1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘প্রেস কাউন্সিল তো সরকারি সংস্থা, আমরা প্রতিবাদ করবো কেন?’

৭ এপ্রিল ২০২৩

সংবাদপত্র বা সাংবাদিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রেস কাউন্সিলকে সক্রিয় দেখা যায় না কেন? প্রেস কাউন্সিলের কাজটা কী? ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এবিষয়ে কথা বলেছেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম৷

https://p.dw.com/p/4Ponk
Bangladesch Vorsitzender Press Council (BPC) Justice Nizamul Huq
প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম৷ছবি: privat

ডয়চে ভেলে : সাংবাদিকদের নিয়ে প্রেস কাউন্সিলের কাজটা কী?

বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম : যে কারণে প্রেস কাউন্সিলের জন্ম হয়েছে, সেটাই প্রেস কাউন্সিলের কাজ৷ জন্মের লাইনটা আপনাকে বলি, বাংলাদেশে প্রেসের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার মান সংরক্ষণ ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রেস কাউন্সিল গঠন করা প্রয়োজন৷ এটাই আইনের প্রথম কথা৷ এটাই কাজ৷

তাহলে কোন সাংবাদিক সমস্যায় পড়লে প্রেস কাউন্সিল কী কোনো ভূমিকা রাখে?

যদি কোন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতা বাদে অন্য মামলা হয় তাহলে আমাদের করার কিছু নেই৷ কিন্তু সাংবাদিকতার কাজ করতে গিয়ে যদি কারও বিরুদ্ধে মামলা হয় বা তার পক্ষেও হয় বা সাংবাদিকেরা কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা রিপোর্টিং করে এর সবগুলো বিচার আমাদের এখানে হয়৷

কোনো সাংবাদিক বা সংবাদপত্র অন্যায়ের শিকার হলে কী প্রেস কাউন্সিল প্রতিবাদ করে?

না, প্রেস কাউন্সিলের কাছে মামলা হতে পারে৷ মামলা ১২ ধারায় হতে পারে৷ সেখানে বলা আছে, কোন অভিযোগ পেয়ে বা অন্য কোনোভাবে পেয়ে বিশ্বাস করার কারণ আছে যে, কোন সংবাদপত্র বা সংবাদ সংস্থা সাংবাদিকতার নীতিমালার মান বা কোন কর্মরত সম্পাদক বা সাংবাদিক পেশাগত অসদাচরণ করেছেন বা সাংবাদিকতার নীতির লঙ্ঘন করেছেন সেই ক্ষেত্রে সংবাদপত্র বা সংবাদ সংস্থার সম্পাদক বা সাংবাদিকদের বক্তব্য পেশের সুযোগ দিয়ে বিধি মোতাবেক তদন্ত করতে পারবে৷ এটাই হলো আমাদের কাজ৷ এখানে কারও আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসতে হবে৷ বলতে হবে, এই রিপোর্ট মিথ্যা৷ এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা বিচার করি৷

সাংবাদিকদের জন্য কেন ১০ লাখ টাকা জরিমানা?

সম্প্রতি প্রথম আলোর অনলাইনের একটি কার্ড নিয়ে বির্তক হল৷ সেটা কী আপনাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে?

অনলাইনের কোন বিষয় আমাদের এখতিয়ারে আসেনি৷ যখন প্রেস কাউন্সিলের জন্ম হয়েছে তখন অনলাইনের অস্তিত্ব ছিল না৷ আমরা চেষ্টা করছি, অনলাইন, টেলিভিশন আমাদের আওতায় আনার জন্য৷ সে জন্য আইন সংশোধনের কথা আমরা বলছি৷ তাতে আবার আমাদের বড় সাহেবরা অনেকেই রাজি না৷ এখন রাজি হইছে আরকি৷ এই হলো অবস্থা তাদের৷ যাইহোক এই মুহূর্তে আমাদের করণীয় কিছু নেই৷ এটা নিয়ে আমি কিছু বলব না৷

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ নিয়ে আপনি কী বলবেন?

আমি তো বলছি, অপপ্রয়োগ হচ্ছে৷ এটার অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হলে অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে৷ আইন বাতিল, এ বাতিল, ও বাতিল এটা তো আমাদের কাজ না৷ দ্বিতীয়ত, আইন বাতিল করে কোন সমাধান হয় না৷ কারণ সমস্যাটা তো আমাদের দেশে আছে৷ মানুষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে কিছু সুবিধাও তো পাচ্ছে৷ কারও বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে ফেসবুকে লেখা হয়, সেখানে তো সে মামলা করতে পারে৷ কিন্তু কথা হল, এই মামলা দিয়ে যে হয়রানি হয় সেটা বন্ধ করতে হবে৷ মূল কথা হল, অপপ্রয়োগটা বন্ধ করতে হবে৷ তখন তো রাত তিনটার সময় গ্রেফতারের প্রয়োজন হবে না৷ কারণ সে হারায় যাওয়ার ভয় থাকবে না৷ অনেক কিছুই আইনে থাকে না, তারপরও বলা হয় আইনে আছে৷ সিভিল, ক্রিমিনাল সব আইনেই অপপ্রয়োগ হচ্ছে৷ আমাদের দেশে কেন, সব দেশেই হয়৷ এটা বন্ধ করতে হবে৷  

সেই অপপ্রয়োগটা কীভাবে বন্ধ হতে পারে?

সদিচ্ছা থাকলেই বন্ধ হতে পারে৷ আমরা অপপ্রয়োগ করব না, তাহলেই বন্ধ হবে৷ এই মামলায় জামিনটা পেলে মানুষের সুবিধা হয়৷ অত্যাচারের ভয় কম থাকে, মানুষও ভয় কম পায়৷ মিথ্যা মামলাও কম হয়৷ এটার জামিনের অথরিটিটা কোর্টের কাছে দেওয়া উচিৎ৷

এই আইনটি সংশোধনের জন্য আপনারা কখনও কী কিছু বলেছেন?

না৷ আমাদের বলার কোন উপায় নেই৷ এটা তো আমাদের অথরিটি না৷ আমাদের ক্ষমতার মধ্যে না আসলে আমরা সেটা কীভাবে বলি?

মামলা হলেই বা মামলা হওয়ার আগেই সাংবাদিকদের গ্রেফতার নিয়ে আপনারা কী কখনও প্রতিবাদ করেছেন?

আমরা প্রতিবাদ করব কেন? প্রতিবাদ করার লোক তো বহু আছে৷ আমরা তো সরকারী একটা সংস্থা৷ কিন্তু আমি মনে করি, এটা উচিৎ না৷ এটাই আমি বলেছি৷ একথা আমি বলছি, এটা উচিৎ না, বন্ধ করা উচিৎ৷ জামিনের অধিকার দেওয়া উচিৎ৷ এভাবে বলাই তো বেশি বলা৷

একজন সাংবাদিক তো চোর বা ডাকাত না, পুলিশ ডাকলেই তো সে হাজির হবে৷ তাহলে রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় কেন? এটা কী সাংবাদিকদের এক ধরনের হুমকি?

আমি তো বললাম, এটা আমি পছন্দ করি না৷ কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়৷ আপনি সব সাংবাদিককে বলবেন চোর না, এটা বলেন না৷ আমাদের সমাজের প্রতিটি শ্রেণীর ভেতরে চোর আছে, ডাকাত আছে, ঘুষখোর আছে, ক্ষমতালিপ্সু লোক আছে, অত্যাচারী লোক আছে, অপরাধ করার লোক আছে, অপসাংবাদিকতা চালাচ্ছে এমন লোকও আছে৷ কিন্তু এটাকে কমিয়ে আনতে হবে৷ এজন্য মামলা হলেই তার বিচার হওয়া উচিৎ৷  

‘অনলাইনের কোন বিষয় আমাদের এখতিয়ারে আসেনি’

কিন্তু মামলা হলেই কী গ্রেফতার করতে হবে?

মামলা হলে তো অবশ্যই গ্রেফতার করতে হবে৷ যদি সেটা গ্রেফতারের মামলা হয়৷ এগুলো তো গ্রেফতারের মামলা৷ এখন পর্যন্ত এটা গ্রেফতারের মামলা, চেঞ্জ হলে সেটা ভিন্ন কথা৷ সেই কথাটিই আমি বলেছিলাম, এটা প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে গেলে গ্রেফতারের ভয়টা থাকে না৷ যদি মামলাটা প্রথম প্রেস কাউন্সিলের কাছে আসে, তখন প্রেস কাউন্সিল দেখবে এটা কোন ধরনের মামলা তখন সেটা সেই কোর্টে পাঠিয়ে দেবে৷

আপনারা কী কখনও এই কথাটি সরকারের কাছে বলেছেন?

মামলা তো হলেই পারে৷ মামলা হওয়া অস্বাভাবিক না, অপ্রয়োজনীয় না, বরং না হওয়াটা ভালো না৷ কেউ যদি অন্যায় করে তাহলে মামলা হবে না কেন? কিন্তু প্রশ্ন হল, তাদের সঙ্গে ব্যবহারটা যেন ভালো করা হয়৷ প্রত্যেকের সঙ্গে সঠিকভাবে ব্যবহারটা করতে হবে৷ রাতের বেলায় ধরে নিয়ে যাওয়া, জহুর হোসেন চৌধুরীর মতো লোককে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করা- এইগুলো যেন না হয়৷ প্রত্যেকের সম্মান আছে৷ কেউ বিচারে দোষী হলে তার শাস্তি হবে৷ এইজন্য আমি বলেছি, জামিন দেওয়া হলে অপপ্রয়োগ কম হয়৷ তখন মানুষ মিথ্যা মামলা কম করবে৷ এখন মানুষ মামলা করে কেন? অন্যপক্ষকে হ্যারাস করার জন্য৷ একটা মামলা করলেই তো পুলিশ ওরে ধরবে, ও জেলে থাকবে৷ এখন এই উদ্দেশ্যে মামলা করে৷ তখন এই জিনিসগুলো কমে যেত৷

প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনের একটি প্রস্তাব বর্তমানে সংসদে উত্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে৷ এই সংশোধনীর মাধ্যমে গণমাধ্যমে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে?

সেটা আমি এখনও বলতে পারব না কী হতে পারে৷ আমি এসবের কিছু জানি না৷

এই সংশোধনীর বিষয়ে আপনাদের কোন মতামত নেওয়া হয়নি?

আমরা কিছুটা জানি কী ধরনের হচ্ছে৷ তবে বেশি কিছু জানি না৷ এটা সরকারের কাছে আছে, তারাই দেখবে৷ তবে আমি আশা করি, এই সংশোধনীর ফলে সাংবাদিকদের সুযোগ সুবিধা বাড়বে৷ তাদের ক্ষমতা বাড়বে৷ ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে৷ এবং অন্যায়কারী যারা সাংবাদিক তারা দমন হবে৷

ফৌজদারি বিষয় ছাড়া গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট অপরাধ প্রেস কাউন্সিলে নিষ্পত্তি করা যায় কি?

আমি মনে করি যায় না৷ তবে আইনে যদি দেওয়া হয় তাহলে যাবে৷ এখন তো বলতে পারব না, এর মধ্যে কী থাকবে বা থাকবে না৷ তবে আমি মনে করি যাবে৷

বর্তমানে আইনে কী আছে?

বর্তমান আইনে যা আছে, তা দিয়ে হবে না৷ চেঞ্জ যদি করে৷ আমি মনে করি, বর্তমান সংশোধনী সাংবাদিক বান্ধব হলে ভালো হয়৷ তবে অপসাংবাদিক নয়৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য