দুশ্চিন্তায় ইউরোপ
৩০ মে ২০১২ফুটবল মানেই আবেগ৷ নিজের দল জিতলে উচ্ছ্বাসের ফোয়ারা, হারলে গভীর বিষাদ৷ গোটা বিশ্বেই ফুটবলপ্রেমীদের চরিত্রে এক্ষেত্রে তেমন কোনো ফারাক নেই৷ কিন্তু সমস্যা সেই আবেগ প্রকাশের মাত্রা নিয়ে৷ স্টেডিয়ামে ভাঙচুর, শারীরিক হামলা, বিপজ্জনক বাজি বা আগুনের ব্যবহার, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, বর্ণবাদী আচরণ – এমন সব ঘটনার ফলে ফুটবলের ‘স্পোর্টসম্যান স্পিরিট' পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়৷ জার্মানি তথা ইউরোপে ফুটবল স্টেডিয়ামে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার ফলে সমর্থকদের আচরণ নিয়ে প্রবল বিতর্ক চলছে৷
সম্প্রতি জার্মানিতে বেশ কয়েকটি ফুটবল ম্যাচের শেষে সমর্থকদের একাংশ স্টেডিয়ামে তাণ্ডব চালিয়েছে৷ প্রতিটি ঘটনার আলাদা তদন্ত চলছে ঠিকই, সেইসঙ্গে কিছুই মৌলিক প্রশ্নও তোলা হচ্ছে৷ ফুটবল মাঠের নিরাপত্তা কি শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব? যে ফুটবল ক্লাবের সমর্থকেরা এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছে, সেই ক্লাবের কি কোনো দায়িত্ব নেই? বার্লিনের হ্যার্টা ফুটবল ক্লাবের সমর্থকদের তাণ্ডবের কারণে শাস্তি হিসেবে ক্লাবটিকে দ্বিতীয় ডিভিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তবে এবার দাবি উঠছে এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম চালু করার৷
ভবিষ্যতে ফুটবল মাঠে হিংসা এড়াতে জার্মান পুলিশ কর্মীদের সংগঠন অবকাঠামোয় কিছু পরিবর্তন দাবি করছে৷ যেমন তাদের দাবি, দাঁড়িয়ে খেলা দেখার ব্যবস্থা পুরোপুরি তুলে দিতে হবে৷ গ্যালারি ও মাঠের মধ্যে বেড়ার উচ্চতা আরও বাড়াতে হবে৷ সেইসঙ্গে কোনো ক্লাবের সমর্থক উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করলে কমপক্ষে লক্ষ ইউরো আর্থিক জরিমানার নিয়ম চালু করতে হবে৷ দর্শকদের তল্লাশির নিয়ম আরও কড়াকড়ি করতে হবে৷ নিয়ম ভাঙলে কাউকে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না৷
শুধু জার্মানি নয়, আসন্ন ‘ইউরো ২০১২' ফুটবল প্রতিযোগিতার যুগ্ম আয়োজক ইউক্রেন'এর স্টেডিয়ামে নিরাপত্তা নিয়েও প্রবল বিতর্ক চলছে৷ বিবিসি'র প্যানোরামা অনুষ্ঠানে সেদেশের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে৷ ফলে বর্ণবাদী আচরণ ও হিংসার আশঙ্কায় ইংল্যান্ডের অনেক খেলোয়াড় সেদেশে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সমর্থকদেরও সাবধান করে দিয়েছেন৷ ইংল্যান্ড ছাড়াও ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস ফুটবল ইউক্রেনে বর্ণবাদী হামলা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে৷
রাজনৈতিক স্তরে ইউক্রেন এর আগেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে৷ এবার ফুটবল সমর্থকরাও প্রতিযোগিতা থেকে দূরে থাকলে ভাবমূর্তির মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করছে সেদেশ৷ ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইংল্যান্ডের প্রবল সমালোচনা করে বলেছে, ‘স্কিনহেড'
শব্দটাই তো ইংল্যান্ডে সৃষ্টি হয়েছিল৷ সেদেশেও সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন (ডিপিএ, এএফপি, এসআইডি)
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ