প্রীতমের গানে উজ্জীবিত শাহবাগ
১৯ মার্চ ২০১৩ঘোষণাটি এসেছিল পাঁচ ফেব্রুয়ারি৷ যুদ্ধাপরাধের দায়ে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদানের ঘোষণাকে যথেষ্ট মনে করেননি অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা৷ তাই, ফেসবুকে তাঁরা সবাইকে শাহবাগ হাজির হয়ে প্রতিবাদ জানাতে বললেন৷ অভাবনীয় সাড়া মিলল৷ লাখো জনতা সমবেত হতে থাকলো শাহবাগে৷
সংগীত শিল্পী, অ্যাক্টিভিস্ট প্রীতম আহমেদও শাহবাগ গিয়েছেন সেই ফেসবুক আমন্ত্রণ পেয়ে৷ তবে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে নতুন এক মু্ক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন তিনি দেখেছেন বহু আগেই৷ নব্বইয়ের গণআন্দোলন দেখেছেন প্রীতম৷ ছাত্র জীবনে তিনি দেখেছেন কখনো কখনো বঙ্গবন্ধুর নাম বলা যেত না, জয়বাংলা বলা যেত না৷ একাত্তরের ইতিহাসও বারবার বদলে যেতে দেখেছেন তিনি৷ এসব বিষয় মানতে পারেননি প্রীতম৷ সেসময় থেকেই তিনি ভেবেছেন, যদি কখনো সুযোগ হয় নিজের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের সৃষ্টির সময় যে মানুষগুলো ছিলেন, তাদের জন্য কিছু করবেন৷
শাহবাগের আন্দোলন সেই সুযোগ করে দিয়েছে প্রীতমকে৷ ফেসবুকে ঘোষণার পর তিনি হাজির হন শাহবাগে৷ পরিচিত, অপরিচিত অনেককে তিনি পেয়েছেন সেখানে৷ তাঁর মনে হয়েছে, এই আন্দোলন নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে৷ সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন প্রীতম৷ ‘গণজাগরণ মঞ্চ' নামটিও প্রস্তাব করেন তিনি৷ সবার সঙ্গে আলোচনায় চূড়ান্ত হয়েছে এই নাম৷
গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে প্রীতমের বড় সম্পৃক্ততা গানের মাধ্যমে৷ কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন দেওয়ার পর হতাশ হয়ে তিনি প্রকাশ করেন ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার' গানটি৷ শাহবাগ আন্দোলনের শুরুতে সেই গান বেজেছে অনবরত৷ এরপর তিনি প্রকাশ করেন ‘শাহবাগ কলিং আবার একাত্তর' গানটি৷ শাহবাগের লাখো জনতাকে উজ্জীবিত করেছে প্রীতমের সুর৷
এখানে বলা প্রয়োজন, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে চলমান শাহবাগ আন্দোলনকে বিভিন্নভাবে বিতর্কিত করে তোলার চেষ্টা হয়েছে৷ সুকৌশলে জনতার এই আন্দোলনকে নাস্তিকদের আন্দোলন হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করেছে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি৷ তবে প্রীতমদের জন্য বড় ধাক্কাটি এসেছে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কাছ থেকে৷ দিনকয়েক আগে তিনিও শাহবাগ চত্বরকে ‘নাস্তিক চত্বর' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন৷ একথা শোনার পর বসে থাকেননি প্রীতম৷ গানের মাধ্যমে জবাব দিয়েছেন৷ তিনি প্রকাশ করেন, ‘আমার ধর্মটাও তোমার কাছে জিম্মি হয়ে গেলো' গানটি৷ প্রীতমের প্রতিটি গানই জয় করেছে নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির মন, যারা শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে চান, যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে চান৷
শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় প্রীতমকে নানা ধরনের হুমকিও মোকাবিলা করতে হচ্ছে৷ সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ব্লগারকে হত্যার যে তালিকা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি, সে তালিকায় উপরের দিকে আছে প্রীতমের নাম৷ তবে এসব হুমকিতে মোটেই ভীত নন তিনি৷ তবে তাঁর খারাপ লাগে৷ প্রীতম জানান, একাত্তরে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষ নিহত হয়েছিলেন, আর এখন শাহবাগের আন্দোলনকারীদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদেরই মতো বাঙালির বিরুদ্ধে যারা বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী, বাংলা ভাষায় কথা বলে অথচ কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চাইলে, তাকে খুন করতে চাচ্ছে৷