ফখরুল ছাড়া বাকি সবাইকে নিয়ে ‘শঙ্কায়’ বিএনপি!
২৭ এপ্রিল ২০১৯বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বিএনপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন৷ মির্জা ফখরুল ছাড়া বিএনপির বাকি চার নির্বাচিত সদস্যও শেষ পর্যন্ত শপথ নিতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে৷
এই অবস্থায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে শনিবার সন্ধ্যার পর৷ বৈঠকের মূল আলোচনার বিষয়ই হলো জাহিদুর রহমান জাহিদের শপথ গ্রহণ এবং পরবর্তী পরিস্থিতি৷ এই বৈঠকে জাহিদুর রহমাননে দল থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্তও আসতে পারে৷ বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এসব বিষয়ে দলের মহাসচিব বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন৷''
বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয় জন সংসদ সদস্য হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আব্দুস সাত্তার ভুঁইয়া, বগুড়া-৬ আসনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে হারুন অর রশীদ, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন এবং ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান জাহিদ৷
বৃহস্পতিবার জাহিদুর রহমান শপথ নেয়ার পর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘দল বহিস্কার করতে পারে জেনেও আমি শপথ নিয়েছি৷ সংসদে গিয়ে আমি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানাবো৷''
তিনি শপথ নিলেও এখনও সংসদ অধিবেশনে যোগ দেননি৷ তাঁর আশা, আরো হয়তো কেউ কেউ শপথ নেবেন৷ তাঁদের নিয়ে একসঙ্গে সংসদ অধিবেশনে যাবেন৷ তবে শপথ নেয়ার পর তিনি সংবাদ মাধ্যমে কথা বললেও তারপর থেকে কথা বলায় বিরত আছেন৷ তাঁর মেবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া গেছে৷
তবে বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে তারা আশঙ্কা করছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বাকি চারজনও যেকোনো সময় শপথ নিতে পারেন৷৷ এরইমধ্যে দলের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে কথা বললেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না কেন্দ্রীয় নেতারা৷
জাহিদুর রহমানের শপথ নেয়ার কারণ হিসেবে সরকারের চাপকে মির্জা ফখরুল দায়ী করলেও সরকারের পক্ষ থেকে তা বরাবরই অস্বীকার করা হচ্ছে৷ বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন শনিবার এক কর্মসূচিতে বলেছেন, ‘‘দু-একজন দলছুট নেতা শপথ নিলে কিছু আসে যায় না৷'' একই কর্মসূচিতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘‘বিএনপির নির্বাচিতরা শপথ নিলেও এই সংসদ বৈধতা পাবে না৷''
তবে ড, খন্দকার মোশাররফ হোসেন এর বাইরে আলাদা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিএনপির নির্বাচিত এমপিদের নিয়ে কি হচ্ছে তা নিয়ে বলার জন্য দলের মহাসচিব দায়িত্বপ্রাপ্ত৷ আজ (শনিবার) সন্ধ্যার পর দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক আছে৷ বৈঠকের পর মহাসচিব সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন৷''
সংবিধানের বিধান অনুযায়ী কোনো সংসদের প্রথম অধিবেশন যেদিন বসে সেদিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে কোনো নির্বাচিত সংসদ সদস্য শপথ না নিলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়৷ তবে আবেদনের ভিত্তিতে স্পিকার যৌক্তিক মনে করলে সময় আরো বাড়িয়ে দিতে পারেন৷ সেই সময়ের মধ্যে শপথ না নিলে সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়৷
একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ৩০ জানুয়ারি৷ সেই হিসেকে ২৯ এপ্রিল ৯০ দিন৷ আর ২৯ এপ্রিলের মধ্যে শপথ নিতে হবে সংসদ সদস্যপদ বহাল রাখতে৷ তাই আগামী দুই দিন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এবং নির্বাচিতদের সময় কাটছে নানা উদ্বেগের মধ্য দিয়ে৷
বিএনপির প্রাধান্যে জাতীয় এক্যফ্রন্টের ব্যানারে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ শপথ নেন ৮ মার্চ৷ আর ২ এপ্রিল শপথ নেন গণফোরাম থেকে নির্বাচিত আরেকজন সংসদ সদস্য মোকাব্বির হোসেন৷ তারই ধারাবাকিতায় বৃহস্পতিবার শপথ নেন বিএনপির জাহিদুর রহমানও৷
বিএনপির আরো ৫ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য আছেন যারা এখনো শপথ নেননি৷ তাদেরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের (নাচোল- ভোলারহাট - গোমস্তা) আমিনুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি এখনও দলের সিদ্ধান্তেই আছি৷ শপথ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আপনাদের জানাবো৷ তবে স্থানীয় পর্যায়ে দলের নেতা-কর্মীরা আমাকে শপথ নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে৷'' এর আগে ২০ এপ্রিল তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, ‘‘শপথ না নিলে এলাকার লোক আমাকে মারবে।''
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের হারুন অর রশীদ শপথের ব্যাপারে শনিবার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের মোশাররফ হোসেনও সংসদে যেতে ভোটারদের চাপের কথা জানিয়েছিলেন ডয়চে ভেলেকে৷
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরৗ ডয়চে ভেলকে বলেন, ‘‘আমরা ভোট বর্জন করেছি৷ প্রত্যাখ্যান করেছি৷ ভোট ডাকাতির এই নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ তাই আমাদের পার্টির অবস্থান খুবই পরিস্কার৷ কেউ শপথ নেবে না৷ তারপরও কেউ কেউ যদি তার ব্যক্তিগত স্বার্থে শপথ নেয় সেটা তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা৷ সে তার আদর্শিক অবস্থান থেকে সরে গেছে৷ তাদের ব্যাপারে গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘এতে দলের বা দলের নেতৃত্বের কোনো দুর্বলতা নেই৷ অতীতেও এরকম হয়েছে৷ ওয়ান ইলেভেনের সময়ও হয়েছে৷ যারা বিচ্যূত হন, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হন৷ আর আমি মনে করি তারা শপথ নিলে দলের তৃণমূলে কোনো নেতিবচক প্রভাব পড়বে না৷ দল তার শক্তিশালী অবস্থানেই থাকবে৷''
তবে তিনি মনে করেন, সরকারে চাপে শপথ নিয়েছে মহাসচিবের এই দাবী যৌক্তিক নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘চাপ থাকলেই বা কী? একজন নেতার, একজন এমপির নৈতিক ও আদর্শিক অবস্থান থাকবে না?''