প্রস্তুতিহীন দিল্লিতে আক্রান্ত হতে পারেন কয়েক লাখ
১১ জুন ২০২০দিন কয়েক আগে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস বা এইমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া সাবধানবাণী শুনিয়েছিলেন। দিল্লিতে করোনারগোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে। আগামী মাসে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা শীর্ষে পৌঁছতে পারে।
বুধবার মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, ৩১ জুলাই নাগাদ দিল্লিতে সাড়ে পাঁচ লাখ লোক করোনায় আক্রান্ত হবেন। এ নিয়ে লেফটানান্ট গভর্নর অনিল বৈজলেরও কোনো বিরোধ নেই। তাঁর নেতৃত্বে বিপর্যয় মোকাবিলা কমিটিতে আলোচনা হওয়ার পর দিল্লির উপ মুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়াও সাড়ে পাঁচ লাখ লোকের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা বলেছেন।
বৈজল হচ্ছেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, কেন্দ্র ও রাজ্য দুই পক্ষই মনে করছে, হিসাবটাঠিক। এই সংখ্যা চিন্তা ধরানোর পক্ষে যথেষ্ট। সূত্রের খবর, এখন দিল্লিতে কড়াকড়ি শেষ করে দেওয়ার পরে করোনা দ্রুত ছড়াচ্ছে। সেই হিসাবে আগামী দশ-বারো দিনে সংখ্যাটা দ্বিগুণ হবে। তারপর দ্বিগুণ হতে আরও কম সময় লাগবে। এইভাবে চলতে থাকলে ৩১ জুলাই সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়াবে সাড়ে পাঁচ লাখে।
তবে শুধু করোনা রোগীর সংখ্যা নয়, সব চেয়ে বেশি চিন্তা পরিকাঠামো নিয়ে। কেজরিওয়াল বলছেন, হাসপাতাল, আইসোলেশন সেন্টার মিলিয়ে সেই সময় দেড় লাখ বেড লাগবে। হাতে আছে নয় হাজারের সামান্য বেশি। তা হলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে কী করে?
দিল্লিতে কেন্দ্র, রাজ্য, বেসরকারি হাসপাতাল মিলে মোট বেড আছে ৪৯ হাজারের মতো। তাই সব বেড নিয়ে নিলেও সমস্যা মিটবে না। আর সব বেড নিয়ে করোনার চিকিৎসা হলে তো অন্য কোনো রোগীর চিকিৎসা হবে না। সেটা সম্ভব নয়।
কেজরিওয়াল ঠিক করেছেন স্টেডিয়াম, ব্যাংকোয়েট হল, হোটেল নিয়ে সেখানে রোগীদের রাখা হবে। কিন্তু শুধু বেড বাড়ালেই তো হবে না। চিকিৎসক লাগবে, চিকিৎসা কর্মী লাগবে, অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে, ভেন্টিলেটার লাগবে, সুরক্ষা পোশাক লাগবে। কয়েকদিন আগেই সিসোদিয়া জানিয়েছিলেন, তাঁদের ভাঁড়ার খালি। তা হলে পয়সাই বা আসবে কোথা থেকে?
চিকিৎসক পার্থ প্রতিম বোস ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''নিঃসন্দেহে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়বে। এতে কোনো সন্দেহ নেই, করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেড বাড়াতে হবে। কিন্তু তার আগে সরকারি হাসপাতালের অবস্থা ঠিক করা হোক। সেখানে রোগীদের ভর্তি করা হোক।'' ডাঃ বোস একটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা বিভাগ দেখছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা হলো, সরকার ক্রমশ করোনা চিকিৎসায় বেসরকারি হাসপাতালের ওপর বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।
আসলে সরকারি হাসপাতালে প্রায় অর্ধেক বেড খালি পড়ে আছে। অথচ, সামাজিক মাধ্যমে চোখ রাখলেই দেখা যাবে, করোনার লক্ষণ নিয়ে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে জায়গা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। করোনা পরীক্ষারও সংখ্যা বেঁধে দেওয়া আছে বলে অভিযোগ। ফলে করোনা পরীক্ষা করাতেও লোকে বিপাকে পড়ছেন। তারপর করোনা হলে শুনতে হচ্ছে, হাসপাতালে ঠাঁই নেই। সূত্র জানাচ্ছে, পরিকাঠামো নেই বলেই হাসপাতাল বেশি রোগী ভর্তি করতে চাইছে না।
দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রক কভার করেছেন প্রবীণ সাংবাদিক অবন্তিকা ঘোষ। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''আইসোলেশন বেডের চাহিদা খুবই বাড়বে। তবে যতক্ষণ মৃত্যুহার না বাড়ে, ততক্ষণ করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও চিন্তার কিছু নেই।'' আবার পার্থ প্রতিম বোসের মতে, মৃত্যুহার এক থাকলেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে তখন মৃত্যুর সংখ্যাটাও স্বাভাবিকভাবে বেশি দেখাবে। আজ তিরিশ হাজার আক্রান্ত তার মধ্যে তিন বা সাড়ে তিন শতাংশ মারা গিয়েছেন। সংখ্যাটা সাড়ে পাঁচ লাখ হলে তার তিন শতাংশ লোক মারা যাবেন।
এর মধ্যে আবার একটা রাজনীতিও আছে। কেজরিওয়াল ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্য সরকারি হাসপাতালে কেবল দিল্লির লোকের চিকিৎসা হবে। বৈজল সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছেন। প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''কেজরিওয়াল খুব বুদ্ধিমান রাজনীতিক। তিনি বলছেন, কেন্দ্র যা বলছে, তাই তিনি মানবেন। এরপর ব্যর্থতার দায় তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবেন।''
করোনাকালে রাজনীতি কম দেখেনি ভারত। করোনার শুরুর সময়ে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস ভাঙিয়ে সরকার ফেলে দিয়ে নিজের সরকার গঠন করে বিজেপি। গুজরাটে তারা আবার কংগ্রেসকে ভাঙিয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, এ বার বিজেপি রাজস্থানে সরকার ভাঙার খেলায় নেমেছে। সব কংগ্রেস বিধায়ককে একটা রিসর্টে নিয়ে রাখা হয়েছে।
লোকে বুঝে গেছে, করোনা হোক বা না হোক এই রাজনীতি চলবে। কিন্তু তাতে তো দিল্লিবাসীর আতঙ্ক কাটছে না। প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যাঁদের পয়সা আছে, তাঁরা বেসরকারি হাসপাতালে বা বাড়িতে চিকিৎসা করছেন। যাঁদের সেই টাকার জোর নেই, তাঁরা? তাঁদের খুব একটা ভরসা যোগাতে পারছেন কি নরেন্দ্র মোদী বা অরবিন্দ কেজরিওয়াল?