মানব-সৃষ্ট ট্র্যাজিডি
১৫ অক্টোবর ২০১৩২০০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার বেগে ভারতের ওড়িষা ও অন্ধ্র প্রদেশ উপকূলে আছড়ে পড়া সামুদ্রিক ঝড় পাইলনে মারা গেছেন ২৫ জন, তার মধ্যে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ায়৷ পাশাপাশি মধ্য প্রদেশে মন্দির ট্র্যাজিডিতে মারা গেছেন এখনও পর্যন্ত ১১৫ জন পুণ্যার্থী৷
হিসেব দুটো ঠিক মেলানো যাচ্ছে না, তাই না? কী করে সম্ভব হলো এটা? সম্ভব হলো, প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে এবার সতর্ক ছিল সরকার আগে থেকেই৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সফল সমন্বয়, প্রয়োজনীয় বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা এবং আবহাওয়া দপ্তরের সঠিক পূর্বাভাষই এই সাফল্যের চাবিকাঠি৷
আবহ দপ্তরের সতর্ক বার্তা পাবার দু-এক দিনের মধ্যেই ৯ লাখ লোককে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপদ স্থানে৷ তাঁদের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়৷ দুর্গত এলাকাগুলির রাস্তাঘাট থেকে ভাঙা গাছপালা সরিয়ে ত্রাণ সামগ্রী যাতায়াতের পথ পরিষ্কার রাখা হয়৷ ওড়িষার ত্রাণ কমিশনার পি.কে মহাপাত্র জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন স্তরের উঁচু তলা থেকে নীচু তলার অফিসার ও কর্মচারীদের দায়বদ্ধতা চিহ্নিত করে দেন৷ পূর্ব-প্রস্তুতির অন্যতম শর্ত এই দায়বদ্ধতা৷ তাঁর কড়া নির্দেশ, কর্তব্যে গাফিলতি হলে কঠোর শাস্তি পেতে হবে৷ ফলে সব কাজ সুষ্ঠুভাবে হয়৷ জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয় ন্যূনতম৷ ১৯৯৯ সালে অনুরূপ সামুদ্রিক ঝঞ্ঝায় পূর্ব-প্রস্তুতি না থাকার কারণে মারা গিয়েছিল বহু লোক৷
মধ্য প্রদেশের দাতিয়া জেলায় স্থানীয় সিন্ধ নদীর তীরে দুর্গা মন্দিরে দশমির দিন পুণ্যার্থীদের বিশাল সমাগম হয়৷ ঐ মন্দিরে যেতে গেলে পার হতে হয় সিন্ধ নদীর ওপর নির্মিত একটি সেতু৷ পার হতে গিয়ে কেউ গুজব ছড়ায় ভিড়ের চাপে সেতুটি ভেঙে পড়ার উপক্রম৷ আতঙ্কে প্রাণ বাঁচাতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় পুণ্যার্থীদের মধ্যে৷ ভিড়ে পদপৃষ্ট হয়ে মারা যায় ১১৫ জন, তার মধ্যে ১৭টি শিশু৷ এই ধরণের মানব-সৃষ্ট বিপর্যয় নতুন নয়৷ এর আগেও বহুবার এই ধরণের দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ ঐ একই এলাকায় ২০০৬ সালে জলস্ফীত সিন্ধ নদীতে ভেসে গিয়েছিলেন জনা পঞ্চাশেক তীর্থযাত্রি৷ তাঁদের দ্রুত উদ্ধার করার ব্যবস্থা ছিল না সেখানে৷ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির আরো দৃষ্টান্ত আছে রাজস্থানের যোধপুর, উত্তরাখন্ডের হরিদ্বার এবং দক্ষিণের সাবারিমালায় পদপৃষ্ট হয়ে মারা যান বহু লোক৷ তবু কর্তৃপক্ষ তা থেকে আদৌ শিক্ষা নেয়নি৷
জানা কথা, ধর্মস্থানগুলিতে মাত্রাতিরিক্ত ভিড় হয়৷ সংকীর্ণ প্রবেশপথ বা আবদ্ধ জায়গায় এত লোকের ভিড়ে গুজব ছড়ালে বা না ছড়ালে যে কোনো মুহূর্তে বিপদ ঘটার আশঙ্কা থাকে৷ বিপদকালে মানুষের বিচারবুদ্ধি লোপ পায়৷ সেজন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আগে থেকে না নেয়াটা ক্ষমার অযোগ্য৷
এদিকে এই মর্মান্তিক মানব-সৃষ্ট বিপর্যয় নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দোষারোপ৷ সব বিপর্যয় বা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যা হয়, রুটিন মাফিক তদন্ত কমিটি আর কিছু আর্থিক ক্ষতিপূরণ৷ কমিটির রিপোর্ট ধামাচাপা পড়ে যায় অথবা রিপোর্টের সুপারিশ দিনের আলো দেখতে পায় না ৷ অপেক্ষা করতে থাকে আরোকটা বিপর্যয়ের জন্য৷