি৷ বেকারত্ব, বিশেষ করে তরুণদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে৷ দ্বিতীয় বিষয়টির ক্ষেত্রে অবশ্য সম্পূর্ণ ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হয় নি৷ ভবিষ্যতে অস্বাভাবিক বাজেট ঘাটতি এড়াতে প্রতিটি সদস্য দেশের সংবিধানেই বিষয়টিকে স্থান দেবার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, ২৫টি দেশ তা মেনে নিতে প্রস্তুত৷ ব্রিটেন আগেই এর বিরোধিতা করেছিল, ডেনমার্কও সোমবার আচমকা পিছিয়ে এলো৷ আগামী মার্চ মাসে ২৫টি দেশ এই মর্মে আলাদা একটি চুক্তি স্বাক্ষর করবে৷ কেউ চুক্তি ভঙ্গ করলে ইউরোপীয় আদালতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগও আনা যাবে৷ তবে এগুলি নীতিগত সিদ্ধান্ত৷ খুঁটিনাটি বিষয়গুলি এখনো পুরোপুরি চূড়ান্ত হয় নি৷
এবারের সম্মেলন প্রসঙ্গে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জোসে মানুয়েল বারোসো বলেন, ‘‘আজকের বৈঠকের বেশিরভাগটা জুড়েই আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে আলোচনা করেছি৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেকারত্বের সমস্যা আমাদের ভাবাচ্ছে৷ এছাড়া মধ্য ও ছোট আকারের শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং অভ্যন্তরীন বাজারের সমস্যা নিয়েও কথা হয়েছে৷ একক বাজারকে যে আরও মজবুত করতে হবে, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করতে আমাদের সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে৷ আর্থিক অনটনের ফলে সরকার সরাসরি অর্থ ঢালতে পারবে না৷ ফলে কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে ইউরোপের সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে হবে৷''
কোণঠাসা ম্যার্কেল
জার্মানির চ্যান্সেলর ম্যার্কেল'কেই অনেকে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছে৷ আপাতত প্রবল চাপের মুখে আছেন তিনি৷ আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, বিশ্বব্যাংক ও পুঁজিবাজার ইউরোপ তথা জার্মানির কাছ থেকে আশা করছে, যে তারা গোটা ব্যবস্থায় আরও অর্থ ঢালুক, যাতে কোনো দেশ দেউলিয়া না হয়ে যায়৷ ডাভোসে অর্থনৈতিক ফোরামে ম্যার্কেল এই মর্মে আশ্বাসও দিয়েছিলেন৷ সোমবার ইইউ সম্মেলনের সিদ্ধান্তে তার কোনো প্রতিফলন দেখা গেল না৷ সমালোচকরা বলছেন, শুধু বাজেট ঘাটতি কমিয়ে পুঁজিবাজারকে শান্ত করা সম্ভব নয়, সক্রিয় পদক্ষেপের প্রয়োজন৷ কাঠামোগত সংস্কার করতে সময় চাই, তার আগে এখনই কিছু করে দেখাতে হবে৷ তাছাড়া প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ন্ত্রণের কাঠামো বাস্তবে আদৌ কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে, তা নিয়েও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছেন৷ ইউরোপের বর্তমান জটিল কাঠামোর সঙ্গে ২৫টি দেশের নতুন এই জোট যোগ করলে তার পরিণাম কী হবে, তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন৷
কিন্তু ম্যার্কেলের নেতৃত্বে ইউরোপীয় নেতাদের বর্তমান নীতি হলো – ঐকমত্যের ভিত্তিতে এমন জটিল সংকট মেটাতে ছোট ছোট পদক্ষেপের প্রয়োজন৷ অতএব অধৈর্য না হয়ে অপেক্ষা করতে হবে৷ তাছাড়া ইউরো মুদ্রার স্থিতিশীলতা ও ইউরোপীয় অর্থনীতির অবস্থা মোটেই তেমন আশঙ্কাজনক নয় বলে তারা মনে করেন৷ আপাতত ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও রাজনৈতিক নেতাদের এই সিদ্ধান্তগুলির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে৷ গোটা ব্যবস্থায় তারা অর্থ না ঢাললে সংকট আরও কঠিন হয়ে পড়তো৷ প্রশ্ন হলো, ভবিষ্যতেও ইসিবি এমন সহযোগিতা করবে কি না৷ সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্ব কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক