1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফিরে দেখা: পিনা বাউশ

১৩ জুলাই ২০০৯

বিশ্বনন্দিত জার্মান নৃত্যরচয়িতা ও নৃত্যশিল্পী পিনা বাউশ আর নেই৷ ৩০ জুন শেষ নি:শ্বাস ফেলেন তিনি৷ দেশে বিদেশে যেখানেই অনুষ্ঠান করেছেন পিনা বাউশ ও তাঁর ভুপার্টাল ডান্স থিয়েটার, পেয়েছেন দর্শকদের অকুন্ঠ করতালি৷

https://p.dw.com/p/ImnQ
পিনা বাউশছবি: picture-alliance/ dpa

উদ্দীপিত হয়েছেন দর্শকরা৷ নতুন করে ভেবেছেন৷ পরের অনুষ্ঠানেই উপহার দিয়েছেন একেবারে নতুন কিছু যা দর্শকদেরও ভাবিয়েছে৷ এক এবং অদ্বিতীয় পিনা বাউশ পশ্চিমের আধুনিক নৃত্যকলায় মাইল ফলক রচনা করে গেছেন৷

১৯৪০ সালের ২৭শে জুলাই জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের ভুপার্টাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন জোসেফিন বাউশ৷ ডাক নাম ফিলিপিন৷ সংক্ষেপে পিনা৷ এরপর জোসেফিন বাউশ নয় পিনা বাউশ নামেই তিনি পরিচিত হয়েছেন বিশ্বের কাছে৷ তাঁর বাবার ছিল ভুপার্টাল শহরে হোটেল-রেস্টুরেন্টের ব্যবসা৷

ছোটবেলা থেকেই নাচের প্রতি তীব্র ঝোঁক ছিল পিনা বাউশের৷ ১৯৫৫ সালে তিনি ভর্তি হন এসেন শহরের ফোল্কভাং স্কুলে৷ সে সময় তাঁর গুরু ছিলেন কুর্ট ইয়ুস৷ কুর্ট ইয়ুসকে বলা হয় ‘এক্সপ্রেশনিস্ট' অর্থাৎ অভিব্যক্তিময় নৃত্যকলার জনক, যে নাচে ছন্দ, সংগীত ও নাট্য উপাদান মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়৷ ১৯৫৮ সালে পিনা বাউশ ফোল্কভাং স্কুল থেকে নাচের ডিগ্রি নেন৷ সে বছরই তিনি নিউ ইয়র্কের জুলিয়ার্ড স্কুল অফ মিউজিক -এর বৃত্তি পেয়ে চলে যান নিউ ইয়র্কে৷ তখনো তিনি কিন্তু এক বর্ণও ইংরেজি জানতেন না পিনা৷ নৃত্যশিল্পের প্রতি তীব্র ভালবাসা, ঝোঁক এবং নৃত্যকলায় জীবন উৎসর্গ করার তীব্র আকাঙ্খা তাঁকে সাহস যুগিয়েছিল৷

১৯৬২ সালে পিনা বাউশ ফিরে আসেন জার্মানিতে৷ এরপর তিনি নিজেই শুরু করেন কোরিওগ্রাফি অর্থাৎ নৃত্য রচনা ও নির্দেশনার কাজ৷ নৃত্যশিল্পীর জীবন তিনি শুরু করেছিলেন ব্যালে দিয়ে তবে শেষ পর্যন্ত তা বিস্তৃত হয় অনেক দূর৷ আধুনিক নৃত্যশিল্পে ঘটিয়েছিলেন এক ধরণের বিপ্লব৷

১৯৭৩ সালে পিনা বাউশ টানৎস থিয়েটার ভুপার্টাল এর প্রধানের পদে আসীন হন৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৩৷ এত অল্প বয়সে এর আগে কেউই এ সম্মান পাননি৷ বলা প্রয়োজন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই ডান্স থিয়েটার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি৷ কী ছিল নৃত্যকলা পিনা বাউশ-এর জীবনে ? নাঁচের মধ্যে কী দেখেছিলেন ? তাঁর নিজের কথায়, ‘‘প্রশ্নটা এখানে শিল্পকলা বা কিছু করে দেখানোর ক্ষমতা নিয়ে নয়৷ জীবন এবং জীবনের সারাৎসার প্রকাশ করার ভাষা খোঁজাই হল আসল লক্ষ্য৷ শুধু নিজের বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে নয়, সর্বত্র, বিভিন্ন ভাবে আমরা যে ভাব প্রকাশ করি – তা যাতে বোধগম্য হয়, সেই চেষ্টাই আমরা করে থাকি৷ নৃত্যের মাধ্যমে আমরা আমাদের বোধ, স্মৃতি, আশা জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করি, যা সব মানুষের মধ্যেই রয়েছে৷''

পিনা বাউশ তাঁর শিল্পী জীবনে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন৷ ২০০৭ সালে ভেনিস বিয়েনালেতে তিনি পান গোল্ডেন লায়ন লাইফটাইম এ্যাচিভমেন্ট এ্যাওয়ার্ড ৷ ২০০৩ সালে পান ফ্রান্সের লিজিয়ন দোনোর - লিজিয়ন অফ অনার৷ মরণোত্তর পেলেন তিনি ফাউস্ট পুরস্কার৷

স্প্যানিশ চলচ্চিত্র পরিচালক পেড্রো আলমোদোভার পিনা বাউশের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন৷ তাঁর পরিচালিত আবলো কন এইয়া বা স্পিক টু হার ছবির নাচের কয়েকটি শটে পিনা বাউশ ছিলেন নির্দেশক৷ আলমোদোভার জানান, পিনা বাউশ আমাকে নাচের মধ্যে দিয়ে যাদুর মায়া দেখিয়েছিলেন, দেখিয়েছিলেন তাঁর ক্ষমতা৷ তিনি আরো জানান, গত ৫০ বছরে পিনা বাউশ নৃত্যশিল্পকে নিয়ে গেছেন অন্য এক মাত্রায়৷ আধুনিক নাচকে নতুনভাবে, ভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন পিনা বাউশ৷ বলা প্রয়োজন, আধুনিক নৃত্যকলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন পিনা বাউশ৷

পিনা বাউশ দেখতে কেমন ছিলেন ? হালকা পাতলা, মাথা ভর্তি ঘন কুচকুচে কালো চুল, পেছনে সবসময় ঝুঁটি বাধা৷ বসময়ই পরতেন কালো রঙের পোশাক৷

প্যারিসের থিয়াট্র দো লা ভিল -এর সাবেক পরিচালক জ়েরার্ড ভিওলেত জানান, প্যারিসের এই ডান্স থিয়েটার ছিল পিনা বাউশের দ্বিতীয় স্বদেশভূমির মত৷ পিনা বাউশকে তিনি গত ৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী হিসেবে আখ্যায়িত করেন৷ নাচ ছিল তাঁর জন্য দর্শকের সঙ্গে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম৷ এবং তাতে তিনি সফল হয়েছিলেন৷

প্যারিস অপেরার নৃত্য পরিচালক ব্রিজ়িত লোফোভ্র পিনা বাউশ প্রসঙ্গে জানান, পর্যবেক্ষণের অসাধারণ ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছিলেন পিনা বাউশ৷ আধুনিক নাচের জন্য তিনি নিজেই তৈরি করেছিলেন এক নিজস্ব ভুবন৷ তাঁর কাজ ছিল নিঁখুত৷ এ ধরণের কাজ হয়তো ভবিষ্যতে আর দেখা যাবে না৷

জার্মান প্রেসিডেন্ট হর্স্ট ক্যোয়েলার পিনা বাউশের ছেলের কাছে পাঠানো এক শোকবার্তায় জানান, জার্মানি শুধু একজন বিশ্বনন্দিত নৃত্যশিল্পী এবং কোরিওগ্রাফারকেই হারায়নি বরং শিল্প-সংস্কৃতি জগতের অন্যতম প্রধান, উঁচু মাপের এক ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছে৷

মাত্র ৬৮ বছর বয়সে পিনা বাউশ বিদায় নিলেন৷ মৃত্যুর দুসপ্তাহ আগেও তিনি তাঁর নাচের দল নিয়ে একটি কনসার্ট করেছেন৷ মৃত্যুর মাত্র পাঁচ দিন আগে তাঁকে চিকিৎসকরা জানান, তিনি দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত৷

শুধু ডান্স থিয়েটার ভুপার্টাল নয় বরং গোটা জার্মানি হারিয়েছে উজ্জ্বল একটি নক্ষত্র৷ সে নক্ষত্রের নাম পিনা বাউশ৷

প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য