1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘প্রশ্নবিদ্ধ' পঞ্চায়েত যেতেই লোকসভা নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৪ আগস্ট ২০২৩

ইভিএম হ্যাক করে লোকসভা ভোটে কারচুপি করতে পারে বিজেপি- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের তোপে কী বলছেন তিনি? প্রশ্নবিদ্ধ পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরই কেন মুখ্যমন্ত্রীর মুখে লোকসভা নির্বাচনের কথা?

https://p.dw.com/p/4Umq5
গত মাসের পঞ্চায়েত ভোটে ব্যাপক সহিংসতার পাশাপাশি বুথ দখল, ভোট লুটের অভিযোগ উঠেছে
গত মাসের পঞ্চায়েত ভোটে ব্যাপক সহিংসতার পাশাপাশি বুথ দখল, ভোট লুটের অভিযোগ উঠেছেছবি: Subrata Goswami/DW

আগামী বছর ভারতে সাধারণ নির্বাচন৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ১০ বছরের শাসন নিয়ে রায় দেবে জনতা৷ এখন থেকেই শাসক ও বিরোধী শিবিরে ভোটকেন্দ্রিক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে৷ বিরোধীরা জোট গড়েছে, শাসক পক্ষ তাদের পুরনো জোটকে ফের উজ্জীবিত করেছে৷ এরই মধ্যে বড় ধরনের অভিযোগ করে বসলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিজেপির পরিকল্পনা এখন থেকেই শুরু হয়েছে৷ ইভিএম ‘হ্যাক' করার নানা রকম ব্যবস্থা করছে৷ আমরা কিছু তথ্য প্রমাণ পেয়েছি, কিছু খোঁজখবর করা হচ্ছে৷ এ ব্যাপারে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে আলোচনা হবে৷''

গবেষণাপত্রে দাবি

দিন দুয়েক ধরে সাধারণ নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে ভারতেআলোচনা চলছে। এক বাঙালি গবেষক তার গবেষণাপত্রে দাবি করেছেন, ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে শাসক দল কারচুপি করেছে৷ যেসব আসনে কম ব্যবধানে জয়-পরাজয় হয়েছে, সেগুলিতে বিজেপি কারচুপি করেছে বলে দাবি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সব্যসাচী দাসের৷

এর প্রেক্ষিতে বিজেপিবিরোধী নেতারা শাসকদলকে আক্রমণ করছেন৷ মমতা সেই সুরেই মন্তব্য করেছেন৷ পাল্টা আক্রমণের মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে৷ পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা ও কারচুপি নিয়ে তার সমালোচনা করছেন বিরোধীরা৷

মুখ্যমন্ত্রীকে তোপ

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন এনডিএ নাকি ইভিএম হ্যাক করার ব্যবস্থা করছে৷ ভোট চুরিতে তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি পেয়েছেন৷ এখন ওরা প্র্যাকটিস করছে আগামী বছরের ভোটে কী করে ইভিএম খাওয়া যায়! আবার এরাই বলছেন, ইভিএম হ্যাক হবে?''

গত মাসের পঞ্চায়েত ভোটে ব্যাপক সহিংসতার পাশাপাশি বুথ দখল, ভোট লুটের অভিযোগ উঠেছে৷ গণনার পর রাস্তায় পাওয়া গেছে ব্যালট পেপার৷ ব্যালট বাক্স ফেলা হয়েছে জলে৷ এমনকী আমলারা অনিয়ম করেছেন বলে আদালতে মামলা হয়েছে৷ পরাজয়ের আশঙ্কা করে এক তৃণমূল প্রার্থী ব্যালট খেয়ে ফেলেছেন, এমন আজব ঘটনাও ঘটেছে৷

‘ইন্ডিয়া' জোটের পরের বৈঠক ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে হওয়ার কথা৷ এই জোটে তৃণমূলের সঙ্গী বামেরা ইভিএম হ্যাকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না৷ কিন্তু একই সঙ্গে প্রশ্ন তুলছে, তৃণমূলের জমানায় ইভিএম-ও কি নিরাপদ?

সিপিএম নেতা সায়নদীপ মিত্র বলেন, ‘‘কন্ট্রোল ইউনিট বদল করে ইভিএমে কারচুপি করা যায়৷ কিন্তু যারা ব্যালট খায় তারা তো যন্ত্রও খেয়ে নেবে! ব্যালটের তুলনায় ইভিএমএ কারচুপি করার সুযোগ কম থাকে৷ কিন্তু এ রাজ্যে যেভাবে কারচুপি হয়েছে, তার কথা কেন বলছেন না?''

কারচুপি সম্ভব?

মুখ্যমন্ত্রীর দাবির ব্যাখ্যা দিয়ে তৃণমূলপন্থী পর্যবেক্ষক ভাস্কর সিংহ রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন বলেছে ইভিএম-এ কোনো কানেকটিভিটি করা যায় না৷ কিন্তু যে মার্কিন সংস্থা এটি তৈরি করেছে, তাদের ডেটা শিটে লেখা নেই যে, কোনো কানেকটিভিটি করা যাবে না৷ সুতরাং এই বৈদ্যুতিন যন্ত্রকে হ্যাক করা যেতে পারে৷''

বিজেপি নেতা ও পর্যবেক্ষক বিমলশঙ্কর নন্দ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যদি বাইরে থেকে ভোটযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করাই যায়, তবে কেন বিরোধীরা কেউ সেটা প্রমাণ করল না? তার মানে এটা পরাজিতের আগাম আর্তনাদ!''

'অভিযোগ আনলেও ইভিএম হ্যাকিং প্রমাণ করতে পারেননি বিরোধীরা'

কমিশনের চ্যালেঞ্জ

ইভিএম নিয়ে এই বিতর্ক নতুন নয়৷অভিযোগের জবাবে ২০১৭ সালে জাতীয় নির্বাচন কমিশন বিরোধীদেরকে কারচুপির প্রমাণ দিতে বলেছিল৷তবে প্রধান অভিযোগকারী আম আদমি পার্টি, সিপিএম, এনসিপি কেউ প্রমাণ দেয়নি৷ এরপর মাঝেমধ্যেই ইভিএম নিয়ে অভিযোগ শোনা যায় বিরোধী নেতৃত্বের মুখে৷

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে হেরে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি এই অভিযোগ করেন৷ তারপরও অনেকে করেছেন৷ কংগ্রেসও করেছে৷ কেন্দ্রে যে ক্ষমতায় থাকে না, তারাই এই অভিযোগ করে৷ অভিযোগ সত্যি হলে কেন নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ নিতে পারছে না?"

একই মত প্রবীণ সাংবাদিক আশিস ঘোষের। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "নির্বাচন কমিশনাররা বারবার এই দাবি খারিজ করেছেন, ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন। কিন্তু বিরোধীরা হ্যাকিং প্রমাণ করতে পারেননি।"