প্রাগ মানেই চার্লস ব্রিজ
২১ জুলাই ২০১৭চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগ৷ শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে ভলটাভা নদী৷ নদীর উপর আছে ১৫টি সেতু, চার্লস ব্রিজ যার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো৷ ৫০০ মিটার লম্বা এই সেতুটি ইউরোপের দীর্ঘতম গথিক স্থাপত্যের ব্রিজ৷ ১৩৫৭ সালে সম্রাট চতুর্থ চার্লস এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন – তাঁরই নামে এই সেতু৷
স্ডেনেক বার্গম্যান চার্লস ব্রিজ মিউজিয়ামটি পরিচালনা করেন৷ মানানসই আবহের জন্য ভলটাভা নদীর প্রাচীন জাহাজগুলোকে সারিয়ে তোলার ব্যবস্থা করেছেন তিনিই৷ ফলে দর্শকরা নদী থেকেও চার্লস ব্রিজের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন৷
প্রাগের ‘মালা স্ত্রানা' বা ‘ছোট কিনারা' এলাকার প্রাগ দুর্গকে ঐতিহাসিক পুরনো শহরের সঙ্গে যুক্ত করে এই চার্লস ব্রিজ৷ স্ডেনেক শোনালেন সে কাহিনি: ‘‘কিছুদিন আগে চেক জনগণকে জিগ্যেস করা হয়েছিল, তারা কোন ঐতিহাসিক চরিত্রকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন৷ চেকরা বলেন, ‘সম্রাট চতুর্থ চার্লস', যিনি চার্লস ব্রিজের মতো স্থাপত্য সৃষ্টি করেছিলেন৷''
রক্ষাকর্তা
পুরনো প্রাগে চার্লস ব্রিজের তোরণটি আসলে একটি প্রতীকী বিজয়তোরণ – এককালে বোহেমিয়া রাজ্যের নৃপতিরা এই পথ দিয়ে অভিষেকে যেতেন৷ স্ডেনেক জানালেন: ‘‘প্রাগ শহরের পেট্রন সেন্ট বা রক্ষাকর্তা হলেন এরা: সম্রাট চার্লস, রাজা ভেনসেস্লস আর সিগিসমুন্ড, প্রকপ ও ভিটাস, এই তিন সন্ত৷''
প্রতিদিন প্রায় ৩০,০০০ মানুষ চার্লস ব্রিজের ওপর দিয়ে হেঁটে যান – প্রধানত টুরিস্ট৷ এশিয়ার বর-কনেদের কাছে চার্লস ব্রিজ বিয়ের ফটো তোলার খুব ভালো লোকেশান৷ আবার ব্রিজের ওপর নিজের ছবি আঁকানো যায়৷ ভোলটাভা নদীর ওপর নৌকাবিহারও খুব প্রিয়৷
চার্লস ব্রিজকে সাজানো হয়েছে মোট ৩০টি মূর্তি দিয়ে – তার মধ্যে যিশুর বাছাই ১২ জন শিষ্য, নানা দেবদূত ও খ্রিষ্টীয় পণ্ডিত ইত্যাদিরা আছেন৷ তবে এই মূর্তিগুলো সবই কপি; আসল মূর্তিগুলো মিউজিয়ামে রাখা আছে৷ তার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো মূর্তিটি আবার পাথরের তৈরি নয়৷ স্ডেনেক শোনালেন, ‘‘এই সেতুর পেট্রন সেন্ট হলেন সন্ত নেপোমুক৷ ১৬৮৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর স্ট্যাচুটি বসানো হয়৷ নেপোমুক হলেন ইউরোপ, এমনকি সারা বিশ্বের সব সেতুর রক্ষাকর্তা৷ আমার তাঁকে বিশেষ পছন্দ, কেননা তিনি যারা জল বা নদীতে কাজ করে, তাদের রক্ষা করেন৷''
পর্যটক
মালা স্ত্রানার তীরে টুরিস্টদের ভিড়৷ এখান থেকে চার্লস ব্রিজকে তার ধনুকের আকারের ১৬টি খিলান সহ সম্পূর্ণ দেখা যায়৷ পর্যটকদের প্রতিক্রিয়া কী? পর্তুগালের এক পর্যটক বলেন, ‘‘ভোরবেলা কিংবা সন্ধ্যায় আমার বিশেষ ভালো লাগে৷ মানুষজন ছাড়া বেশ সুন্দর, শান্ত একটি জায়গা৷'' এক মার্কিন টুরিস্ট মনে করেন, ‘‘চার্লস ব্রিজের ওপর দিয়ে যাওয়া মানে যেন অতীতে ফিরে যাওয়া৷ এখানে ইতিহাসকে অনুভব করা যায়৷ নদী পার হয়ে যেন পুরনো প্রাগে ফিরে যাচ্ছি৷''
টুরিস্টরাও চার্লস ব্রিজ দেখে মুগ্ধ হন ও নিজেদের তোলা ছবি পাঠান৷ স্ডেনেক বললেন: ‘‘প্রতিদিন আমি ব্রিজ পার হয়ে কাজে যাই৷ কিন্তু আমার কাছে এটা শুধু রাস্তা নয়৷ আমি এখানে দার্শনিক চিন্তার প্রেরণা পাই: ইতিহাস ও অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাভাবনা করি৷''
স্ডেনেক বার্গম্যান স্বয়ং চার্লস ব্রিজের ইতিহাসে তাঁর ছাপ রেখেছেন৷ তাঁর উদ্যোগে ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর মে মাসে একটি বড় উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে৷ চার্লস ব্রিজ আর তার রক্ষাকর্তাদের সম্মানে এই উৎসব৷ তখন শুধু চার্লস ব্রিজের ওপরেই যে তারাদের মেলা বসে, এমন নয়!
সুজানে ডাউস/এসি